অব্যাহতিপ্রাপ্ত যুবলীগ নেতার কান্ডে বেলকুচিতে নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয় ভবনে একটি কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগের জন্য। নানা অভিযোগে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক সাজ্জাদুল হক রেজাকে অব্যাহতি দিয়ে ওই কমিটি বিলুপ্তি করা হয় ২০২০ সালের জুন মাসে। সেই থেকে ওই কক্ষ তালাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আড়াই বছর পর বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারী) রাত থেকে ওই কক্ষটি নিয়েই উপজেলা আওয়ামীগ ও যুবলীগে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে তালাবদ্ধ ক্ষটি খুলে সেখানে নিজ সমর্থক ও বিলুপ্ত কমিটির নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রবেশ করেন যুবলীগ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত আহবায়ক ও বেলকুচি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা। এসময় তিনি দীর্ঘক্ষণ কক্ষটিতে অবস্থান করেন এবং আহবায়কের চেয়ারে বসে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার সৃষ্টি ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায় যে, চেয়ারটিতে বসে সাজ্জাদুল হক রেজা মতবিনিময় করেছেন, তাঁর ঠিক মাথার ওপরেই একই সারিতে, সমান্তরালে টানানো হয়েছে চারটি ছবি।

চারটি ছবির ডান থেকে প্রথম ছবিটি আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণির, দ্বিতীয়টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, তৃতীয়টি আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবং চতুর্থ ছবিটি সাজ্জাদুল হক রেজার।

জানা যায়, নানা বিতর্কিত কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়া ও করোনা বিধিনিষেধ অমান্য করে সমাবেশ করায় ২০২০ সালের ২৬ জুন বেলকুচি যুবলীগের তৎকালীন আহবায়ক সাজ্জাদুল হক রেজাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দিয়ে উপজেলা যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্র। ওই সময় থেকেই বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের বহুতল বভনে বরাদ্দ দেওয়া যুবলীগের কক্ষটি তালাবদ্ধ ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক যুবলীগ কর্মিরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি আইন ও রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার অনুযায়ী কিছুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির পাশে পৌর মেয়র ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজার ছবি টাঙ্গানো উচিত নয়। এটি যেমন আইনগতভাবে অবৈধ তেমনি রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারের চরম লঙ্ঘন। অনতিবিলম্বে জাতীর পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির সাথে একই সারিতে ছবি টানানো পৌর মেয়রের শাস্তির পাশাপাশি ছবি অপসারণের দাবিও জানান তারা।

এ বিষয়ে পৌর মেয়র ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজার মোবাইলে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ন-আহ্বায়ক ফারুক সরকার বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালি করতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মতি নিয়ে যুবলীগের কক্ষটি খোলা হয়েছে। নতুন কমিটি না থাকায় আমরা সংগঠনকে শক্তিশালি করতে কাজ করছি। আর অনেক বছর আগে ঝুলানো ছবি টানানো ঠিক আছে, প্রধানমন্ত্রীর ছবির একটু নিচেই তৎকালিন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়কের ছবি ঝোলানো হয়েছে। ছবিতে হয়তো একই মাপে টানানো মনে হচ্ছে।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল রহমান জানান, যুবলীগের কক্ষটি খোলার কথা আলোচনা হয়নি। কারো কোন সিদ্ধান্ত না মানা, অব্যাহতিপ্রাপ্ত যুবলীগ নেতা ও পৌর মেয়র কারো সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকেন না। উপজেলা আওয়ামীলীগ সিদ্ধান্ত দিলেতো আমরা অবগত থাকার কথা। তিনি আরো বলেন, জাতীর পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে একই কাতারে ছবি টানানো চরম ধৃষ্ঠতা। আমরা ঐ ছবি অপসারনসহ দ্রুত এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।

বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক পৌর মেয়র আশানুর বিশ্বাস বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুকে) যুবলীগের কক্ষে একই সাড়িতে টাঙ্গানো ছবিগুলো দেখলাম, এটি একটি অগ্রহনযোগ্য, ঘৃন্য ও শিষ্ঠাচার বিবর্জিত কাজ। আমি আজই বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও শেখ মনির পাশে টানানো মেয়র রেজার ছবি অপসারণ করবো।

উল্লেখ্য, বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে হামলাবাজ হিসেবে পরিচিত পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নিজে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া, আপন সহোদরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় একাধিকবার বহিষ্কার হয়েছে দল থেকে। তার হামলা থেকে রেহাই পাননি সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ মন্ডল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী আকন্দ, সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ আকন্দ, সাবেক বেলকুচি পৌর মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস, বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সরকার, বেলকুচি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গোপাল চন্দ্র, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা জুয়েল ও রাশেদসহ অসংখ্য ব্যবসায়ী, ঠিকাদার ও দলীয় নেতাকর্মীরা। বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুর রহমানও। তবে অদৃশ্য কারণে বারবার পার পেয়ে গেছেন তিনি।