ফুলের রাজধানী খ্যাত ঝিকরগাছার গদখালীতে তিন দিনের ফুল উৎসব শুরু

ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালীতে তিন দিনের ফুল উৎসব শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে এ মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছে, ফুলের বাণিজ্যিক স¤প্রসারণের লক্ষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ উৎসবে ফুল রাজ্যকে সবার সামনে তুলে ধরতে ভূমিকা রাখবে। ফুল উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম যশোরের গদখালি। এই গ্রামের নাম জানে না এমন কেউ নেই।

এখানকার ফুলের সুভাস শুধু সম্মৃদ্ধি ছড়াচ্ছে না; দেশের অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধির সোপানও বৃদ্ধি করেছে। ফুলকেন্দ্রীক পর্যটন শিল্পের বিকাশে এই উৎসব কাজে আসবে বলে তিনি আসাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, যশোর একটি প্রাচীন শহর। যশোর অঞ্চলের অনেক সুখ্যাতি রয়েছে। এই খ্যাতিকে নতুনরুপদান করেছে ফুলের রাজধানী গদখালী অঞ্চল। প্রতি বছর একটি নিদ্দিষ্ট দিন ধার্য করে ফুল উৎসবের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। এসময় বিভিন্ন সময়ে ফুল উৎপাদন-সপ্রসারণে ভূমিকা রাখা ১০ ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।

এসময় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকারের যশোরের উপরিচালক হুসাইন শওকত, জেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মঞ্জুরুল হক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন ভক্ত, গদখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাজান আলী মোড়ল, যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপলন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম, নারী ফুলচাষী সাজেদা বেগম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক।

আরো পড়ুন:
>সাকিব, ইফতিখার এবং বরিশালের রেকর্ডের রাতে অসহায় রংপুর
>ওয়ালিয়া হাকিমুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী অধ্যাপকের বিদায় সংবর্ধনা

এদিকে ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতেছেন এ অঞ্চলের ফুলচাষী ও সংশ্লিষ্টরা। ফুল ক্ষেতকে নবরুপে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি ফুল সেডকে এক একটি স্টলে রুপান্তরিত করা হয়েছে। গদখালির পানিসারা হাড়িয়া ফুল মোড়ের ক্ষেতগুলো দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। এ মোড়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্টে গুলোকেও ফুল ক্ষেতের আদলে রুপ দেওয়া হয়েছে। ইসমাইল হোসেন নামে ফুল চাষী জানান, ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে নতুন করে সেজেছে গদখালি-পানিসারা এলাকা। ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে নতুন করে প্রতিটি ঘরে ঘরে উৎসবে মেতেছে।

সাজেদা নামে এক ফুল চাষী বলেন, এই মেলা আমাদের ফুল চাষীদের মিলন মেলায় পরিণত করেছে। আমরা চাই প্রতিবছর এই মেলা আয়োজন করুক প্রশাসন। একই সাথে মেলাটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আহŸান জানান তিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক জানান, নানান রঙের ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ের যশোর জেলা। এমন শ্লোগানে যশোর জেলাকে ব্র্যান্ডিং করেছে সরকার।

যশোরের ফুল, এই জেলার ঐতিহ্য সুদীর্ঘকালের। বৃহস্পতিবার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে তিনদিনের ফুল উৎসব। ফুলচাষী, ব্যবসায়ী দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এই মেলার শেষ হবে আগামি শনিবার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, দেশে ফুলের বিশাল এই বাণিজ্যও শুরু হয়েছিল জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারাতে। ১৯৮২ সালের দিকে শের আলি সরদার রজনীগন্ধা ফুল চাষের মাধ্যমে এখানে ফুল চাষ শুরু করেন।

আরো পড়ুন:
>সাকিব, ইফতিখার এবং বরিশালের রেকর্ডের রাতে অসহায় রংপুর
>ওয়ালিয়া হাকিমুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী অধ্যাপকের বিদায় সংবর্ধনা

যশোরে প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষী ১৫শ’ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গাডিউলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল। দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ভাগের বেশি যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে ফুল এখন যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ায়ও। প্রথম দিকে বছরের নির্দিষ্ট কয়েক মাসে ফুল চাষ হলেও এখন প্রায় সারা বছরই ফুল চাষ হয়ে থাকে।

জানুয়ারি ১৯.২০২৩ at ২০:০৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআর