মাংসে দেশি মুরগির স্বাদ ফেরাবে ‘সুবর্ণ’

দেশীয় মুরগির চাহিদা প্রতি বছর গড়ে ৫-১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ বছরের অধিক সময় ধরে গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে ‘বিএলআরআই মিট চিকেন-১ (সুবর্ণ)’ যা দেশীয় মুরগির মাংসের মতো স্বাদ এবং কম খাবার গ্রহণে অধিক ওজনের হয়ে থাকে। এ জাতের মুরগির বছরে ২৫০ থেকে ২৮০টি ডিম দিতে স্বক্ষম। এসব ডিম দিয়ে প্রায় ১৮০টির মতো বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলবিএলআরআই) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রাকিবুল হাসান।

ড. মো. রাকিবুল হাসান আরও জানান, সুস্থ-সবল, মেধাবী জাতি গঠনে প্রাণিজ আমিষের কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে মুরগির মাংসের ৬০-৬৫ ভাগ আসে বাণিজ্যিক ব্রয়লার থেকে যার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। কিন্তু বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব পোল্ট্রি শিল্পের ওপর দৃশ্যমান। ফলে, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় দেশীয় আবহাওয়া উপযোগী এই জাত।

যা অধিক মাংস উৎপাদনকারী মুরগির জাত হিসেবে বিবেচিত। বিএলবিএলআরআই-এর পোল্ট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগের বিজ্ঞানীবৃন্দ ধারাবাহিক দশ জেনারেশন পর্যন্ত সিলেকশন ও ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে বিএলআরআই কর্তৃক উন্নয়নকৃত দেশি জাতের মেইল লাইন এবং দেশীয় আবহাওয়ায় অভিযোজিত ফিমেইল লাইন ব্যবহার করে সম্প্রতি একটি অধিক মাংস উৎপাদনকারী মুরগির জাত উদ্ভাবন করে। দেশীয় পরিবর্তনশীল আবহাওয়া উপযোগী মুরগির এই জাতটির নামকরণ করা হয়েছে বিএলআরআই মিট চিকেন-১ (সুবর্ণ)।

আট সপ্তাহে মাল্টি কালার টেবিল চিকেনের (এমসিটিসি) গড় ওজন ৯৭৫ গ্রাম থেকে এক কেজি হয়। এই ওজন হতে প্রতিটি মুরগির প্রায় ২ দশমিক ২০ থেকে ২ দশমিক ৪০ কেজি খাবার খায়। আবার এ জাতের মুরগির মৃত্যুহারও খুব কম। বিএলআরআই পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ শতাংশ মৃত্যুহার পাওয়া গেছে। এই জাতের মুরগি অধিক রোগ প্রতিরোধক্ষম। আবার দেশীয় আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় সঠিক বায়োসিকিউরিটি এবং প্রতিপালন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে রোগ-বালাই হয় না বললেই চলে।

আরো পড়ুন:
>শিশুর দুধদাঁতের যত্ন নেবেন যেভাবে
>বিয়ের কথা শুনেই হাসি

বিএলআরআইয়ের পোল্ট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রাকিবুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, সোনালি মুরগির মতোই এই মুরগির দাম হবে, যা মানুষের হাতের নাগালে থাকবে। আমাদের দেশীয় আবহাওয়ার উপযোগী করে এই মুরগি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি খামারি পর্যায়ে উৎপাদন হলে অনেক সুফল মিলবে। বিশেষ করে মুরগির প্যারেন্টস বিদেশ থেকে আমদানি করা লাগে। ফ্রান্স, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এগুলো নিয়ে এসে বিভিন্ন কোম্পানি লালন-পালন করে।

‘প্যারেন্টস যদি আমদানি করা না লাগে সেক্ষেত্রে খরচ অনেক কমে আসবে। আমাদের যে সুবর্ণ মুরগি এটির প্যারেন্টস প্রোডাকশন অনেক ভালো। বাণিজ্যিকভাবে এটি একটি ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। এই জাতের মুরগি থেকে বছরে ২৫০টির মতো ডিম আসে। যেখান থেকে ১৮০ থেকে ১৮৫টি সুবর্ণ বাচ্চা পাওয়া যায়, এটি এই জাতের মুরগির অত্যন্ত একটি লাভজনক দিক। এই মুরগির মাধ্যমে দেশি মুরগির স্বাদ ফিরবে মানুষের পাতে। সাধ্যের মধ্যে থাকবে দাম।

তিনি আরও জানান, প্যারাগন কোম্পানি এটির বাণিজ্যিক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। এই মুরগি ডিম পাড়া শুরু করে চার থেকে পাঁচ মাস বয়সে। তারা আগেই এই কার্যক্রম শুরু করেছে। ডিম যেগুলো দিয়েছে সেখান থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে সেই বাচ্চা আগামী সপ্তাহে বাজারজাত করবে তারা।

জানুয়ারি ১৯.২০২৩ at ১১:৪৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর