বই পায়নি অনেক শিক্ষার্থী: নামমাত্র প্রস্তুতিতে পাঠদান

নতুন বছরের ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো সব শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছায়নি পাঠ্যবই। তবে সরকারিভাষ্যে বলা হচ্ছে, সব বই পৌঁছে গেছে স্কুলে। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো- স্কুলে সব বই নেই। কবে বই পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তাও মিলছে না। এ অবস্থায় বছরের শুরুতে সন্তানের জন্য একসেট বই কিনতে মরিয়া হয়ে উঠছেন অভিভাবকরা। রাজধানীর বইয়ের বাজারখ্যাত বাংলাবাজার ও নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানগুলোতে যে যেভাবে পারছেন পয়সা দিয়ে বই কিনছেন। গতকাল রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজধানীর বেশ কিছু বইয়ের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ের এক ধরনের দাম, পুরনো শিক্ষাক্রমের বইগুলো একটু কম দামে বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য বই কেনার কথা বললে, দোকানি একটু যাচাই করে নিচ্ছেন ক্রেতাকে। ক্রেতা নামের ব্যক্তিটি যিনি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি সত্যি সত্যি ক্রেতা না সরকারি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার লোক তা যাচাই-বাছাই করার পর বুঝে শুনে গোপনে নতুন বই চড়া দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

অপরদিকে প্রথম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলেও এখন পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকরা প্রশিক্ষণই পাননি। প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। প্রসঙ্গত, কয়েক দফা পিছিয়ে গত ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ‘শিক্ষাক্রম বিস্তরণ নামের’ এই প্রশিক্ষণ চলে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। এর ফলে সৃজনশীল শিক্ষার বদলে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষার যুগে প্রবেশ করেছে দেশ। সবমিলিয়ে নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে দেশে শিক্ষায় বড় পরিবর্তন শুরু হলেও শিক্ষকরা এখনো পুরো বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে। ভাসা ভাসা ধারণা নিয়েই তারা নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু করছেন।

আরো পড়ুন:
>বাঘারপাড়ায় আ. লীগ নেতা আরশাদ পারভেজের মতবিনিময়
>বিজিবির সঙ্গে মিয়ানমারের অস্ত্রধারীদের গুলি

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এমন ‘ছন্নছাড়া’ প্রশিক্ষণে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠদান নিয়ে বেশিরভাগ শিক্ষক বোঝে উঠতে পারেননি। শিক্ষকদের না বোঝার ফলে নতুন শিক্ষাক্রমে তারা পড়াতে পারবেন না। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অশান্তি দেখা দেবে। এতে সংকটে পড়বে শিক্ষা। এর মধ্যে একাধিক অভিভাবক বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে তারা কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।

এর আগে ২০১২ সালে সৃজনশীল শিক্ষা চালুর সময়েও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। তখন শিক্ষাক্রম চালুর ৬ মাসের মাথায় সৃজনশীল শিক্ষার নোট-গাইড বাজারে বেরিয়েছিল। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ না ঘটিয়ে নোট-গাইড নির্ভর হয়ে পড়েছিলেন। এবারো অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষায় নোট-গাইড বের হওয়ার তোড়জোড় চলছে। কোচিং সেন্টার চালু হয়ে গেছে এর মধ্যে। এছাড়াও নতুন শিক্ষাবর্ষ চালুর
১৫ দিন পার হলেও শিক্ষকরা দূরে

থাক শিক্ষার্থীরাই এখনো পাঠ্যবই হাতে পাননি। দেশের বিভিন্ন লাইব্রেরি এবং ফুটপাতে চলতি বছরের পাঠ্যবই বিকাচ্ছে। অথচ বিনামূল্যের এসব বই বিকিকিনি আইনত দণ্ডনীয়। সবমিলিয়ে বই সংকটের কারণে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েরই এখনো ঠিকঠাক ধারণা জন্ম নেয়নি। এরকম পরিস্থিতিতে মাত্র ৫ দিনের প্রশিক্ষণে শিক্ষকরা নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে কী জেনেছেন- সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

তবু শিক্ষকরা প্রশিক্ষণকালে ফেসবুকে দেদারসে ছবি প্রচার করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তারা এটাকে শিক্ষকদের ‘মিলনমেলা’ নামেও অভিহিত করেছেন। এদিকে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে পাঠ্যবইয়ে ভুলের একটি সংশোধনী দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের একটি অংশ গুগল থেকে চুরি করে লেখার দায় স্বীকার করেছেন পাঠ্য বইটির সম্পাদনার দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

আরো পড়ুন:
>বাঘারপাড়ায় আ. লীগ নেতা আরশাদ পারভেজের মতবিনিময়
>বিজিবির সঙ্গে মিয়ানমারের অস্ত্রধারীদের গুলি

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, দেশের দুয়েকটি জায়গায় হয়ত প্রশিক্ষণের সময় পাঠ্যবই পৌঁছেনি। তবু শিক্ষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং অত্যন্ত সুন্দরভাবে সেই প্রশিক্ষণের কাজ শেষ হয়েছে। ফেসবুকে ছবি দিয়েছেন। শিক্ষকদের এমন উল্লাসে মনে হয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের যে চ্যালেঞ্জ তা শিক্ষকরা জয় করেছেন। প্রশিক্ষণের সময় শিক্ষকদের বই না পাওয়ার বিষয়টি এনসিটিবির চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

জানুয়ারি ১৮.২০২৩ at ১০:০২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর