৫ ঘন্টায় একইস্থানে ২০ টি দূর্ঘটনা, মহাসড়কে ইটভাটার ফেলা মাটিই এখন মরনফাঁদ

ইট ভাটার মাটিটানা গাড়ীর ফেলা মাটিতেই যশোর- ঝিনাইদহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান এখন মরন ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বৈরি আবহাওয়া ও ঘন কুয়াশায় ভিজে মাটির পিচ্ছিলে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে যাত্রীবাহি বাস, ট্রাক ও মটরসাইকেল। গত রোববার ভোর থেকে বেলা ১০ টা পর্ষন্ত মহাসড়কের কালীগঞ্জের বাকুলিয়া নামক একটি স্থানেই ঘটেছে প্রায় ২০ টি মটরসাইকেল দূর্ঘটনা। মাত্র ৫ ঘন্টার ব্যবধানে ওই স্থানে দূর্ঘটনায় আছড়ে পড়ে মারাত্তক আহত হয়েছেন অনেকেই।

ওই সময়ে একের পর এক দূর্ঘটনায় পতিত মানুষের আহাজারী শুনে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা সহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা। তারা রাস্তায় বালির বস্তা ও লাল কাপড় টাঙ্গিয়ে পথচারীদের সহযোগিতা করেন। মহাসড়ক সংলগ্ন অধিবাসী বাকুলিয়া গ্রামের মাসুদ রানা জানান, ওইদিন ভোর ৫ টার দিকে মানুষের চিৎকার শুনে তিনি রাস্তাতে আসেন।

এ সময় দেখতে পান দু’জন মটরসাইকেল অরোহি দূর্ঘটনায় জখম হয়ে রাস্তাতে কাতরাচ্ছেন। একই সময়ে আরো কয়েকটি মটর সাইকেল আসলে তারাও সড়কের কাদায় পিচ্ছিলে পড়ে আহত হন। তিনি জানান, ভোর থেকে এভাবেই একের পর এক ওই স্থানেই কমপক্ষে ২০/২২ টি মটরসাইকেল দূর্ঘটনায় পতিত হন। প্রচন্ড ঘন কুয়াশা ও শিশিরে ভেজা রাস্তার পিচ্ছিল মাটির করনেই এসব দূর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। পরে গ্রামবাসী ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা মিলে রাস্তায় বালির বস্তা ও লাল কাপড় ঝুলিয়ে দিয়ে পথচারীদের সতর্ক বার্তা দেন।

ওই সময়ে দূর্ঘটনায় আহত মোটরসাইকেল আরোহী সাব্বির হোসেন জানান, রাস্তায় উপরে থাকা ভেজা মাটিতে চাকা পিছলে পড়ে গেছি। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও হাত পা কেটে বেশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। আহত আরেক মটরসাইকেল আরোহী রিয়াদ হোসেন জানান, সড়কে পড়ে থাকা মাটির পিচ্ছিলে প্রতিনিয়ত এসব দূর্ঘটনা ঘটলেও তার কোন প্রতিকার নেই।

তিনি মাটি টানা গাড়ি ও ইটভাটার মালিকদের দায়ী করে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান। এদিকে দূর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে আসা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুবেল হোসেন বলেন, কর্দমাক্ত সড়ক দূর্ঘটনার অন্যতম কারন। বিষয়টি নিয়ে মেয়র মহোদয়ের সাথে আলোচনা পূর্বক প্রতিকারের ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।

আরো পড়ুন:
>এ আগুন না থামালে বিচারবিভাগ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে: হাইকোর্ট
>১৭ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ

জানা গেছে, যশোর -ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংলগ্ন একাধিক স্থানে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। তাদেরই মাটিটানা গাড়ী থেকে অল্পঅল্প পড়ে যাওয়া মাটি সড়কেই জমে থাকে। ওই মাটিগুলি কখনই অপসারন করা হয় না। যে কারনে বৃষ্টি বা ঘন কুয়াশার শিশিরে ভিজে পিচঢালা সড়কগুলি মারাত্তক পিচ্ছিল হয়ে উঠে। আর মহাসড়কে চলাচলকারী পরিবহনগুলি ওই স্থানে গেলেই কাদায় পিচ্ছিলে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দূর্ঘটনায় পতিত হন। খোজ নিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়ক সংলগ্ন বেশির ভাগ ইটভাটার সন্মুখে রাস্তাতেই মাটি জমে আছে। এছাড়াও সড়কের অন্নান্য স্থানেও তাদেরই ফেলা মাটিতে একই চিত্র দেখা গেছে।

সেই সাথেই গ্রামাঞ্চলের পাকা রাস্তা গুলিতেও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে কোন কোন সড়ক মাটিতে চর পড়ে থাকে। দেখলে বোঝা যায় না এটি একটি পাকা সড়ক। কিন্তু এর কোন প্রতিকার না থাকায় প্রতিনিয়ত বিপদগ্রস্থ হচ্ছে পথচারী সাধারন মানুষ সহ পরিবহনের যাত্রীরা। কেড়ে নিচ্ছে নিরিহ মানুষের প্রান সহ পঙ্গুত্ব বরন করছেন অনেকেই।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ বারোবাজার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মন্জুরুল আলম ইটভাটার গাড়ীর ফেলা মাটিতে দূর্ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, মহাসড়কে মাটি টানা সকল অবৈধ যান চলাচল নিষিদ্ধ। তারা প্রতিনিয়ত সড়কে অভিযানে মামলা দিয়ে থাকেন। মাটি সদস্যায় সড়কে দূর্ঘটনা রোধে আরো পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান তিনি। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান বলেন, মহাসড়কের সমস্যাগুলি হাইওয়ে পুলিশ দেখভাল করে থাকেন। এরপরও ইটভাটার মাটিতে সড়কে দূর্ঘটনার বিষয়টি দেখে তিনি জনস্বার্থে দ্রæত ব্যাবস্থা নিবেন বলে জানান।

জানুয়ারি ১৭.২০২৩ at ১৭:০৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর