মিয়ানমারকে অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করছে ১৩ দেশ

ছবি- সংগৃহীত।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সেদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র তৈরি করছে এজন্য তারা অন্তত ১৩টি দেশ থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সরবরাহ পাচ্ছে, বলছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।

এই ১৩টি দেশের মধ্যে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও ফ্রান্স।

গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করায় মিয়ানমারের ওপর অনেক পশ্চিমাদেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ভারত ও জাপানের কোম্পানিগুলো অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ইয়াংহি লি। ১৯৮৮ সালে দেশটিতে ছয়টি অস্ত্র কারখানা থাকলেও তা বেড়ে এখন ২৫টির মতো হয়েছে।

তিনি বলেন, এটা ঠিক যে, মিয়ানমার কখনো অন্য দেশের ওপর আক্রমণ করেনি। দেশে তৈরি এসব অস্ত্র সামরিক বাহিনীর বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটি সহিংসতায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে অভ্যুত্থানবিরোধীরা প্রান্তীয় নৃগোষ্ঠীগুলো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগ দিয়ে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র জান্তা সরকারের কাছে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দেশেই যাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উৎপাদন করতে পারে, দেশগুলো সেই সহযোগিতা করছে। তারা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে কাঁচামাল, প্রশিক্ষণ ও মেশিনপত্র সরবরাহ করে। এসব দিয়ে যেসব অস্ত্র তৈরি হয়, তা তাদের সীমান্ত রক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয় না।

আরো পড়ুন:
>ইভিএম প্রকল্পের ব্যয় ১৭১১ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব
>মন্দার মধ্যেও বেড়েছে জনশক্তি রপ্তানি

প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক ইয়াংহি বলেন, মিয়ানমার অস্ত্র রপ্তানি করে না। ১৯৫০ সাল থেকেই তারা নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র তৈরি করে আসছে। সর্বশেষ অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর হাতে ২ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি বলে মনে করা হয়।

বিবিসির বার্মিজ বিভাগের প্রধান সোয়ে উয়িন তান বলেন, শুরুতে মনে হয়েছিল, সামরিক বাহিনী বিরোধী আন্দোলন স্তব্ধ করে দিতে পারবে; কিন্তু সাম্প্রতিক মাস ও সপ্তাহগুলোতে স্রোত কিছুটা হলেও উল্টে গেছে। বিরোধীদের দুর্বলতা হলো তাদের বিমান শক্তি নেই আর জান্তার তা আছে।

অভ্যুত্থানের পর আরোপ করা কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও জান্তা সরকার স্নাইপার রাইফেল, বিমান বিধ্বংসী কামান, মিসাইল লঞ্চার, গ্রেনেড, বোমা ও স্থলমাইনের মতো বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উৎপাদন থেকে বিরত থাকেনি। এই প্রতিবেদন তৈরিতে ইয়াংহির সঙ্গে আরও ছিলেন ক্রিস সিদোতি ও মারজুকি দারুসমান। সিদোতি ও দারুসমান দুজনই জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের সদস্য। প্রতিবেদন তৈরিতে তারা ফাঁস হওয়া সামরিক নথি, সাবেক সেনাদের সাক্ষাৎকার ও কারখানাগুলোর স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করেছেন।

২০১৭ সালে গ্রহণ করা ছবিগুলো থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে, অভ্যুত্থানের আগেও নিজেদের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করত তারা। ইন দিনের নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের সময় সেনাদের মিয়ানমারের তৈরি রাইফেল বহন করতে দেখা গেছে। ওই সময় তারা ১০ নিরস্ত্র রোহিঙ্গা পুরুষকে হত্যা করে।

জানুয়ারি ১৭.২০২৩ at ১০:২০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর