যশোর শিক্ষাবোর্ডের লোপাটকৃত সাত কোটি টাকা দেড় বছরেও উদ্ধার হয়নি !

বিগত ১৫ মাসেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোর থেকে লোপাট হওয়া সাত কোটি টাকা উদ্ধার হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত কার্যক্রম দূর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বয় গঠিত (দুদক) করলেও বোর্ডের নিজস্ব তহবিল হতে লোপাট হওয়া টাকা উদ্ধার না হওয়ায় বোর্ডে কর্মরত প্রেষনে থাকা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বোর্ডে শুরু থেকে দায়িত্ব পালনকারী কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে ।

লোপাটকৃত অর্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও ব্যবসায় বিনিয়োগের কারণে লোপাটকৃত টাকা ফেরত আনা সফল হবে কিনা এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে অনেকের মাঝে। অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িতরা বহাল তবিয়তে বসবাস করছে। টাকা লোপাট হওয়ার সাথে জড়িতদের অচিরেই আইনের আওতায় আনার জন্য দূর্নীতি দমন কমিশন তাদের তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায় নিয়ে এসেছে।

অচিরেই আদালতে চার্জশীট দাখিল করতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রগুলো দাবি করেছেন। বোর্ডের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাগেছে, বিগত ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে হিসাব যাচাইবাছাই কালে প্রথমে ২ কেটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ে। এরপর বোর্ডে ২০২১ সালের পূর্বে বছর গুলোতে হিসাব নিকাশ কষে নতুন করে ধরা পড়ে মোট ৭ কোটি টাকা লোপাটের কর্মকান্ড।

সেই সময় বোর্ডে তৎক্ষনিক আন্তঃ কমিটি গঠন করে তাদের হাতে যশোরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন সময় মোট ৩৮টি চেকের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে অর্থ লোপাট চক্র মোট ৭ কোটি টাকা লোপাটের কাহিনী ধরা পড়ে। টাকা লোপাট ধরা পড়লেও তৎকালীন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন ও সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা দায়িত্ব পালন করার সময় মোল্লা আমীর হোসেন বোর্ডে গঠিত তদন্ত কমিটিতে ঘটনা তাকে বাঁচিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালানোর সুযোগ করে দিলেও দূর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমম্বয় গঠিত (দুদক) তৎক্ষনিক সংবাদ পেয়ে তদন্তে মাঠে নামে।

ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দুদক যশোর জেলা সমন্বয় গঠিত দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান,সচিব,অফিস সহকারী (হিসাবধারী) আব্দুস সালাম ও বোর্ডের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহনকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভেনাস এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক যশোর সদর উপজেলার রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা মজিদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম বাবু ও সদর উপজেলার শেখহাটি জামরুল তলার শাহীলাল ষ্টোরের মালিক ওই এলাকার মৃত সিদ্দিক আলী বিশ্বসের ছেলে আশরাফুল আলম।

সেই সময় দুদক তাদের দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করেন, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজসে প্রতারণা অপরাধমূলক বিশ্বসভঙ্গ ও হিসাবপত্র সমূহ মিথ্যা বর্ণনার মাধ্যমে সরকারী ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা আত্মসাত করে দন্ড বিধির ১০৯/৪০৯/৪২০/৪৭৭ (ক)সহ ১৯৭৪ সালের দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার অপরাধ করেছেন। দু’দকের কাছে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা আত্মসাতের তদন্ত কার্যক্রম শুরু হলে পরবর্তীতে বোর্ডে গঠিত কমিটির সাথে আরো ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ে।

বোর্ডের সূত্রগুলো বলেছেন, দূর্নীতির মাধ্যমে বোর্ডের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ার কয়েকদিনের মধ্যে বোর্ডের কর্মচারী আব্দুস সালাম স্বেচ্ছায় সেই সময় সচিবের কাছে স্ত্রীর মাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে আত্মসাতের টাকা ফেরত হিসেবে নগদ ১৮লাখ টাকা প্রদান করেন। বাকী টাকা পর্যায়ক্রমে ফেরত দিবে বলে প্রেরিত পত্রে উল্লেখ করেন। তারপর থেকে লোপাট হওয়া আর কোন টাকা ফেরত দেয়নি বর্তমানে বরখাস্তকৃত কর্মচারী আব্দুস সালাম। বোর্ডের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলাবলি করছেন,আব্দুস সালাম টাকা ফেরত দেয়ার ব্যাপারে সেই সময় যে ভূমিকা নিয়েছিল।

কিছুদিনপর থেকে লাপাত্তা হওয়ায় বোর্ডের নিজস্ব তহবিলের অর্থ ফেরত আসা অনিশ্চয়তা হয়ে পড়েছে। দূর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। বোর্ডে তৎকালীন সময়গুলোতে যারা হিসাব বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের একটি তালিকা করে ঘটনার বিষয়ে সাক্ষ্য শুনানী নিচ্ছেন। তদন্ত কার্যক্রম দেড়বছর গড়ালেও আত্মসাতকৃত ৭ কোটি টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ at ২০:৩০:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস