বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন গদখালীর ৫০০ কৃষক

বিষমুক্ত সবজি নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করছেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের ৫০০ কৃষক। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব, রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক বালাইনাশক ছাড়া সবজি আবাদ করছেন তারা। এতে দারুণ সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। তাদের চাষাবাদ ঘিরে গদখালীকে বিষমুক্ত সবজি চাষের ‘মডেল’ বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা। নিজের বাঁধাকপি ক্ষেতে সেচের পানি যাতে ঠিকঠাক যায় সেদিকে নজর দিয়ে নালা কাটছিলেন মনিরুল ইসলাম।

অপরপাশে তার স্ত্রী মর্জিনা বেগম ক্ষেতের মাটি আলগা আর ঘাস নিড়ানি দিচ্ছিলেন। এ দৃশ্য গদখালী ইউনিয়নের বারবাকপুর গ্রামের ফসলি মাঠের। মনিররুল-মর্জিনা দম্পতি ১২ শতাংশ জমিতে বাঁধাকপি, ১২ শতাংশ জমিতে পটল চাষ করেছেন। এই সবজি ক্ষেতের বিশেষত্ব হলো এখানে রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে না। সম্পূর্ণ জৈবসার ও জৈব বালাইনাশক এবং ক্ষতিকর পোকা দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে হলুদ ফাঁদ পদ্ধতি।

ঝিকরগাছা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ‘পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের’ আওতায় সারা দেশের ২০ ইউনিয়নে কাজ চলছে। এর মধ্যে গদখালী ইউনিয়নও রয়েছে। গদখালী ইউনিয়নে ২০টি গ্রুপের কাজ চলছে। প্রতি গ্রুপে ২৫ জন কৃষক রয়েছেন। সবমিলে কৃষকের সংখ্যা ৫০০ জন।উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মফিজুর রহমান কবির বলেন, হলুদ ফাঁদ বা সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি ব্যবহার করায় কৃষকের পেস্টিসাইডের খরচ বেঁচে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ কমছে। মাটির গুণাগুণ ভালো থাকছে, উৎপাদিত হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি।

বারবাকপুর গ্রামের মাঠে বেগুন ও টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতে পলি মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখা গেছে কৃষকদের। পলি মালচিং পদ্ধতি-লম্বা একটা পলিথিনের মাঝে গর্ত করে তার ভেতরে সবজি ইত্যাদি রোপণ করা। এর ফলে জমিতে অতিরিক্ত সেচ লাগে না, গাছ প্রয়োজনীয় রস মাটি থেকে সংগ্রহ করে। এতে আগাছা তেমন একটা হয় না। পাঁচ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছি জানিয়ে বারবাকপুর গ্রামের কৃষক হবিবর রহমান বলেন, ‘গতবার রাসায়নিক সারের সঙ্গে অল্প পরিমাণ জৈবসার দিয়েছিলাম।

এবার কিন্তু শুধু জৈবসার প্রয়োগ করেছি। এবারের ফসল গতবারের চেয়ে ভালো হয়েছে। বারবারপুর এলাকায় দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘পলি মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো ও বেগুন চাষ করা হচ্ছে। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় এসব মাঠে ৯ গ্রæপে ২২৫ কৃষকের বিভিন্ন ধরনের ফসল প্রদর্শনী করা হয়েছে। রবি মৌসুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, বেগুন, লাউ, টমেটো, করলা, ব্রকলি ইত্যাদি ফসল কীভাবে নিরাপদ উপায়ে চাষাবাদ করা যায়, তা এখানে হাতে-কলমে দেখানো হয়েছে।

এসব ফসল সম্পূর্ণ নিরাপদ, কেননা এখানে কোনও রাসায়নিক সার কিংবা কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি উল্লেখ করে আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘জৈবসার বিশেষ করে কেঁচো কম্পোস্ট আবাদের জন্য খুবই উপকারী। এই বøকে কৃষকরা চার হাজার ৪০০ রিংয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ১৮৫ মেট্রিক টন কেঁচো সার তৈরি করছেন। এখানকার প্রায় প্রতি বাড়িতে নারীরা কেঁচো সার তৈরি করেন এবং তারা সেগুলো ক্ষেতে ব্যবহার করেন।

আরো পড়ুন:
>মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে ঝিকরগাছার লাউজানি রেলক্রসিংয়ের ডিভাইডার
>যশোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় কলেজ ছাত্রসহ দুজন নিহত

বিভিন্ন জৈবসার ও বালাইনাশক তৈরির পদ্ধতি কৃষকদের শেখানো হয়েছে জানিয়ে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রামের গাছগাছালি থেকে ছত্রাক ও বালাইনাশক তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। যেমন দুই কেজি নিমের পাতা বেটে এক লিটার পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর চার লিটার পানি মিশিয়ে তা ছাঁকতে হবে। এরপর সেটি আগুনে জ্বালিতে এক লিটার পরিমাণ করে ফেলতে হবে। এই এক লিটার নিমের রসের সঙ্গে ৯ লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করলে শোষক পোকা, ছিদ্রকারী পোকা সহজেই দমন করা সম্ভব।

তেমনি, ২০ মি.লি পেঁয়াজের রসে দুই লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করলে গাছের যেকোনও পচারোগ দমন হয়ে যাবে। এমন করে প্রায় ১৭-১৮টি পদ্ধতিতে পোকা ও ছত্রাক দমন সম্ভব। গদখালীকে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের মডেল বানাচ্ছি জানিয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো-নিরাপদ উপায়ে বা জৈবিক উপায়ে ফসল উৎপাদন। দেশে বর্তমানে প্রধান আলোচিত বিষয় হলো-ফুড সিকিউরিটি ও ফুড সেফটি। ইতোমধ্যে আমরা ফুড সিকিউরিটি অর্জন করেছি, এখন ফুড সেফটির বিষয়টির ওপর জোর দিচ্ছি।

জানুয়ারি ১৫.২০২৩ at ১৬:২৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর