বিয়েতে নতুন প্রজন্মের উৎসাহ নেই কেন?

ছবি- সংগৃহীত।

২৪-৩৫ বয়স বয়সী বিভিন্ন পেশা ও লিঙ্গের মানুষের ওপর একটি জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, যাদের বয়স ২৪-২৮, তাদের সিংহভাগেরই বিয়ের ব্যাপারে একধরনের অনীহা কাজ করে। এদের মধ্যে কেউ কেউ এখনই বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছেন না, আবার কয়েকজন একেবারেই বিয়েবিমুখ। বিশেষ করে এ বয়সের তরুণীরা মনে করেন, অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল না হয়ে বিয়ে করা মানে আরেকজনের ওপর নির্ভর করে জীবন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া। এদিকে ছেলেরা মনে করেন, বিয়ে করা মানে অনেক বড় একটি জিম্মাদারি ও এটি তাদের স্বাধীনতা খর্ব করবে।

যাদের বয়স ৩০-৩৫-এর মধ্যে, তাদের অনেকেই বিয়েবিমুখ। তারা বলেন, বিয়েটাই সব নয়। আর আশপাশে যারা বিয়ে করছেন তারা যে খুব সুখে আছে এমনও নয়। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মী আবু সাঈদ নিশান (২৯) বলেন, ‘বিয়ে করব না–বিষয়টা এমন নয়। কিন্তু যার সঙ্গে আজীবন থাকব তার সঙ্গে আদৌ মিলবে কি না, এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার। বিয়েটাকে অনেকেই জৈবিক চাহিদা পূরণের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে দেখেন। কিন্তু আমার মনে হয়, মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া ও একজনের সঙ্গে জীবন ভাগাভাগি করার সম্পূর্ণ মনোভাব না থাকলে বিয়ে একসময় বোঝায় পরিণত হয়।’

বিয়ের ব্যাপারে আরেক চাকরিজীবী আবদুর রহমান (৩৩) সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের সমাজে ছেলেদের বিয়ে করার আগে নিজের আর্থিক অবস্থা নিয়ে কয়েক দফা চিন্তা করতে হয়। একটা ছেলের টাকা নেই মানে বিয়ের বাজারে কাটতি নেই। টাকা কামাতে কামাতে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় পার হয়ে যায়। তখন মনে হয়, বিয়ে করলেও চলে, না করলেও চলে। তবে অনেক তরুণীই মনে করেন, বিয়ে তাদের সাধারণ জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটাবে। অনেকে আবার পুরুষরা দায়িত্বশীল না–এমনটা মনে করে বিয়ে করতে চান না।

আরো পড়ুন:
>বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হতে পারে ২৪ ফেব্রুয়ারি
>ঝিকরগাছায় সৃষ্টিশীল নারী প্রতিবন্ধি কল্যাণ সংস্থার শিক্ষার্থীদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

সদ্য স্নাতক পাস করা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ইয়ানূর সিফাত (২৪) সময় সংবাদকে বলেন, ‘বিয়ে করা মানে একটা বড় ছেলের বাচ্চামি সহ্য করা। আমাদের সমাজে বেশির ভাগ ছেলেই দায়িত্বশীল না। এ জন্য আমি মনে করি, বুঝে-শুনে মানুষ চিনে বিয়ে করা উচিত। এ ছাড়া একটা মেয়েকে বিয়ের আগেই অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হওয়া উচিত। স্বামীর টাকায় জীবন যাবে–এটা মেনে নিয়ে বিয়ে করলে বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্বাধীনতা ও আত্মসম্মান বোধটাও চলে যাবে।

এদিকে যারা বিয়ে করছেন তাদের অনেকেই নিজেদের সিদ্ধান্তে খুশি নন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তা (৩২) সময় সংবাদকে বলেন, ‘বিয়ের পর বুঝতে পেরেছি আমি ভুল মানুষকে বিয়ে করেছি। আমাদের সমাজে বিয়েটাকে একটি আজীবনের সম্পর্ক হিসেবে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু বিয়ে করার আগে আমরা এতটা যাচাই-বাছাই করি না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েদের সেই সুযোগটাও থাকে না। আমার মনে হয়, সমাজের অনেক নারীই বিয়ে করে সুখী নন। এখন যে সংখ্যক বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে সামনে তা আরও বাড়বে। অনেকেই পরিবারের সম্মান ও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ডিভোর্সের মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।

এদিকে দিনকে দিন বিয়ের আগ্রহ কমার সঙ্গে সমানুপাতিক হারে বাড়ছে বিচ্ছেদের ঘটনা। বিয়েকে মূল্য দিতে ও বিচ্ছেদের হার কমাতে সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, বিয়ে হলো সমঝোতার মতো। সমঝোতা না থাকলে একসঙ্গে আজীবন থাকা সম্ভব নয়। সামাজিক কুসংস্কারগুলো দূরে সরিয়ে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে বিয়ে হয়ে উঠবে মূল্যবান ও আকর্ষণীয়।

সূত্র- সময় নিউজ

জানুয়ারি ১৩.২০২৩ at ২১:৫২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর