স্থবির কুবি শিক্ষক সমিতি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষকদের একপক্ষের বাধার মুখে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ভণ্ডুল হওয়ার পর স্থবির হয়ে আছে শিক্ষকদের সংগঠনটি। নিয়মানুযায়ী জানুয়ারির ১ তারিখ থেকেই নতুন কমিটির কার্যক্রম চালানোর কথা। তবে নির্বাচন না হওয়ায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে এ সংগঠন। নির্বাচন কখন হবে সে বিষয়েও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউ।

শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি বছরের ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব না হলে ১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সাধারণ সভা আহŸান করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে শিক্ষক সমিতির দাবি, ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে একাধিকবার চেষ্টা করেও অপরপক্ষকে সভার বিষয়ে রাজী করাতে পারেননি তাঁরা।

গেল বছরের ১ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতির ২০২৩ সালের কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা নির্বাচনের বিরোধিতা করে আসছিলেন। এ শিক্ষকরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে ভোটগ্রহণে বাধা দেন। শেষ পর্যন্ত ভোটগ্রহণ সম্ভব না হওয়ায় নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন। সে নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত হয়নি।

২০ নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর ২০২২ কমিটির ওপর অনাস্থা প্রকাশ করে ২৪ নভেম্বর চিঠি দেয় শিক্ষকদের একটি অংশ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনাস্থা প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে সাধারণ সভা ডাকার কথা রয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে সাধারণ সভা আহŸান করা হলেও সভায় যোগ দেননি অনাস্থা প্রস্তাবকারী শিক্ষকরা। সভার কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় সেসময় বাধ্য হয়ে সভা মুলতবি করে শিক্ষক সমিতি। অনাস্থা প্রস্তাবকারী শিক্ষকদের অভিযোগ, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনাস্থার ক্ষেত্রে সাধারণ সভা ডাকার কথা বলা হয়েছে, জরুরি সাধারণ সভা নয়। জরুরিভাবে সভা ডাকায় তাঁেদের অনেকে অংশগ্রহণ করেননি।

এদিকে যে কমিটির ওপর অনাস্থা প্রস্তাব করা হয়েছে, সে কমিটি বরাবরই আবার নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন অনাস্থা প্রস্তাবকারী শিক্ষকরা। গত ২২ ডিসেম্বর সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষে অনাস্থা প্রস্তাবকারীদের দুই শিক্ষক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সাধারণ সভা ডেকে নির্বাচন আয়োজনের জন্য অনুরোধ করা হয়। এ চিঠি দেওয়ার পর উভয় পক্ষের শিক্ষকদের মধ্যেই হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।

আরো পড়ুন:
>কুষ্টিয়ায় অসহায়দের পাশে ইবির তারুণ্য
>বেড়ায় প্রধান শিক্ষকসহ ৬ জুয়ারি আটক

তাঁরা বলছেন, নির্বাচন ঘোষণার কারণে যে কমিটির ওপর অনাস্থা দেওয়া হয়েছে, সে কমিটি আয়োজিত নির্বাচন বাঞ্চাল করার পর তাদের আহুত সাধারণ সভায় না এসে তাঁদেরকেই আবার চিঠি দিয়ে কৌতুকের জন্ম দিয়েছেন শিক্ষকরা। তবে চিঠিতে স্বাক্ষরকারী নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যপক হাসেনা বেগমের ভাষ্য, অনাস্থা দিলেও শিক্ষক সমিতির সভাপতি তখনো ক্ষমতায় থাকায় তাঁর বরাবর চিঠি দিয়েছেন তাঁরা।

শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সাধারণ সম্পাদক ১৫ দিনের মধ্যে সাধারণ সভা আহ্বানে ব্যর্থ হলে অনাস্থা প্রস্তাবকারী শিক্ষকদেরকেই যৌথভাবে সাধারণ সভা আহ্বান করার কথা বলা হয়েছে। তবে যে কমিটির ওপর অনাস্থা দেওয়া হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর সে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখনো সাধারণ সভা ডাকেননি অনাস্থা প্রস্তাবকারী শিক্ষকরা। এ বিষয়ে ওই শিক্ষকদের নেতা কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, গঠনতন্ত্রে এ সভা আহ্বানের বিষয়ে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। আমরা এ বিষয়ে কথা বলছি। শিগগির সিদ্ধান্ত নেব।

কমিটির মেয়াদ থাকাকালীন এ সভা না ডেকে মেয়াদ শেষে সভা আহ্বানের বৈধতা আছে কি না-এমন প্রশ্নে কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমরা সব পক্ষের সাথে কথা বলে শিক্ষক সমিতি পুনর্গঠনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, মূলত নতুন শিক্ষক নিয়োগের পর তাঁদেরকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নির্বাচনে জিততেই এত নাটক করেছেন অনাস্থা প্রস্তাবকারী শিক্ষকরা।

উপাচার্যের ‘অভিনব’ বিজ্ঞপ্তির আলোকে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ার কারণেই মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন নিয়ে কথা নেই অনাস্থা প্রস্তাবকারী শিক্ষকদের মাঝে। অবশ্য উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের দাবি, যারা ১ ডিসেম্বর নির্বাচন ডেকেছিলেন, তাঁরাও শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার আগেই নির্বাচন করে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন। সেজন্যই তড়িঘড়ি নির্বাচন ডেকেছিলেন তাঁরা।

আরো পড়ুন:
>কুষ্টিয়ায় অসহায়দের পাশে ইবির তারুণ্য
>বেড়ায় প্রধান শিক্ষকসহ ৬ জুয়ারি আটক

এসব বিষয়ে কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০২২ এর সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর সংগঠনটিকে অকার্যকর করতে শিক্ষকদের একটি পক্ষ অহেতুক অনাস্থা দিয়েছে। অনাস্থার প্রেক্ষিতে ডাকা সাধারণ সভায়ও আসেননি তাঁরা। আমরা বারবার তাঁদেরকে সভায় আসার বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছি। তাঁরা সভার বিষয়ে কোনো সাড়া না দিয়ে সংগঠনটিকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এ সংকট তৈরি হওয়ার পিছনে তাঁরাই দায়ী।

জানুয়ারি ১৩.২০২৩ at ২০:০২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর