ষ্ট্রিট ফুডের নামে আমরা কি খাচ্ছি !

ফুচকা খেয়ে বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়ে স্কুল ছাত্রী ইয়াসমিন। বমি আর পাতলা পায়খানার সঙ্গে জ্বর। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে বলা হয় খাদ্যের কারণে ইয়াসমিন অসুস্থ হয়েছে। ইয়াসমিনের মতো এরকম শিশু শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত ষ্ট্রিট ফুড খেয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঝিনাইদহ শহরের আনাচে কানাচে গজিয়ে উঠেছে মানহীন খাবারের দোকান। বিকাল হতে না হতেই ওই সব দোকানে মানুষ ভীড় করে।

কিন্তু তারা কি খাচ্ছে, সেটা মানসম্পন্ন কিনা তা দেখছে না। ভোজন রসিকদের এই হুমড়ে পড়ার প্রবণতা তাদের স্বাস্থ্য প্রবল ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য মানব জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপুর্ন উপাদন হলেও ঝিনাইদহ শহরের মানুষ কি খাচ্ছে তা কেউ ভেবে দেখছে না। অনেকে ফ্রি খাবার পেয়ে গোগ্রাসে গিলছে। বিশেষ করে ঝিনাইদহ শহরের মুজিব চত্বর ও পায়রা চত্বর এলাকার জেলা পরিষদের মার্কেটে এ ধরণের কাবাবের দোকান গজিয়ে উঠেছে। এছাড়া রয়েছে একাধিক ভ্রাম্যমান চপ, পিয়াজু ও ফুচকার দোকান।

মুজিব চত্বরের কাবাব ঘরের সামনে অনেক ভিআইপি কর্মকর্তাদের দেখা যায়। প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় দিনকে দিন বেপরোয়া ভাবে এই অবৈধ কায়কারবার চালিয়ে যাচ্ছে কতিপয় ব্যাবসায়ী। সরজমিন দেখা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের মুজিব চত্বরে একাধিক কাবাব ঘরে মানুষ কি খাচ্ছে তা দেখার কেউ নেই। বিকাল হলেই ধোঁয়া ও উৎকট গন্ধে একাকার হয়ে যায় গোটা এলাকা। ধোঁয়ায় একদিকে পথচারিরা অতিষ্ঠ অন্যদিকে পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। অথচ এই রাস্তা দিয়েই জেলা প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন।

আজগার আলী নামে এক পথচারি অভিযোগ করেন কাবাব ঘরগুলোর বেøায়ারের ধোয়ার সঙ্গে উড়া ছাই তার চোখে পড়ে চোখ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ জন্য তাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। এদিকে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বর এলাকার মনা গাঙ্গুলীর হোটেলের সামনে ইদানিং মানুষের ভীড়ে চলাফেরা দায়। রাস্তার উপর মটরসাইকেল রেখে মানুষ ফুচকার দোকানে আড্ডা দিচ্ছে। এসব দোকানে সবচে নারীদের বেশি দেখা যাচ্ছে। ফুচকার দোকানগুলোতে স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটি পড়–য়া শিক্ষার্থীদের দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের হোটেল রেস্তোরায় খাবার খেয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী আর বাসায় রান্না করা খাবার খেতে চাই না। অনেক সময় ফুটপাতের (স্ট্রিট ফুড) হালিম, ফুচকা, কাবাব, পিয়াজু, চপ ও সিঙ্গরাপড়া পুরি খেয়ে গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত হচ্ছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে জীবনধারণের জন্য খাদ্যের সংস্থান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্রকে নাগরিকদের নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে হয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাই করে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ঋঅঙ) বলছে, ‘খাদ্যনিরাপত্তা হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে পৃথিবীর সব স্থানের সব মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় পছন্দের খাবার পাওয়ার দৈহিক ও আর্থিক সুযোগ সৃষ্টি করা। নিরাপদ খাদ্য ভোক্তার অধিকার বলে গণ্য হয়। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ নিরাপদ খাদ্যকে ভোক্তার অধিকার হিসেবে নেয় এবং এর ব্যত্যয় সেসব দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশে ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণীত হয় এবং নিরাপদ খাদ্যের জন্য যখন মানুষ দিশেহারা তখন খাদ্যে ভেজাল রোধ-সংক্রান্ত সব আইন ও অধ্যাদেশ পর্যালোচনা করে ‘দ্য পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯’- রহিত করে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’ প্রণীত হয়। কিন্ত এই আইন পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্চে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ পৌরসভা এলাকায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করণে পৌর স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শংকর কুমার নন্দি কোন ভুমিকা রাখেন না।

শহরের আনাচে কানাচে ভেজাল ও খোলা স্থানে খাবার বিক্রি হলেও তিনি ব্যাস্ত জন্মনিব্ধন সনদ নিয়ে। বাজার ঘাটে তার কোন অভিযানের দৃশ্য চোখে পড়ে না। এ নিয়ে পৌর নাগরিকরা হতাশ। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা রিয়াদ রায়হান আবীর বলেন, এ সমস্ত স্ট্রিট ফুড স্বাস্থ্যের জন্য ক্সতিকর ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকী স্বরুপ। তিনি বলেন খাদ্যে অহরহ বারবিকিউ নামে একটি উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা খেয়ে মানুষ ক্ষতির মুখে পড়ছে।

ঝিনাইদহ পৌরসভার স্যানেটারি ইন্সপেক্টর শংকর নন্দি বলেন, আমার চাকরি আর বেশি দিন নেই। তবে এখনো কেউ অভিযোগ না করায় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি জানান। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথ জানান, শহরের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করছেন। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসনের মিটিংয়েও তুলেছেন। এ বিষয়ে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের পক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।

জানুয়ারি ১২.২০২৩ at ১৭:১৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/ইমস