রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট, নাকাল জনজীবন

ছবি- সংগৃহীত।

রাজধানীর সব সড়কেই তীব্র যানজট। সাধারণ জনগণের কাছে যানজট হলো ভোগান্তির আরেক নাম। যানজটের কারণে শুধু মানুষের সময়েরই অপচয় হচ্ছে না, একইসঙ্গে শারীরিক-মানসিক ক্ষেত্রেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ঢাকায় যানজট সমস্যা প্রতিদিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আয় নষ্ট হচ্ছে। সবমিলিয়ে যানজটের কারণে দৈনিক আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা। গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে দেখা গেছে, মিরপুর, কাজীপাড়া, ফার্মগেট, বিজয় স্মরণী।

কাওরানবাজার, শাহাবাগ, সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, আজিমপুর, পুরান ঢাকার বংশাল, নবাবপুর, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়া, মালিবাগ, রামপুরার, বাড্ডা এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। এছাড়া রাজধানীতে যানজটের কারণে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা আটকে থাকে। এতে শ্রমঘণ্টা অপচয়জনিত জাতীয় উৎপাদনশীলতার বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। যানজট রাজধানীর নগরজীবনকেই শুধু বিপর্যস্ত করে তুলছে তা নয়, ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য হিসেবেও পরিচিতি এনে দিয়েছে। রাজধানী ঢাকায় যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ অতিরিক্ত প্রাইভেটকার। রাস্তার যানবাহনের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রাইভেটকার।

কোনো কোনো পরিবারের তিন থেকে চারটি প্রাইভেটকার রয়েছে। রাজধানীর মোট রাস্তার ৫৪ দশমিক দুই শতাংশ জায়গা দখল করে রাখে প্রাইভেটকার। একটি পরিসংখ্যানমতে, গত ১০ বছরে শুধু রাজধানীতে যানবাহন বেড়েছে দুই লাখ ১২ হাজার ১০৩টি। ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাও যানজটের কারণ। ট্রাফিক পুলিশ সিগন্যালের তোয়াক্কা না করে একই পয়েন্টে আধা ঘণ্টা পর্যন্ত একদিকের যানবাহন আটকে রাখে। অনেক সময় অটো সিগন্যাল বাতিতে যানবাহন নিয়ন্ত্রিত হয় না। এসব নানা তথ্য জানিয়েছেন পরিবহন নগর উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
যাত্রাবাড়ি থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আসতে ঢাকার বাইরে থেকে আসা বাসগুলোতে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় বসে থাকতে হয় দীর্ঘক্ষণ। যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তা এলাকায় ট্রাফিক সিগন্যালে একবার আটকে গেলে কখন ছাড়বে তার কোন ঠিক নেই। পোস্তগোলা এলাকার লোকাল বাসগুলো এসে যাত্রাবাড়ি মোড়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন বাসের যাত্রীরা। তারা আরও বলেন, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার জেলাগুলো থেকে আসা গণপরিবহনগুলোকে ফ্লাইওভারের মুখে এসে থেমে থাকতে হয়।

আরো পড়ুন:
>সিপিডিএল-সিএমপি’র শীতবস্ত্র বিতরণ
>বিরামপুরে গরম পোশাক বেচাকেনার ধুম

নিচের রাস্তা ভাঙা থাকার কারণেও গাড়ি চলতে পারে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না তারা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে কার্যত এয়ারপোর্টমুখী সড়কে যানচলাচল স্থবির হয়ে রয়েছে। বিশেষ করে মহাখালী ও প্রগতি সরণি থেকে বিমানবন্দর হয়ে উত্তরাগামী রাস্তায় যানচলাচল একদম বন্ধ গেছে। ফলে বিমানবন্দর হয়ে এই যানজটে একদিকে পৌঁছেছে মহাখালী ফ্লাইওভার পর্যন্ত, অন্যদিকে পৌঁছেছে রামপুরা পর্যন্ত। ঘণ্টা পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক যাত্রী হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হচ্ছেন।

সাধারণ এক যাত্রী বলেন, আজ মহাখালী ফ্লাইওভারে ২ ঘণ্টা যানজটের কারণে বসে ছিলাম। বাধ্য হয়ে হেঁটে অফিসের দিকে রওনা হয়েছি। অসহনীয় এ যানজট নিরসনে বিকল্প চিন্তা করার দরকার ছিল। যানজট নিয়ে উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের উত্তরা পূর্ব জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এবং বিশ্বের দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে তুরাগ পাড়ে জড়ো হচ্ছেন বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে। বুধবার থেকে মানুষ আসা শুরু করেছেন। ফলে হাজার হাজার মানুষের চাপে উত্তরা থেকে টঙ্গী এলাকায় যান চলাচল স্থবির। এদিক দিয়ে উত্তরাতে গাড়ি প্রবেশ করতে না পারায় এ যানজটের রেশ বিমানবন্দর এলাকা ছাড়িয়ে গেছে।

জানুয়ারি ১২.২০২৩ at ১৫:৩৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর