শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

শীতকাল চলছে, শুরু হয়েছে শীতের মূল দুই মাসের প্রথমটি পৌষ। এই লেখা যখন লিখছি তখন সারাদেশে পৌষের হাড়-কাঁপানো শীত নেমেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাপমাত্রা নেমেছে ৯ এ। পাশাপাশি ঢাকাসহ সারাদেশে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও আগেভাগেই প্রকৃতিতে শীত তার আসার কথা জানান দেয়। শীতের মাস পৌষেই হিমেল হাওয়ায় প্রকৃতিতে নামে নিরবতা। এই মুহূর্তে বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাবও নেই সমুদ্রে।

যে কারণে শীতের শুষ্কতার ছোঁয়া চারদিক। ঠান্ডা হাওয়া আর শুষ্কতার কারণে শীত সকলের প্রিয় ঋতু। প্রতি সকালের কুয়াশা আর ঠাণ্ডা হাওয়া জানান দিয়ে শীত আসে সারা গাঁ জুড়ে। পাখিরা গাছের ডালে জবুথুবু হয়ে থাকে। জমে যায় ঘাসের উপর শিশির বিন্দু। একসময় শীতকালে শীতের পিঠা তৈরীর ধুম পড়ে যেত গ্রামের প্রতিটি ঘরে। খেজুর রসের সাথে ভাপা পিঠা খাওয়ার সেই সোনালী দিনগুলো এখন আর খুব একটা চোখে পড়েনা। পাশাপাশি আগের চেয়ে এখন শীতের আমেজও অনুভব হয় কম সময়।

বিশ্বব্যাপী নানা দূষণের কারণে উত্তপ্ত হচ্ছে পৃথিবী। উষ্ণতা বাড়ছে। বাড়ছে সমুদ্রস্তর। ফলে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুতই। স্বাভাবিকভাবে যার প্রভাব পড়ছে আমাদের দেশেও। ছয় ঋতুর পুরোপুরি প্রভাব এখন নেই বললেই চলে। প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনেও। এবার বর্ষায় বৃষ্টিও হয়নি তেমন। যে কারণে শীতের তীব্রতা কতটুকু হয় বলাও যাচ্ছেনা। এর আগের বছরগুলোতে নভেম্বর মাসজুড়েও শীতের প্রকোপ ছিল অনেক বেশি।

অথচ এবার ডিসেস্বরেও শীতের আমেজ ততটুকু অনুভূত হয়নি। প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরণ বিশ্ব উষ্ণায়নের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। প্রতি বৎসর শীতকাল আমাদের মাঝে আসে। আবার চলেও যায়। কিন্তু কষ্ট হয় অসহায় ও দুঃখী মানুষের। বর্ষা ও শীত এ দু’কালেই অসহায় মানুষেরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে ভোগেন। যৎসামান্য সাহায্য তারা পায় তা দিয়ে কোনভাবেই তাদের কুলোয় না। কষ্ট সহ্য করেই দিন পার করতে হয়। শীতে উত্তরাঞ্চল, দেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও গ্রামাঞ্চলে সাত-সকালে দেখা মিলবে অসংখ্য দুঃখী মানুষের।

দেখা যাবে, সেখানে তারা খোলা আকাশের নীচে গায়ে ছালা আর শরীরে ছেঁড়া কাপড় জড়িয়ে কোনমতে শুয়ে আছে। ক্ষণে ক্ষণে ঠাণ্ডায় কুঁকড়ে উঠছে। পাশে কুকুর, বেড়ালের আনাগোনা। মানুষের অসহায়ত্বের এমন দৃশ্য আমরা আর দেখতে চাই না। ‘শীতে একটি অসহায় মানুষও কষ্ট পাবে না’-এমন সংকল্প আমাদের নিতে হবে। শীতার্ত মানুষের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে সবচেয়ে বেশি। শীতে অসহায় মানুষের সাহাযার্থে এগিয়ে আসতে দেখা যায় অনেককে যা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।

কেবল মিডিয়া কভারেজ কিংবা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে যদি এই সাহায্য প্রদান হয় তাহলে তা কখনো সুফল বয়ে আনবে না। সাহায্য, সহযোগিতা হতে হবে নিঃস্বার্থ, সৎ উদ্দেশ্যপূর্ণ। শীতার্ত মানুষের সাহায্যার্থে প্রথমে এগিয়ে আসার কথা রাষ্ট্রের। নানা সংস্থা, সংগঠনকেও শীতার্ত অসহায় মানুষের পাশে এগিয়ে আসতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে বিত্তশালী ও সামর্থ্যবান সব মানুষকেও। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শীতার্ত দরিদ্র মানুষকে খুঁজে বের করতে হবে। ওরাতো অসহায়, ওদের কাছে নেই কোন দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো উপাদান।

মিডিয়া চাইলে তাদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিতে পারে। চাইলে গণমাধ্যম কর্মীগণ শীতার্তদের নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করতে পারেন। দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন সরকার, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও বিত্তশালীদের। নিজ নিজ এলাকা থেকে নতুন কিংবা পুরনো শীতবস্ত্র সংগ্রহ করেও শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। একটি পুরনো কিংবা নতুন শীতবস্ত্র একজন শীতার্ত মানুষের শীত নিবারণের অবলম্বন হতে পারে। অবশ্য স্ব-উদ্যোগে এবং নির্মোহ মনোভাব নিয়ে অনেকে শীতার্ত মানুষের পাশে এগিয়ে আসেন। যা আমরা বিভিন্নভাবে দেখতে পাই।

চেষ্টা করেন সরকারি, বেসরকারী অনেক সংস্থাও। কিন্তু যতটুকু এগিয়ে আসার কথা ততটুকু হচ্ছে না। সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে বাদ পড়ে যাবে অনেক দরিদ্র শীতার্ত মানুষ। এজন্য দেশব্যাপী শীতার্ত মানুষের একটি তালিকা করা যেতে পারে। এ কাজে প্রয়োজনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনকেও কাজে লাগানো যায়। তালিকা ধরে প্রত্যেক শীতার্ত মানুষের কাছে শীতবস্ত্র ও আর্থিক সাহায্য পাঠানোর কাজটি সরকার করতে পারে। তবে, শীতার্ত মানুষের এসব বস্ত্র, অর্থ সহ সব সাহায্য যেন দুর্নীতিমুক্ত ও সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দুর্গতদের কাছে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

বিতরণ ব্যবস্থা যেন ত্রুটিমুক্ত হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে। অন্যান্য সংস্থাও তাদের মতো করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ সমন্বিত একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজটি সুস্পন্ন করতে পারলে দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে শীতের কষ্ট থেকে রক্ষা করা যাবে। পাশাপাশি সবাইকে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আসুন, সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শীতার্ত মানুষের কষ্ট লাঘবে সবাই হাত বাড়িয়ে দিই, তাদের পাশে দাঁড়াই।

★ লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট, কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম।

জানুয়ারি ০৮.২০২৩ at ১০:৪২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এমএইচ