আইন মানছেন না কুবি উপাচার্য, চারমাসেও হয়নি সিন্ডিকেট সভা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাসে সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা থাকলেও আইনের তোয়াক্কা না করে চার মাসেও সিন্ডিকেট সভা করছেন না উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন। সবশেষ সিন্ডিকেট সভা হয়েছিল গেল বছরের ২৫ আগস্ট। চার মাসেও সিন্ডিকেট আয়োজন করতে না পারার পিছনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নিয়োমবর্হিভুত নিয়োগ দিতে না পারা, অপছন্দনীয় শিক্ষকদের পদোন্নতি না দেওয়া ও পূর্ববর্তী সিন্ডিকেট সভা বিবরণী সরবরাহ না করাসহ বিভিন্ন কারণে হচ্ছে না সিন্ডিকেট সভা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১৮ এর (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রতি ৩ (তিন) মাসে সিন্ডিকেটের কমপক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হইবে।’ গত বছরের ৩১ জানুয়ারি যোগদানের পর এখন পর্যন্ত তিনটি সিন্ডিকেট সভা করেছেন উপাচার্য। এর মধ্যে দু’টি যথাসময়ে করতে পারলেও বিধি অনুযায়ী আর কোনো সভা করতে পারেননি তিনি। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হওয়া ৮৫তম সভার পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও পরবর্তী সভা আর হয়নি। গত ২৯ ডিসেম্বর ৮৬ তম সভা আহ্বান করা হয়েছিল।

আরো পড়ুন:
> চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে উপ-নির্বাচন, গোমস্তাপুরে ৬ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল 
> পত্নীতলায় শীতার্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

তবে নিয়োগ শেষ করতে না পারা, পদোন্নতিতে অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে এ সভাও স্থগিত হয়। গত ২ নভেম্বর ‘বিশেষ’ প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অভিনব’ উপায়ে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কুবি। এ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে শিক্ষকদের অভিযোগ থাকলেও তা আমলে নেননি উপাচার্য। এ বিষয়ে শিক্ষকরা আদালতে রিট করলে আদালত রিটকারীদের সাথে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে আদেশ দেন। আদালত থেকে ১৫ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়ে তৎক্ষণাৎ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন তিনি।

তবে রিটকারী শিক্ষকদের সাথে বিষয়টি নিষ্পত্তি না করেই ২২ ডিসেম্বর ওই বিজ্ঞপ্তির অধীনে দু’টি বিভাগের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর বিভাগ দু’টিসহ আরও দু’টি বিভাগের ভাইবা বোর্ডের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ সংক্রান্ত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হলে পুনরায় নিয়োগ স্থগিত করেন তিনি। নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করতে না পারায় ২৯ তারিখের সিন্ডিকেট সভাও স্থগিত করে দেন তিনি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের পদোন্নতির ডিউ (বিভিন্ন শর্ত পূরণ) হওয়ার পর আবেদন করেন। তবে উপাচার্য আবেদনকৃত সকল শিক্ষকের বোর্ড আয়োজন না করে তাঁর অনুসারী শিক্ষকদের পদোন্নতি বোর্ড আয়োজন করেন।

যদিও তাঁরা পরে আবেদন করেছেন। তাঁর অনুসারী শিক্ষকরা আবেদনের এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বোর্ডের ডাক পেলেও অনেকে মাস পেরিয়ে বোর্ডে বসতে পারেননি। এরমধ্যে ইংরেজি ও অর্থনীতি বিভাগের উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা ৭ ডিসেম্বর আবেদন করে যথাক্রমে ১৩ ও ১৯ ডিসেম্বর বোর্ড পেয়েছেন। তবে উপাচার্যের অনুসারী না হওয়ায় ২১ নভেম্বর ও চার ডিসেম্বর আবেদন করেও ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বোর্ডে বসতে পারেননি অন্য দু’টি বিভাগের শিক্ষকরা। ২০ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতি থেকে ডিউ হওয়া সকল শিক্ষকের বোর্ড সম্পন্ন করে সিন্ডিকেট সভা করার আবেদন করা হয়। উপাচার্য শিক্ষক সমিতির আবেদন অগ্রাহ্য করে সিন্ডিকেট সভা ডাকলেও শেষ পর্যন্ত আর সভা করতে পারেননি তিনি।

আরো পড়ুন:
> রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদ সংসদে শেষ ভাষণে যা বললেন
> স্ত্রীকে মেরে টুকরো করে খালে ভাসালেন যুবক

পুনরায় আগামী ২৫ জানুয়ারি সম্ভাব্য সিন্ডিকেট সভার আগে তাঁদের অনেকের বোর্ডের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের কার্য-পরিচালনা বিধি (১০.১) অনুযায়ী, সভা শেষ হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে সভার সকল সদস্যের মধ্যে লিখিত কার্য-বিবরণী সরবরাহের কথা রয়েছে। সভায় উপস্থিত কোনো সদস্য যদি মনে করেন যে, কার্য-বিবরণী যথার্থভাবে অনুলিখিত হয়নি, তাহলে কার্য-বিবরণী হাতে পাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই সচিবকে তার সংশোধন সম্পর্কে অবহিত করার কথা রয়েছে।

তবে ৮৫ তম সিন্ডিকেট সভা শেষ হওয়ার ৪ মাস পরও গত ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সভার কার্য-বিবরণী হাতে পাননি সিন্ডিকেট সদস্যরা। এ বিষয়ে একাধিক সিন্ডিকেট সদস্যের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে একজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। তিনি বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভার কোনো কার্যবিবরণী আমি পাইনি, আমার কাছে আসেনি। সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের ডিনও বলেছেন একই কথা। এসব বিষয়ে কথা বলতে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের মঈনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে যথারীতি তাকে পাওয়া যায়নি। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য আইন এবং সকল বিধি-বিধান অবশ্যই মেনে চলা উচিৎ। আইন মানলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

জানুয়ারি ০৫, ২০২৩ at ২০:২০:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস