যশোর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ১৮ মাসেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি

জ বুধবার ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বর্ষপূর্তি পালন করছে যশোর জেলা ছাত্রলীগ। এ উপলক্ষে যশোর শহরের গাড়িখানা রোডে দলীয় কার্যালয়ে কেককাটা, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন, শোভাযাত্রা এবং সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোতে অধিকাংশই অছাত্র, চাকরিজীবী, বিবাহিত ও বিতর্কিতরা পদে বহাল। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব আসছে না। সংগঠনের সাধারণ নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন। দুই বছর যশোরে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকার পরে ২০২১ সালের ৫ জুলাই সদ্য বিদায়ী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সালাউদ্দিন কবির পিয়াসকে সভাপতি ও তানজীব নওশাদ পল্লবকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচটি পদে ২৩ নেতার নাম ঘোষণা করে।

আরো পড়ুন:
> চৌগাছা সরকারি হাইস্কুলে ক্লাসরুম সংকটে, পাঠদান ব্যাহত
> এলেঙ্গা পৌরসভার মহাপরিকল্পনা প্রনয়নের কর্মশালা অনুষ্ঠিত

সেই এক বছরের জন্য কমিটি ১৮ মাসেও পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। বরং ২৩ সদস্যদের এই আংশিক কমিটি ৫টি উপগ্রুপে ভিভক্ত। আবার অনেকেই কাঙ্খিত পদে বসতে না পারায় পদ ব্যবহারও করেন না; একই সাথে দলীয় কর্মসূচি অংশও নেন না। সাংগঠনিকভাবে বর্তমান কমিটি দীর্ঘদিনের মেয়াদ উত্তীর্ণ শার্শা, চৌগাছা ও কেশবপুর উপজেলা-পৌর কমিটি বিলুপ্ত করেছে। একই সাথে নতুন করে মণিরামপুর উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই দুটি পদে।

এছাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিগুলোর চিত্র আরো ভয়াবহ। যশোর জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল ২০১৫ সালের ১৬ জুন চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।

সেই ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি ইব্রাহিম হুসাইন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন শফিকুজ্জামান রাজু। কমিটির মেয়াদ দেয়া হয় ১ বছর। কিন্তু উপজেলা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি দায়িত্ব পালন করেন ৬ বছর ৫ মাস। সর্বশেষ গত বছর ২০ নভেম্বর কোনো আহ্বায়ক কমিটি না করে উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করে বর্তমান জেলা কমিটি। বিলুপ্তির কারণে উপজেলা সংগঠনটি হয়ে পড়েছে এখন কান্ডারিহীন। ছয় মাস হলো ছাত্রলীগের কমিটি নেই যশোরের চৌগাছা উপজেলায়। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কেশবপুরে তিন দফা আহ্বায়ক কমিটির ওপর ভর করে চলছিল ছাত্রলীগ।

মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি কেশবপুর উপজেলা, পৌর ও কেশবপুর সরকারি কলেজ শাখাসহ সব ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া সংগঠনের কার্যক্রম গতিশীল করতে নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত ৭ কার্য দিবসের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে সে সময় জীবনবৃত্তান্ত জমা দিলেও দীর্ঘ এক বছরেও হয়নি কমিটি। ফলে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগসহ তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে আগের পরিচয়ে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

এদিকে যশোর সরকারি এম এম কলেজের মেয়াদ উত্তীর্ণ ও বিতর্কিত কমিটি এখনো পূর্ণবহাল রয়েছে যা কলেজ ছাত্র রাজনীতির উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়েছে, কলেজের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত না করায় সেখানে বিভিন্ন দলীয় রাজনীতি প্রভাব দেখা দিচ্ছে। যশোরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া নিয়ে চলছে ধোঁয়াশার সৃষ্টি।

কমিটি না থাকায় হতাশায় ভুগছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া অভয়নগর ২০১২, বাঘারপাড়া ২০১৭, ঝিকরগাছা ২০১৬, সদর ও পৌর ২০১৫, শার্শায় ২০১১ সালে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব কমিটির বেশিরভাগ নেতা এখন নিষ্ক্রিয়। গড় বয়স ২৯ এর বেশি হয়ে যাওয়ায় নেতাদের এ নিষ্ক্রিয়তার প্রধান কারণ। এছাড়া ব্যবসায় যুক্ত হওয়া, তদবিরবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে দলীয় রাজনীতিতে দেখাই যায় না তাদের। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় গ্রুপ-উপ গ্রুপে বিভক্ত উপজেলা ছাত্রলীগে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও। এসব উপজেলার পদপ্রত্যাশী নেতারা জানিয়েছেন, প্রায় তিনবার জেলা কমিটি ভেঙ্গে নতুন করে কমিটি হলেও উপজেলা গুলোর নতুন কমিটি পরিবর্তন না হওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ হতাশায় ভুগছেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ এসকল কমিটির সভাপতি সম্পাদকও চাচ্ছেন দ্রুত করে নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়ার।

নাম না প্রকাশে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের এক যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, বিয়ে-শাদী করেছি অনেক আগে। লেখাপড়া তো দূরের থাক; দুই সন্তানের বাবা এখন। এখনও দলীয় কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের পদ ব্যবহার করতে লজ্জা লাগে। স্থানীয় সংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কোন্দলে দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ার কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। কেশবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান খান মুকুল বলেন, পদপ্রত্যাশী হিসেবে আমিসহ অনেকে জেলা ছাত্রলীগের কাছে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন।

জেলা ছাত্রলীগের নেতারা কেশবপুরে ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কী কারণে নতুন কমিটি দেওয়া হয়নি সেটা জানি না। সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পলাশ কুমার মল্লিক বলেন, কেশবপুরে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। উপজেলা ও জেলা ছাত্রলীগের ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা জানান, যশোরের সন্তান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য নির্বাচিত হওয়ায় যশোরের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছিলো। তাদের ভাবনা ছিলো, লেখকের হাত দিয়ে জেলার সকল উপজেলা কমিটি নতুন করে অনুমতি পাবে। তবে সেটি হলো না। নতুন বছরে জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন হতে পারে, এমন আভাস পাওয়ায় নতুন কমিটিতে সুযোগ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অনেকে।

এই বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব বলেন, করোনাকালে আমাদের জেলার কমিটি অনুমোদন দেওয়ার কারণে অর্ধেক সময় সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়েছিলো। আমাদের পূর্নাঙ্গ কমিটি তালিকা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের আগে বিগত কমিটিগুলো নেতৃত্বদানকারীরা উপজেলা কমিটিগুলো নতুন কমিটি অনুমতি বা নতুন নেতৃত্বে না আনার ব্যর্থতায় আমাদের কমিটির উপর চাপ পড়েছে।

ইতোমধ্যে তিনটি বির্তকিত কমিটিগুলো বিলুপ্ত করেছি। নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের সিভি আহ্বান জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি সম্পাদকের নির্দেশে যশোরের সকল উপজেলার কমিটি ও ইউনিটকে শক্তিশালী করতে দ্রুতই কার্যক্রম শুরু হবে। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও এই বিষয়ে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানুয়ারি ০৪, ২০২৩ at ২০:০৯:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস