কালাজ্বর শনাক্তকরণে অভাবনীয় আবিষ্কার ঢাবির

ছবি: সংগৃহীত

ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী রোগ কালাজ্বর (যেটি কালা আজার বলেও পরিচিত) খুব অল্প সময়ে ও সহজভাবে শনাক্তকরণে এক অভাবনীয় পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম। এখন থেকে এ জ্বর রোগীর প্রসাব পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। যা আগে রক্ত, লিভার, মেরুদণ্ড ও প্লিহা থেকে নমুনা নিয়ে শনাক্ত করা হতো। যা রোগীর জন্য অনেক কষ্টদায়ক ও সময় সাপেক্ষ ছিল। সোমবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান অধ্যাপক মনজুরুল করিম। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

কালাজ্বর শনাক্তকরণের এ প্রক্রিয়ায় নমুনা সংগ্রহ থেকে রেজাল্ট পেতে মাত্র তিন ঘণ্টা সময় লাগবে যা আগে লাগত সাত দিনের মতো। এ গবেষণা শেষ করতে খরচ হয়েছে মাত্র সাত লাখ টাকা। সময় লেগেছে সাত বছর। আট বছর থেকে শুরু করে ৮৫ বছর পর্যন্ত বয়সের রোগীদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এ গবেষণা করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক মনজুরুল।

আরো পড়ুন:
> দেশে সশস্ত্র জিহাদ করার পরিকল্পনা করছিল জঙ্গিরা: সিটিটিসি
> শীতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ

লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক মনজুরুল করিম বলেন, কালাজ্বর একটি ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী রোগ। বিশ্বের ৬০টি দেশে এর প্রকোপ রয়েছে। এ রোগে শতকরা ৯৫ শতাংশ রোগী মারা যায়। ইতোপূর্বে এ রোগ নির্ণয়ে রক্তের ইমিউনোক্রোমাটোগ্রাফিক পরীক্ষা এবং অস্থিমজ্জা, যকৃত, প্লিহা, লিম্ফ নোডযের টিস্যু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হতো, যার প্রথমটির রোগ নির্ণয়ে নির্দিষ্টতা কম, আর অন্যটিতে টিস্যু সংগ্রহের সময় মারাত্মক রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বিদ্যমান।

তিনি বলেন, রিয়েল টাইম পিসিআর ভিত্তিক এই মলিকুলার ডায়াগনস্টিক পদ্ধতিটি (Molecular Diagnostics, MDx) সম্পূর্ণ নির্ভুল এবং নিখুঁতভাবে কালাজ্বর সনাক্তকরণের জন্য একটি রোগী-বান্ধব পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে কালাজ্বর শনাক্ত করা সম্ভব যা রোগীর দ্রুত চিকিৎসা এবং রোগ নিরাময়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতির ব্যবহার বাংলাদেশকে কালাজ্বর নির্মূলের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে; যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ২০৩০ সালের মধ্যে উপেক্ষিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ নির্মূলের জন্য নির্ধারিত কার্যপ্রণালীর (2030 NTD Road Map) অন্যতম লক্ষ্য।

আরও বলা হয়, প্রস্রাবের নমুনা ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে যে উল্লেখযোগ্য সংবেদনশীলতা এবং নির্দিষ্টতা পাওয়া গেছে, তা রক্ত বা আরও জটিল নমুনা যেমন অস্থিমজ্জা বা প্লিহার নমুনা ভিত্তিক কালাজ্বর নির্ণয় পদ্ধতিকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে। কিন্তু প্রচলিত পিসিআর এবং নেস্টেড পিসিআর-ভিত্তিক কৌশলগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে, রিয়েল টাইম-পিসিআরের একটি ধাপেই রোগকে অধিক নির্ভুলতা এবং নিশ্চয়তার সঙ্গে শনাক্তকরণে সক্ষম, যা প্যাথলজিস্টদের জন্য কাজের চাপ কমিয়ে দেবে।

প্রসাব থেকে কালাজ্বর শনাক্তকরণ ভারতীয় উপমহাদেশে এই প্রথম উল্লেখ করে অধ্যাপক মনজুরুল বলেন, কালাজ্বর’র MDx-এ ক্লিনিকাল নমুনা হিসাবে প্রস্রাব ব্যবহার করার দৃষ্টান্ত ভারতীয় উপমহাদেশে এই প্রথম এবং এর ফলাফল বিশ্বখ্যাত জার্নাল PLOS Global Public Health-এ প্রকাশিত হয়েছে। এ সময় তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা আশা করছি দেশ এবং দেশের বাইরে কালাজ্বর নির্মূলে এই গবেষণা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, হঠাৎ করে কোনো ভালো ফল আসে না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার ফল। বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর সফলতা আসে। এটি বিশ্বের মধ্যে এই প্রথম আবিষ্কার যা প্রসাব থেকে কালাজ্বর শনাক্ত করা যাবে। খরচও অনেক কম হবে।

এদিকে উপাচার্য এই গবেষণায় সম্পৃক্ত সকলকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে অধ্যাপক মনজুরুল করিমকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান গবেষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া প্রমুখ।

জানুয়ারি ০২, ২০২৩ at ১৬:২৫:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস