প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি ও নানা প্রাসংগিক বিষয়ে।

দীর্ঘ করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা প্রচন্ড ধাক্কা খায়। সব ধরণের ক্লাস বন্ধের পাশাপাশি হয়নি পরীক্ষাগুলোও। তারই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকে শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষাসহ কোন পরীক্ষা হয়নি। এবছর থেকে পুরোদমে ক্লাস এবং মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। নতুন শিক্ষাক্রমে জুনিয়র ও প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষা বাদ দেওয়ায় তা আর হচ্ছেনা। কিন্তু প্রাথমিকে এবার ফিরে এলো বৃত্তি পরীক্ষা। প্রতি স্কুলের মেধাবি শিক্ষার্থী (২০%) বাছাই করে তাদের নিয়ে একদিন একবেলা ‘বৃত্তি’ পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

আগামি ৩০ ডিসেম্বর এই পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনির পাশাপাশি আলাদাভাবে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি ছিল অভিভাবকদের। যদিও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এবার শুরু হয়েছে। আগামিতে হয়তো আরো ব্যাপকভিত্তিক (৬ বিষয়ে ৬ দিন) এই পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। এবার আসি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি ও নানা প্রাসংগিক বিষয়ে। ২০২২ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হলেও এবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রি. তারিখে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

সবশেষ ২০ ডিসেম্বর তারিখের এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নের মান বন্টন নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রি. তারিখ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। এ দিন সকাল ১০টা হতে বেলা ১২টা পর্যন্ত সময়ে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বৃত্তি পরীক্ষার তারিখের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগের এক বিজ্ঞপ্তিতে, বৃত্তি পরীক্ষা ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছিলো। ৫ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা ৪টি বিষয়ের উপর অনুষ্ঠিত হবে।

বিষয়গুলো হলো –

বাংলা, ইংরেজী, গণিত ও বিজ্ঞান। মোট চারটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এসব বিষয়ের পরীক্ষা দুই ঘন্টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি বিষয় থেকে ১৫ টি এমসিকিউ ও একটি রচনামূলক প্রশ্ন থাকবে। এমসিকিউ প্রশ্নের প্রতিটির মান ১ নম্বর আর রচনামূলকে ১০ নম্বর থাকবে। ২০ ডিসেম্বর তারিখে প্রকাশিত প্রাথমিক বৃত্তি ২০২২-এর প্রশ্নের কাঠামো ও মান বন্টন সম্পর্কে সাধারণ নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীকে প্রশ্নপত্র সম্বলিত বুকলেট সরবরাহ করা হবে। বুকলেট এর নির্ধারিত জায়গায় টিক চিহ্ন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে লিখে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পৃথকভাবে উত্তরপত্র সরবরাহ করা হবে না।

প্রতি বিষয়ে ১৫টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকবে যার প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ নম্বর। প্রতি প্রশ্নের চারটি অপশনের মধ্যে সঠিক উত্তরটিতে টিক চিহ্ন দিতে হবে। সঠিক উত্তর নির্বাচনে একাধিক অপশনে টিক চিহ্ন দেওয়া যাবেনা। একাধিক অপশনে টিক চিহ্ন দেওয়া হলে এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য নির্ধারিত নম্বর প্রদান করা হবে না।

★ বাংলা বিষয়ে দুইটি অনুচ্ছেদ দেওয়া থাকবে। দুইটি অনুচ্ছেদ থেকে ৪টি করে ৮টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকবে এবং অপর ৭টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন সমগ্র পাঠ্যপুস্তক হতে থাকবে । একটি রচনামূলক প্রশ্ন থাকবে যার নম্বর ১০ ।

★ গণিত বিষয়ে সমগ্র পাঠ্যপুস্তক হতে ১৫টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকবে। দুটি সমস্যা সমাধানমূলক প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটির মান ৫ নম্বর করে মোট ১০ নম্বর।

★ ইংরেজি বিষয়ে সমগ্র পাঠ্যপুস্তক হতে ১৫টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকবে। একটি বিষয়ে অনুচ্ছেদ লিখতে হবে। যার মান ১০ নম্বর।

★ প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়ে সমগ্র পাঠ্যপুস্তক হতে ১৫টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকবে। দুটি রচনামূলক প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটির মান ৫ নম্বর করে মোট ১০ নম্বর।

প্রাথমিক মূল্যায়ন পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী এগিয়ে থাকবে তাদের মধ্যে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের ৩০ তারিখে এই পরীক্ষা প্রতিটি উপজেলা সদরে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হলে প্রত্যেক বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি,গণিত, প্রাথমিক বিজ্ঞান) সঠিক ও নির্ভূল উত্তর দিতে হবে। এখানে একটি কথা জানিয়ে রাখি, তা হলো মোট নম্বর যার যত বেশি হবে তার বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও ততটুকু বাড়বে। যে জন্য কঠোর পাঠ অনুশীলন ও পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই।

বিশেষ করে এমসিকিউ প্রশ্নগুলোর ব্যাপারে অধিক যত্নবান হতে হবে।কারণ,এখানে সব শুদ্ধ উত্তরের জন্য নম্বর কাটার সুযোগ থাকে না, যা পরীক্ষক দিতে বাধ্য থাকেন। রচনামূলক প্রশ্নগুলোর পাশে দেওয়া পূর্ণমান দেখে তার সাথে সামঞ্জস্য করে উত্তর লিখতে হবে। এখানে অতিরিক্ত বা কম লেখার সুযোগ থাকে না। খেয়াল রাখতে হয় খাতার স্পেস ও সময়ের দিকেও। একটা কথা মনে রাখতে হবে, পরীক্ষার খাতায় যা লিখবে তার মাঝে যতটুকু শুদ্ধ হবে ততটুকুতে অবশ্যই নম্বর পাবে। তাই যা লিখবে তা যেন সঠিক ও শুদ্ধ হয়।

পরীক্ষায় প্রত্যেক বিষয়ে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে কোন প্রশ্নের উত্তর যেন বাদ না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। ভালো রেজাল্ট করতে হলে প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর সঠিক ও যথাযথ হওয়া চাই। কারণ এ পরীক্ষা থেকেই বৃত্তি প্রদানের জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। প্রস্তুতি শেষের দিকে হলেও পরীক্ষা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তার গতি আরো বাড়াতে হবে। নতুন করে শেখার তেমন কিছু নেই। যা পড়েছো, শিখেছো তা ভালভাবে আয়ত্ত করতে প্রচুর অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই। রিভিশনের ওপর থাকতে হবে।

ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত নানা মূল্যায়ন পরীক্ষা ও মডেল টেস্টের প্রশ্নগুলো বারবার দেখা যেতে পারে। করা যেতে পারে পুনর্মূল্যায়ন। এসবের ফলে ছোটখাটো ভুল সংশোধন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। সম্পূর্ণরূপে বাদ রাখতে হবে খেলাধুৃলা, টিভি দেখা, বেড়ানো ইত্যাদি। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতনতা ও কঠোরতা জরুরি।

সন্তানের জীবন সঠিক ও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে মা-বা অভিভাবকের ভূমিকা অপরিসীম যা কোনভাবে এড়ানো যায় না। সে জন্য জীবনের প্রতি পদক্ষেপে সন্তানের শিক্ষা গ্রহণ যেন কোনভাবে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে যেন কোন ধরনের ঘাটতি না থাকে সে ব্যাপারে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি পরীক্ষার্থীর ঘুম,স্বাস্থ্য ইত্যাদির প্রতিও নজর দিতে হবে। পরিশেষে সব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ভালো হোক- এই কামনা করছি।

★ লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট, কাজী আবু মোহাস্মদ খালেদ নিজাম

ডিসেম্বর ২৮.২০২২ at ১৪:২৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর