স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন আজ

ছবি- সংগৃহীত।

ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর – অপেক্ষার পালা শেষ। অবশেষে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে রাজধানীবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল। আর এর মাধ্যমে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবে বাংলাদেশ। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে দেশের প্রথম মেট্রোরেল পরিষেবার প্রথম ধাপের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লাল ফিতা কেটে নগরীর সবচেয়ে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার প্রথম যাত্রী হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সকাল ১১টায় উত্তরার দিয়াবাড়িতে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে ডিএমটিসিএল। অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা। উদ্বোধনের পর রুটের মধ্যবর্তী স্টেশনে কোনো স্টপেজ ছাড়াই উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। পরদিন (বৃহস্পতিবার) থেকে যাত্রীরা মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন। প্রথম কয়েকদিন প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে ১০ মিনিট ধরে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করবে মেট্রোরেলের ট্রেনগুলো।

কারণ নগরবাসী এই নতুন পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত নয়। প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ছয়টি বগিবিশিষ্ট ১০ সেট ট্রেন চলাচল করবে। আপাতত এই রুটে ধীরগতিতে ট্রেন চলবে। এ পর্যায়ে ট্রেন চলবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। পরে চলাচলের সময় বাড়ানো হবে এবং চাহিদা অনুযায়ী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। সম্পূর্ণভাবে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হলে প্রতি সাড়ে তিন মিনিট অন্তর একটি ট্রেন চলবে।

আরো পড়ুন :
>বাংলাদেশের খেলা থাকলে আইপিএলে যেতে পারবে না কেউ: পাপন
>ঝিনাইদহে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার, ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
>ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বালু তোলার দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকার মেট্রোরেল প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৬ জুন প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাপানি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা (জাইকা) এবং বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ উদ্বোধনের প্রায় সাড়ে ৬ বছর পর আজ প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করছেন। আজ মেট্রোরেলের উদ্বোধন হলেও এখনই পুরোদমে যাত্রী পরিবহন করা হবে না।

মেট্রোরেলের টিকেট কাটা, দরজা খোলা ও বন্ধ হওয়া, স্টেশনে প্রবেশ ও বাহির হওয়াসহ ব্যবহারের জন্য প্রায় সব প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চলবে। তাই মেট্রোরেল ব্যবহারের জন্য সাধারণ মানুষের সচেতনতার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। যাত্রীদের সব কিছুতে অভ্যস্ত করার জন্য কিছুটা সময় দিতে হবে।

কিছুদিন আগে মেট্রোরেল ব্যবহারের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় ২০০ মানুষকে টিকেট কিনতে ও র‌্যাপিড পাস দিয়ে স্টেশনে ছেড়ে দেয়া হয়। তখন দেখা গেছে মাত্র দুই থেকে তিনজন মেট্রোরেল ব্যবহারের জন্য টিকেট কেনাসহ পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছে। অন্যরা কেউ মেট্রোরেল ব্যবহারে অভ্যস্ত না। এ কারণে যাত্রীদের সচেতনতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

আরো পড়ুন :
>বাংলাদেশের খেলা থাকলে আইপিএলে যেতে পারবে না কেউ: পাপন
>ঝিনাইদহে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার, ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
>ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বালু তোলার দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। মেট্রোরেলের ১২টি কোচ চলাচলের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে শুরুতে ১০টি ট্রেন চলাচল করবে। এখন দুটি ট্রেন ব্যাকআপ হিসেবে ডিপোতে রাখা হবে। রেলের আরো কোচ জাপান থেকে দেশে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের পর প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা মেট্রোরেল চলাচল করবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ট্রেন চলবে, কোনো স্টেশনে থামবে না। ১০ মিনিট পর পর একটি ট্রেন ছাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন দিনে একবার ব্যবহারের টিকেট ও র‌্যাপিড পাস দুটিই ২৯ ডিসেম্বর (আগামীকাল) থেকে পাওয়া যাবে। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে স্টেশন থেকে র‌্যাপিড পাস নেয়া যাবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক এবং যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক বলেন, যানজট নিরসনে মেট্রোরেল বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। তবে পুরো শহরের যানজট কমানো সম্ভব হবে না। মেট্রোরেলের পরিপূর্ণ একটি নেটওয়ার্ক যখন হবে তখন মূল্যায়ন করা যাবে।

তিনি বলেন, মেট্রোরেলের কাছাকাছি বসবাসরত বাসিন্দারা অবশ্যই যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য ও নির্ভরতা পাবেন। কম সময়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবেন। মেট্রোরেল পিক আওয়ারে চাহিদা অনুযায়ী বগি ও গতি বাড়িয়ে যাত্রীদের এক জায়গা থেকে অন্য যায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। মেট্রোরেল থেকে নামার পর যাত্রীদের কয়েকটি বিআরটিসি বাসের উপর নির্ভর করলে হবে না। মেট্রোরেলে আসা-যাওয়ার জন্য বাস রুটের সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

আরো পড়ুন :
>বাংলাদেশের খেলা থাকলে আইপিএলে যেতে পারবে না কেউ: পাপন
>ঝিনাইদহে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার, ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
>ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বালু তোলার দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

এদিকে, এমআরটি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় পুলিশের একটি বিশেষ টিম গঠন করা হবে। তবে এখনো এই টিম চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। এমআরটি পুলিশ ইউনিট নামে ৩৫৭ জন সদস্য নিয়ে পুলিশের বিশেষ ইউনিট গঠিত হবে। ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা এই ইউনিটের দায়িত্বে থাকবেন। এখনই চূড়ান্ত অনুমোদন না পেলেও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ সদস্য নিয়ে নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেবে। তবে সরকার দ্রুত এই বিশেষ ইউনিট অনুমোদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের প্রথম অংশ। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে এমআরটি-৬ নামের মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এই অংশের এখন শতভাগ নির্মাণকাজ শেষ। আগারগাঁও থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের দ্বিতীয় অংশ ২০২৪ সালে চালু হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে জাপানের সহযোগিতায় কাজ এগিয়ে চলছে।

৫০ টাকার স্মারক নোট : বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে ৫০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট মুদ্রণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার স্বাক্ষরিত এ স্মারক নোটের বাঁ দিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি এবং পটভূমিতে মেট্রোরেলের ছবি সংযোজন করা হয়েছে। নোটের ডান দিকে জলছাপ হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি’, ‘৫০’ এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ মুদ্রিত রয়েছে।

আরো পড়ুন :
>বাংলাদেশের খেলা থাকলে আইপিএলে যেতে পারবে না কেউ: পাপন
>ঝিনাইদহে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার, ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
>ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বালু তোলার দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

শিরোনামে লেখা রয়েছে ‘বাঁচবে সময়, বাঁচবে পরিবেশ, যানজট কমাবে মেট্রোরেল’। নোটের অপর পাশে মেট্রোরেলের আরেকটি ছবি সংযোজন করা হয়েছে। ইংরেজিতে ‘মুভিং পিপল, সেভিং টাইম এন্ড এনভায়র্নমেন্ট’ মুদ্রিত রয়েছে। নোটের উভয় পৃষ্ঠে ভার্নিশের প্রলেপ সংযোজন করা হয়েছে।

ডিসেম্বর ২৮.২০২২ at ০৯:৪৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এমএইচ