যানজটে ঢাকায় বছরে ক্ষতি ৮৭ হাজার কোটি টাকা

ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা শহরে যানজটের কারণে বছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপির ২.৫ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উন্নয়নবিষয়ক বার্ষিক সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর একটি হোটেলে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘ঢাকার অসম সম্প্রসারণ ও এর পরিণতি’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) পরিচালক আহমেদ আহসান।

আহমেদ আহসান যানজটের কারণে জিডিপির ২.৫ শতাংশ ক্ষতির যে তথ্য দিয়েছেন তাকে টাকায় রূপান্তর করা হয়েছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তি ধরে সর্বশেষ জিডিপির আকার থেকে। চলতি অর্থবছরে জিডিপির আকার ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা।

আহমেদ আহসান জানান, বাংলাদেশে অন্যান্য শহরে উন্নয়নের ঘাটতি থাকায় সব কিছু এখন ঢাকাকেন্দ্রিক। ফলে এখানে যানজটসহ নানা অব্যবস্থাপনা আছে। ঢাকার অতিরিক্ত বৃদ্ধি সার্বিকভাবে নগর উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রতিবছর এই ক্ষতির পরিমাণ দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। এ ছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে ৫.৮ শতাংশ।

আহমেদ আহসান বলেন, বাংলাদেশের যত মানুষ শহরে বাস করে, তার বেশির ভাগেরই বসবাস ঢাকায়। প্রধান শহরগুলোতে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩১.৯ শতাংশ বসবাস করে। ঢাকায় বাস করে ১১.২ শতাংশ। ১০ লাখের মতো মানুষ বাস করে এমন শহর মাত্র পাঁচটি।

আরো পড়ুন :
>সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শেরগুল, সম্পাদক রওনক
>ঝালকাঠিতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিকান্ডের আজ এক বছর পূর্ন হলো

মেট্রোরেল ঢাকাবাসীর কাছে এখন আর স্বপ্ন নয়। ট্রায়াল রান এরই মধ্যে দেখে ফেলেছে নগরবাসী। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রোরেল লাইনটি এমআরটি-৬ নামে পরিচিত। উভয় দিকের ২৪টি ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী এবং দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী বহন করতে পারবে।

প্রতিটি ট্রেনে ছয়টি কোচ থাকবে- যা ভবিষ্যতে আপগ্রেড করা যেতে পারে এবং প্রতিটি ট্রেন সর্বাধিক দুই হাজার ৩০৮ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পৌঁছানো যাবে মাত্র ৪০ মিনিটে- যা যানজট কমাবে এবং কর্মঘণ্টা ও সময় বাঁচাবে। তবে আগামী বছর মেট্রোরেল লাইন-৬ পূর্ণমাত্রায় চালু হলে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে প্রায় ২০ শতাংশ।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক বলেন, আপনারা নিশ্চয় দেখছেন সড়ক পথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথে বসে থাকতে হয়। যেমন উত্তরা থেকে কমলাপুরে কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারবে না কত সময় নিয়ে পৌঁছানো যায়। তবে মেট্রোরেলে বলা যায়- ৩৮ থেকে ৪০ মিনিটে পৌঁছানো যাবে।

‘অপচয়ের এসব তথ্য ফিজিবিলিটি স্টাডিতে বের হয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই মেট্রোরেল নির্মিত। মেট্রোরেল-৬ এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও ক্ষতির মাত্রা কমে আসবে। যখন পুরোদমে ছয়টি মেট্রোরেল চালু হবে তখন জটলাজনিত কারণে ঢাকায় ক্ষতির পরিমাণ থাকবে না বলা যায়।

আরো পড়ুন :
>সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শেরগুল, সম্পাদক রওনক
>ঝালকাঠিতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিকান্ডের আজ এক বছর পূর্ন হলো

আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ২৪ সেট মেট্রোরেল ট্রেন নিয়ে শুরু হবে এমআরটি লাইন-৬ এর যাত্রা। প্রতি সেট মেট্রোরেল ট্রেনে প্রাথমিকভাবে ছয়টি করে কোচ থাকবে, যাতে পরবর্তীকালে আরো দুটি কোচ যোগ করে কোচ সংখ্যা আটটিতে উন্নীত করার ব্যবস্থা থাকবে। মেট্রোরেলের সুষ্ঠু পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে থাকবে একটি অত্যাধুনিক অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার। যাত্রীদের সুবিধার্থে মেট্রোরেলের স্টেশনগুলো হবে

এলিভেটেড। টিকেট কাউন্টার ও অন্যান্য সুবিধা থাকবে দোতলায় এবং ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম থাকবে তিন তলায়। প্রত্যেকটি মেট্রোরেল স্টেশনে লিফট, চলন্ত সিঁড়ি, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণ, প্রবেশপথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকেট সংগ্রহের মেশিনসহ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সর্বাধুনিক ব্যবস্থা থাকবে। র‌্যাপিড পাস ব্যবহার করে যাত্রীরা নির্ঞ্ঝাটে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন।

যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করা হবে। নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, প্রতিবন্ধী, ধনী-গরিব সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে ও আরামদায়ক পরিবেশে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন। পরিবেশবান্ধব মেট্রোরেলের কোচগুলো হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। থাকবে সুবিন্যস্ত আসন ব্যবস্থা। যাত্রাসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সংবলিত ডিসপ্লে-প্যানেল ইত্যাদি। হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীদের জন্য প্রতিটি ট্রেনের কোচগুলোতে থাকবে নির্ধারিত স্থান। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে মেট্রোরেলে থাকবে নিজস্ব বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা।

সড়কের মিডিয়ান বরাবর ভূমি থেকে প্রায় ১৩ মিটার ওপর দিয়ে নির্মিত এলিভেটেড মেট্রোরেলের কম্পন নিয়ন্ত্রণের জন্য থাকবে ফ্লোটিং স্ল্যাব ট্র্যাক। শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য শব্দ নিরোধক দেওয়াল স্থাপন করা হবে। এ ব্যবস্থাগুলো মেট্রোরেলের রুটে অবস্থিত ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে সম্ভাব্য সব ধরনের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা করবে। দিনের ব্যস্ততম সময়ে প্রতি সাড়ে চার মিনিট পরপর প্রতিটি স্টেশনের উভয় দিকে মেট্রোরেল থামবে।

রাজধানীর যানজট নিরসনে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ সালে যাত্রী পরিবহনে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় দৈনিক গড়ে তিন কোটি ট্রিপ বা লোক চলাচল ছিল (একজন যতবার চলাচল করে ততটা ট্রিপ তৈরি হয়)। বাড়তি যাত্রীর চাপ সামলাতে ২০২৫ সালে ৪ কোটি এবং ২০৩৫ সালে পাঁচ কোটি ট্রিপ (বা লোক চলাচলের অবস্থা) তৈরি হবে। এর বাইরেও আছে পণ্য পরিবহন। ফলে ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের জরিপের ভিত্তিতে পরিকল্পিত রুটের সক্ষমতা ২০২৫ সালের পরে আংশিক অকেজো হয়ে পড়তে পারে। এতে স্বস্তি দেবে মেট্রোরেল।

আরো পড়ুন :
>সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শেরগুল, সম্পাদক রওনক
>ঝালকাঠিতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিকান্ডের আজ এক বছর পূর্ন হলো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক, পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক বলেন, মেট্রোরেল আরো আগে নির্মাণ করার দরকার ছিল। তারপরও আমরা এটা করতে পেরেছি। এমআরটি-৬ এর কারণেও অনেক ক্ষয়ক্ষতি কমে আসবে। কারণ এই পথে যাত্রী বেশি। আগারগাঁও পর্যন্ত খুব বেশি সুফল মিলবে না। তবে মানুষ মেট্রোরেলে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হবে। উত্তরা থেকে কমলাপুর এটা এটা বেস্ট করিডোর।’

তিনি বলেন, ‘ধাপে ধাপে কাজ করা হচ্ছে ও উদ্বোধন হচ্ছে। এটার ভালো দিক আছে। এতে পদ্মা সেতুর মতো হুড়োহুড়ি হবে না। উত্তরা থেকে আগারগাঁও ৯টি স্টেশনের মধ্যে ৭টি স্টেশনে চালু করা হবে। অপারেশন ডিফিকাল্ট কাটিয়ে দুই মাস পরে পুরো লোড নিয়ে চলবে।’

২০৩০ সালের মধ্যেই রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ মিলিয়ে ছয়টি রুটে চলবে মেট্রোরেল। এরই মধ্যে লাইন সিক্সের আওতায় শেষের পথে উত্তরা থেকে কমলাপুর অংশের কাজ। এরপরই লাইন এক ও পাঁচের কাজও শুরু হবে চলতি বছর। মাঠপর্যায়ে কাজ চলছে বাকিগুলোর। তবে ২০৩০ সালের আগে রাজধানীতে চলাচল নির্বিঘ্নে করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে ডিএমটিসিএলকে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

লাইন সিক্সের আওতায় উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশের ভায়াডাক্ট উঠে গেছে শতভাগ। ২৮ ডিসেম্বর বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও। আসছে বছর বর্ধিত হবে মতিঝিলে। তবে ডিএমটিসিএলের আওতায় ঢাকা, সাভার, নারায়ণগঞ্জ মিলিয়ে রয়েছে আরো পাঁচটি প্রকল্প। সবার আগে লাইন ছয়ে চলছে একেবারে শেষ ভাগের কাজ। সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের কাজও। উড়াল-পাতাল মিলিয়ে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর ও পূর্বাচল দুটি রুটে হবে লাইন ওয়ান, দৈর্ঘ্য ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। শেষ হবে ২০২৬ সালে।

আরো পড়ুন :
>সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শেরগুল, সম্পাদক রওনক
>ঝালকাঠিতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিকান্ডের আজ এক বছর পূর্ন হলো

হেমায়েতপুর থেকে ভাটারায় হবে লাইন ফাইভ-এর নর্দান রুটের কাজ। এটিও হবে উড়াল-পাতাল মিলিয়ে। একই কায়দায় হবে এ লাইনের সাউদার্ন রুট গাবতলী থেকে দাসেরকান্দি। গাবতলী হয়ে চট্টগ্রাম রোড লাইন টু শেষ হবে ২০৩০ সালে। কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে ১৬ কিলোমিটারের উড়াল মেট্রোরেল লাইন ফোরেরও লক্ষ্য একই সময়ে। সিক্সের পর ফাইভ আর ওয়ানের কাজ মাঠে গড়াবে এ বছরই।

ডিসেম্বর ২৫.২০২২ at ০৯:৩৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর