জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে পাবলিক লাইব্রেরী

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রশাসনের উদ্যোগে ‘উপজেলা প্রশাসন পাবলিক লাইব্রেরি’। প্রতিদিন এই পাঠাগারটিতে পাঠকরা আসছেন বই পড়তে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয় সকল শ্রেনীর পাঠকদের জন্য। এক সময় এই চিলমারী বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্য চলত। বাংলার আটটি বৃহৎ নদীবন্দরের অন্যতম ছিল চিলমারী বন্দর। ভারতের কোচবিহার, আসাম, মেঘালয় এবং চীন ও মিয়ানমার থেকে আসত পণ্যবাহী জাহাজ। আসাম ও কলকাতা রুটের মাঝে দাঁড়িয়ে এ চিলমারী বন্দর। পাটের জন্যও বিখ্যাত ছিল চিলমারী বন্দর। এই বন্দরে পাটের কারবার শুরু হয় ত্রিশের দশকে। এসময় জুট ট্রেডিং কোম্পানিসহ প্রায় ৩০টি পাটকল ও কোম্পানি এখানে কারবার জুড়ে বসে।

আরো পড়ুন:
> যুদ্ধ চাই না-স্যাংশনস চাই না, দেশের স্বার্থ বিলিয়ে দেবো না: প্রধানমন্ত্রী
> ক্ষেতলালে স্বাধীনতার ৫১ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

“ওকি গাড়িয়াল ভাই হাকা গাড়ী তুই চিলমারীর বন্দরে” বিখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের স্মৃতি বিজড়িত সেই চিলমারীতে প্রশাসনের উদ্যোগে একটি পাঠাগার চালু করা হয়েছে। এবারে প্রশাসনের এমন উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানিয়েছেন বই প্রেমিরা। উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ছুটছেন পাঠাগারে। এই প্রথমবারের মতো এমন ভাবে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে চিলমারীর লাইব্রেরীটি। পাঠাগারটি সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকলেও অন্যদিনগুলোতে সকাল নয়টা থেকে বিকেল চার পর্যন্ত এই লাইব্রেরীটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।পাঠাগারে বই প্রেমিরা বিভিন্ন নিজেদের পড়ার বই উপহার দিচ্ছেন।

তবে শুরু বেশকিছু বই নিয়ে পাঠাগারটির কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। বই পড়তে আসা ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী মোছা. জাহিন বলেন, আমরা এর আগে এমন পাঠাগার দেখি নাই। আমরা এখানে সাচ্ছন্দ্যে বই পড়তে পারি। চেষ্টা করি অবসর সময় পেলে প্রায় প্রতিদিন আসার। কলেজ পড়ুয়া শাহানাজ, সুমি বলেন, আমরা বান্ধবীরা মিলে সময় পেলে লাইব্রেরীতে বই পড়তে চলে আসি। যদিও এখানে নতুন অবস্থায় বইয়ের সংখ্যা কম। আমরা চাই এই লাইব্রেরীতে আরও বই রাখতে। দশম শ্রেনীর তিন বন্ধু হাসিব, সোহরাব ও মিজানুর বলেন, এই লাইব্রেরীতে আরও বই লাগবে। পাশাপাশি পত্রিকার ব্যবস্থাও করা দরকার।

দেশের বিখ্যাত সব ব্যক্তিদের বই থাকলে আমরা আরও অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারব। পাঠাগারটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন এমপি উদ্বোধন করেন। এই লাইব্রেরিটি উপজেলা পরিষদ এর ভিতরে দোতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায়। সেখানে দুটি কক্ষে চলে পাঠাগারটি কার্যক্রম। ছেলে ও মেয়েদের জন্য রয়েছে দুটি আলাদা কক্ষ। তাই নয় এটি পরিচালনা করতে বেসরকারিভাবে লাইব্রেরিয়ান পদে একজন কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যাঁকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামান্য সম্মানি দেয়া হয়। উপজেলা প্রশাসন পাবলিক লাইব্রেরীর লাইব্রেরীয়ান সুমিত্রা রানী জানান, লাইব্রেরী উদ্বোধনের পর থেকেই এখন প্রতিদিন পাঠকরা আসেন বই পড়তে।

তবে পাঠকের মধ্যে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। আপাতত বইয়ের সংখ্যা সীমিত তবে, ইউএনও স্যার কে জানিয়েছি তিনি আরও কিছু বই দেবেন। লাইব্রেরীটি শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকে। বাকী দিন গুলোতে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে বলে জানান। এমন ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগে প্রশংসায় পঞ্চমুখ পাঠাগারটির বাস্তব রুপ দেয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বহুবছর পর উন্মুক্ত বই পাঠ করার সুযোগ করে দেয়ায়। এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন পাঠক,পাঠিকা সহ সুশিল সমাজের মানুষ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, ভাওয়াইয়া সাংস্কৃতির রাজধানী ও আব্বাস উদ্দিনের স্মৃতি বিজড়িত চিলমারীতে শিক্ষার অনগ্রসরতা মেনে নেওয়া যায়না। তাই শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই উপজেলা প্রশাসন পাবলিক স্থাপন করা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে আলোকিত করুক চিলমারী এবং এখানকার মাটি ও মানুষকে। এভাবেই বিশ্ব সভ্যতায় আলো ছড়াক আমাদের প্রিয়তম উপজেলা চিলমারী।

ডিসেম্বর ২৪, ২০২২ at ১৬:৪০:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস