ছাপাখানায় শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা, নিম্নমানের বইয়ে সয়লাব

ছবি- সংগৃহীত

নতুন বছরে বই উৎসবের বাকি আর ১১ দিন। বছরের শেষ সময়ে তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন ছাপাখানার শ্রমিকরা। কাগজ সংকট প্রকট হওয়ায় এবার পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুতে বেশ পিছিয়ে ছাপাখানাগুলো। প্রাথমিক পর্যায়ের বই ছাপার কাজ শুরু করা হয়েছে মাত্র সপ্তাহ আগে। বিদেশ থেকে ভার্জিন পাল্প ও কাগজ আমদানি বন্ধ থাকায় অধিকাংশ বই ছাপা হচ্ছে নিম্নমানের কাগজে। এসব বই শিক্ষার্থীরা কতদিন যত্নসহকারে ব্যবহার করতে পারবে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা মনিটরিং বাড়িয়েছে, নিম্নমানের অনেক বই বিনষ্টও করা হয়েছে। আর ছাপাখানার মালিকরা বলছেন, তারা এনসিটিবির অনুমোদন নিয়েই এমন কাগজে বই ছাপছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাতুয়াইল কলেজ রোডের ব্রাইট প্রিন্টিং প্রেসে বই ছাপানোর কাজে ব্যস্ত কর্মচারীরা। প্রাথমিকের দ্বিতীয় শ্রেণির ইংরেজি বই ছাপার কাজ চলছে তখন। বইয়ে ব্যবহৃত কাগজের কোনো ঔজ্জ্বল্য নেই। ছাপা হচ্ছে ম্যাড়মেড়ে নিউজপ্রিন্ট কাগজে। কাগজ যে মানসম্মত নয় তা যে কেউ বুঝবে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির সাতটি প্রেস রয়েছে। তিনটির নামে কাজ নিয়ে বাকিগুলোতে নিম্নমানের বই তৈরির অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

প্রেসের মধ্যে দেখা যায়, প্রাথমিকের প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির বেশ কিছু বই প্রবেশমুখে রাখা হয়েছে। সেসব বইয়ে তেমন কোনো ত্রুটি দেখা যায়নি। নিম্নমানের কাগজে যেসব বই তৈরি করা হচ্ছে তা প্রকাশ্যে রাখা হচ্ছে না। আগামী বছর শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হবে এসব বই। এসময় তড়িঘড়ি করে প্রেসে আসেন ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম। নিম্নমানের কাগজ দিয়ে কেন বই তৈরি করা হচ্ছে প্রশ্ন করলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে তারা এই কাগজে বই তৈরি করছেন। তাদের অনুমোদন ছাড়া খারাপ কাগজ ব্যবহার করা হয় না। মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ৩৮ লাখ আর প্রাথমিকের ১০ লাখ বই তৈরির অর্ডার পেয়েছেন তারা। শিডিউল মোতাবেক তারা মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের বই ছাপাচ্ছেন।

আরো পড়ুন :
>কুবিসাসের দায়িত্ব হস্তান্তর এবং প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
>সিনেমায় নতুন জুটি হয়ে আসছেন ভাবনা-রোশান
>৩৪ হাজার টাকা বেতনে হীড বাংলাদেশে চাকরি

ব্রাইট প্রিন্টিং প্রেসের স্বত্বাধিকারী এস এম মহাসীন বলেন, এবছর কাগজের বড় সংকট তৈরি হয়েছে। ভালোমানের কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে কিছু খারাপ কাগজ ব্যবহার করা হতে পারে। তবে ইন্সপেকশন এজেন্সি ও এনসিটিবির পরিদর্শকদের অনুমোদন নেওয়ার পর সেসব কাগজ বই ছাপানোর জন্য দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মাধ্যমিকের ৩৮ লাখ বইয়ের মধ্যে ৫০ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকের বই দু’দিন ধরে ছাপা শুরু করা হয়েছে। ১০ লাখ বইয়ের মধ্যে দু’দিনে লক্ষাধিক ছাপা হয়ে গেছে। নিম্নমানের কাগজ দিয়ে বই ছাপানোর কথা নয়। কেউ যদি সেটি করে তবে সেটি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

পাশেই ফরাজী প্রিন্টিং প্রেস মাধ্যমিকের ৩৭ লাখ আর প্রাথমিকের দুই লাখ বই তৈরির কাজ পেয়েছে। মাধ্যমিকের ৩০ লাখ কপি এরই মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দু’দিন ধরে প্রাথমিক পর্যায়ের বই তৈরির কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তিনি বলেন, আমরা তিনদিন আগে সাত ট্রাক মানসম্মত কাগজ কিনে প্রাথমিকের বই তৈরির কাজ শুরু করেছি। বর্তমানে কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আমরা ভালোমানের কাগজ ছাড়া নিচ্ছি না।

নিম্নমানের কাগজে বই তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যারা নিম্নমানের কাগজ দিয়ে বই দেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের মনিটরিং আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। কোনোভাবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, উপজেলা পর্যায়ে বই পাঠানোর আগে ইন্সপেকশন এজেন্সি ও এনসিটিবির মনিটরিং টিম ছাড় করছে। কেউ কেউ আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অধিক লাভের আশায় খারাপ কাগজ ব্যবহার করছে। সেটি ধরা অনেক কঠিন হয়ে যায়। তারপরেও যাদের এ ধরনের বই পাওয়া যাচ্ছে তা কেটে বাতিল করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন :
>কুবিসাসের দায়িত্ব হস্তান্তর এবং প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
>সিনেমায় নতুন জুটি হয়ে আসছেন ভাবনা-রোশান
>৩৪ হাজার টাকা বেতনে হীড বাংলাদেশে চাকরি

এ পর্যন্ত সাত প্রেসের ৫০ হাজারের মতো বই বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে একটি প্রেসের কাগজ।এরপরও বই ডেলিভারি দেওয়ার পরবর্তী দুই মাস পর্যন্ত ওয়ারেন্টি পিরিয়ড থাকে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, বই ডেলিভারি দেওয়ার পর প্রেস মালিকদের ২০ শতাংশ বিল আটকে রাখা হয়। এ সময়ের মধ্যে কারও নিম্নমানের বই চিহ্নিত হলে তাকে জরিমানা করা হয়।

সূত্র – জাগো নিউজ

ডিসেম্বর ২১.২০২২ at ১১:১৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর