সাড়ে ৭ লাখ কোটির বাজেট

ছবি- সংগৃহীত

বৈশ্বিক সংকট, অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ ও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করেছে অর্থ বিভাগ। এটি চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। মঙ্গলবার ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ এটি নির্ধারণ করা হয়। নির্বাচন সামনে রেখে নতুন বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ থাকছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থনৈতিক নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বাজেটের ঘাটতি হবে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালিভাবে ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ এবং ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির’ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর আড়াইটায় বৈঠক শুরু হয়। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে বৈঠক শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৩টায়।

সূত্রমতে, ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ বিশ্লেষণ করে দেখা হয়, নানা কারণে আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে ভর্তুকি খাতে। এজন্য এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়। যদিও চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় ধরা আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এই মহূর্তে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা, রেমিট্যান্স কমে যাওয়া, রাজস্ব আয় নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। যদি আগামী দিনগুলোয় এসব সূচক ঠিক না হয়, তাহলে অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে ভর্তুকি আরও বেড়ে যাবে।

আরো পড়ুন :
>কুবি আইটি সোসাইটির প্রোগ্রামিং বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
>কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম, সম্পাদক ইনান

এজন্য ওই বৈঠকে রাজস্ব আয় বাড়ানো, রেমিট্যান্স বাড়াতে সব ধরনের পদক্ষেপসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, এ বছর জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে কিছুটা সমন্বয় করা হয়েছে। ভর্তুকির চাপ কমাতে আগামী দিনগুলোয় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্য একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিলিয়ে সমন্বয় করা হবে।

এছাড়া চলতি বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠকে ডলার রেট নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে অপ্রয়োজনীয় আমদানি বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে আগামী ছয়মাস আরো বেশি কৃচ্ছ্রতা সাধনের পথ অবলম্বন করতে হবে। ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনা এবং সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর মতো কর্মসূচি হাতে নেয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ করতে চায় সরকার।

এ লক্ষ্যে বাজেটের আকার ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাজেটের আকার সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া অর্থমন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং রাজনৈতিক অঙ্গীকার পূরণ করতে হলে বাজেটের আকার আরো বাড়ানো দরকার। কোনো কোনো কর্মকর্তা বাজেটের আকার ৮ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এ যাবতকালে কখনোই বাজেটের আকার ১০-১২ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়নি। অন্যদিকে কৃচ্ছ্রতা সাধনে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ও কম প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন :
>কুবি আইটি সোসাইটির প্রোগ্রামিং বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
>কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম, সম্পাদক ইনান

আগামী অর্থবছরের জন্য ভোক্তাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ব মন্দা মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে অর্থ বিভাগ। এছাড়া চলতি বাজেটের বড় দুটি বিষয়ে পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বৈশ্বিক সংকটের মুখে চাপা থাকা অর্থনীতিতে দ্রব্যমূল্য বাড়ছেই। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশের ওপর এবং মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি- প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হচ্ছে।

মন্দা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বিশ্ব মন্দা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সরকার। নতুন বছরের শুরু থেকেই বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা জেঁকে বসতে পারে বলে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পূর্বাভাস দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাংকও তাদের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানিয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতি ২০২৩ সালে মন্দার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। মূলত দুবছরের করোনা মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরেই বিশ্বে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা- যা মোকাবিলায় দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার হিমশিম খাচ্ছে।

দেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে মন্দার আভাস দেখা দিয়েছে। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় কষ্ট বেড়েছে সাধারণ মানুষের। সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিলাসদ্রব্য আমদানি সীমিত করাসহ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি আমদানি ব্যয় কমিয়ে এনেছে। এরপর ডলার সংকট দূর হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় জানান, বাংলাদেশের সামনে কয়েকটি বিষয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসবে। এর মধ্যে রপ্তানি আয় কমে যাওয়া, আমদানিকৃত খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে তার সঙ্গে দেশের বাজারের সমন্বয় সাধন করা এবং রেমিট্যান্স কমার মতো ঝুঁকি রয়েছে।

আরো পড়ুন :
>কুবি আইটি সোসাইটির প্রোগ্রামিং বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
>কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম, সম্পাদক ইনান

তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি মন্দায় পড়লে বাংলাদেশের রপ্তানিতে এর প্রভাব পড়বে কারণ তৈরি পোশাকের চাহিদা কমবে। তবে সঠিকভাবে এগুতে পারলে এখানে কিছুটা ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। কারণ বাংলাদেশ যেসব পোশাক রপ্তানি করে সেগুলো খুব উচ্চ মূল্যের নয়। জনশক্তি রপ্তানি কমে গেলে রেমিট্যান্স কমবে। এ কারণে দক্ষ-অদক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। এখন থেকে উদ্যোগী হলে মন্দা মোকাবিলা সহজ হবে।

ডিসেম্বর ২১.২০২২ at ০৯:৫৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর