৩২০ বিলিয়ন ডলার সামরিক বাজেট, কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে জাপান?

ছবি- সংগৃহীত

এক সময় যা চিন্তাই করা যেত না, এখন সেটাই করছে জাপান। সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও আধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে এশিয়ার শিল্পোন্নত দেশটি। সেই লক্ষ্যে নজিরবিহীন সামরিক ব্যয় নির্ধারণ করেছে তারা। দেশটি সামরিক খাতে আগামী ৫ বছরে ৩২০ বিলিয়ন ডলার (৪৩ ট্রিলিয়ন ইয়েন) ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছে। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর সামরিক ব্যয়ে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে জাপান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের জেরসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় সংকোচনের নীতি অনুসরণ করেছে। তবে ২০১২ সালে শিনজো আবে ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতিবছর সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছেন। এ নিয়ে দেশটির অনেকে ক্ষুব্ধ। কিন্তু প্রতিরক্ষা ব্যয় নিয়মিত বাড়ানো হচ্ছে। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) একটা নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল অনুমোদন করেছে জাপান। এটাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিরক্ষা খাতে দেশটির সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন এই নিরাপত্তা কৌশলের আওতায় সামরিক ব্যয় ব্যাপকভাবে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

জাপানের মন্ত্রিসভা তিনটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে যাতে কৌশলগত পরিবর্তনের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত, জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএস), দ্বিতীয়ত, জাতীয় প্রতিরক্ষা কর্মসূচি নির্দেশিকা ও মধ্য-মেয়াদী প্রতিরক্ষা কর্মসূচি। এসব কৌশল বাস্তবায়নে এখন জাপানের নিরাপত্তা ব্যয় ন্যাটোর চাওয়া অনুযায়ী জিডিপির ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০২৭ সালের মধ্যে জিডিপির ২ শতাংশ করা হবে।

আরো পড়ুন :
বাংলাদেশি সমর্থকদের মেসির স্ত্রী-মায়ের বিশেষ বার্তা
জাবিতে মার্কেটিং অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটি গঠন
মহান বিজয় দিবস ২০২২ উদযাপন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা

চলতি মাসের শুরুর দিকে জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসুকাজু হামাদা বলেন, ২০২৩-২০২৭ মেয়াদে সামরিক ব্যয় ৫০ শতাংশ বাড়াতে একটি বাজেট পরিকল্পনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশিদা। জাপানের প্রতিরক্ষা যথেষ্ট শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম সংযোজন করা হবে এবং তা দৃঢ়ভাবে সুরক্ষিত করতে পরিকল্পিতভাবে কাজ চলছে। তো, প্রশ্ন হচ্ছে, বিশাল এই সামরিক ব্যয়ে তৈরি করা সেনাবাহিনী দিয়ে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে জাপান? এ প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব নেই। তবে দেশটির নতুন সামরিক নীতি ও কর্মকর্তাদের কথাবার্তা থেকে তা কিছুটা আঁচ করা যায়।

অনেক দিন থেকেই যেন এক ছায়া-শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে জাপান। আর এই লড়াইয়ে প্রতিবছর জাপানের জন্য বেড়ে চলেছে প্রতিরক্ষা ব্যয়। অতীতে শত্রুকে নিয়ে কিছুটা রাখঢাক লক্ষ করা গেলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিন্তু ইনিয়ে–বিনিয়ে হলেও শত্রুটা কে, তার নাম অনেকটা প্রকাশ্যেই বলা হচ্ছে। এই শত্রু হচ্ছে চীন ও উত্তর কোরিয়া। এর সঙ্গে আসছে রাশিয়ার নামও।

জাপানের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সম্প্রতি বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, চীনই বর্তমানে জাপানের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় কৌশলগত হুমকি হয়ে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খুব শিগগিরই ৩২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের সামরিক কর্মযজ্ঞ শুরু করবে তারা। এর মধ্যে চীনে আঘাত হানতে সক্ষম এমন সব ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত করা হবে। জাপানি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তারা স্থল থেকে উৎক্ষেপিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপক উৎপাদনের দিকে যাবে। টাইপ-১২ ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসর উন্নত করবে। এমনকি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিকাশে কাজ করবে।

ফুমিও কিশিদার সরকার বলছে, রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযান বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা ও যুদ্ধের আশঙ্কা উসকে দিয়েছে। তারা আরও বলছেন, ইউক্রেনে অভিযান চালিয়ে রাশিয়া এমন নজির তৈরি করেছে, যাতে উৎসাহিত হয়ে তাইওয়ানে হামলা চালাতে পারে চীন। এর ফলে এই অঞ্চলে জাপানি দ্বীপগুলোর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। যা পরিণামে তাদের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

আরো পড়ুন :
বাংলাদেশি সমর্থকদের মেসির স্ত্রী-মায়ের বিশেষ বার্তা
জাবিতে মার্কেটিং অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটি গঠন

পূর্ব চীন সাগরে সেনকাকু দ্বীপমালা ঘিরে জাপান ও চীনের সম্পর্ক ক্রমশ জটিল আকার নিতে শুরু করেছে। জনবসতিহীন সেই দ্বীপগুলো জাপানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং তারা সেগুলোকে দেশের সার্বভৌমত্বের অংশ হিসেবে উল্লেখ করছে। জাপান বলছে, এই প্রশ্নে অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ সামনে নেই। অন্যদিকে চীন সেই যুক্তি মেনে নিতে নারাজ এবং বেইজিং দাবি করছে যে সেসব দ্বীপ চীনের অংশ। ফলে মানব বসতিহীন দ্বীপগুলোর চারপাশে চলছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা।

চীন সেখানে নিজেদের জাহাজ পাঠালে জাপানও পিছিয়ে থাকছে না। আর এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সমগ্র পূর্ব এশিয়ায় চলছে বিরামহীন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতা, অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের তহবিলের ওপর যেটা চাপ প্রয়োগ করছে। জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিরক্ষা ব্যয়কে ‘বিনিয়োগ’ আখ্যা দিয়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) বলেন, জাপানের প্রতিরক্ষা বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্য ‘মার্কিন-জাপান জোটকে আরও শক্তিশালী ও আধুনিকীকরণ করবে।’

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, এই পদক্ষেপ ‘জাপানের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি আন্তর্জাতিক আইনভিত্তিক বিশ্ব ব্যবস্থা ও ইন্দো-প্যাসিফিক তথা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে অবাধ ও উন্মুক্ত রাখতে সহায়তা করবে।’ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান একে অপরের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা মিত্র। একই সঙ্গে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত কৌশলগত জোট কুয়াডের অংশ দেশটি।

আরো পড়ুন :
বাংলাদেশি সমর্থকদের মেসির স্ত্রী-মায়ের বিশেষ বার্তা
জাবিতে মার্কেটিং অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটি গঠন

এদিকে জাপানের নতুন নিরাপত্তা নীতি ও নজিরবিহীন সামরিক ব্যয়ের পরিকল্পনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার জাপানকে ‘তার নিজস্ব নীতির প্রতিফলন’ ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাপান সত্যকে উপেক্ষা করছে, চীন-জাপানের মধ্যকার সাধারণ বোঝাপড়া ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতি নিজের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যাচ্ছে এবং চীনকে অসম্মান করছে।

সূত্র- সময় নিউজ

ডিসেম্বর ১৬.২০২২ at ২১:০৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর