মহান স্বাধীনতার ৫১ বছর, দিকে দিকে ওড়ে বিজয় কেতন

ছবি- সংগৃহীত- স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করে এসেছে বাঙালী জাতি

স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করে এসেছে বাঙালী জাতি। মহান বিজয় দিবসে এখন বাংলার কবি ভাবেন বাংলাদেশের স্বাবলম্বী হওয়ার কথা। উন্নয়নশীল জাতি গড়ার কারীগড় এখন বাঙালীকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। বলেন জাতি গড়ার কথা। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা শেষ। এখন আর পদ্মা সেতু নির্মাণ স্বপ্নের কথা নয়, বাস্তব। অবাক বিস্ময়ে বিশ্ব দেখেছে বাংলার উন্নয়ন। তাইতো এবারের মহান বিজয় দিবস আরও বেশী উৎসবের। এ উৎসব পৌছে গেছে ঘরে ঘরে। পদ্মা সেতুর পর এসেছে মেট্রো রেল।

স্বপ্ন পূরণের আনন্দে ভাসছে আজ গোটা দেশ। এরই মাঝে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসবের পথ ধরেই এসেছে মহান বিজয় দিবস। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে, আর কতোবার ভাসতে হবে রক্ত গঙ্গায়! আর কতোবার দেখতে হবে খান্ডব দাহন?’ এমন প্রশ্ন এখন আর কবি তোলেন না। বরং এখন কবি ভাবেন পাতাল রেল কবে হবে! ভাবতে হচ্ছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কথা। তাই কবির কবিতায় উঠে আসে ফুল ফোঁটানোর গল্প। আসে নতুন বছরের শপথ গ্রহণের প্রত্যয়। আসে স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার শপথ। আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। মহান স্বাধীনতার ৫১ বছর পূর্ণ হলো আজ।

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরুর পর টানা ৯ মাস শেষে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের দিন আজ। ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ৯১,৬৩৪ সদস্যর মাথা হেঁট করে আত্মসমর্পণ করার দিন আজ। বাংলাদেশ নামক দেশটির বড় বেশী গৌরব, বড় অহংকারের দিন আজ। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির ফসল ১৪ হাজার কিলোমিটার দুরের পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য হলো এই বাংলাদেশ। নাম হলো পূর্ব পাকিস্তান। এ ভূখন্ডের মানুষ ধরে নিয়েছিল, এই বুঝি সেই কাংখিত স্বাধীনতা! কিন্তু না।

আরো পড়ুন:
স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
শ্রদ্ধা আর ভালবাসা মধ্যেদিয়ে পাবনায় মহান বিজয় দিবস পালন 

ভুল শুধরে দিলেন গভর্ণর জেনারেল মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ। তিনি ১৯৪৮ সালে ঘোষণা দিলেন, উর্দূই হবে এদেশের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা। বাঙালি সমস্বরে এর প্রতিবাদ জানালো। শুরু হলো ভাষা আন্দোলন। যার ধারাবাহিক আন্দোলনে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথ লাল হলো বাঙালির বুকের তাজা রক্তে। ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালালো বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী। ১৯৪৭ সালে ইংরেজদের শাসন থেকে এদেশ মুক্ত হলেও ফের পাকিস্তানী শোষক গোষ্ঠীর অন্যায় শাসনে বাঙালি বঞ্চিত হতে থাকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে। তাদের সে অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদে দামাল বাঙালি ধাপে ধাপে আঘাত হানতে থাকে শাসনযন্ত্রে।

’৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-র নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ’৫৭-র স্বায়ত্ত্ব শাসন দাবি, ’৬২র ছাত্র আন্দোলন, ’৬৬ তে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা দাবির স্বাধীকার আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ। ১৯৭১ সালের মার্চে দুরন্ত বাঙালি তখন শুধু একটি নির্দেশনার অপেক্ষায়। সে সময় ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে যেন ভাষণ নয়, মহাকবি তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতাটিই পড়লেন।

সাড়ে সাত কোটি বাঙালির উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বললেন, “যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে”। তিনি আরো বললেন, “এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।” এ ভাষণের পর আর বাঙালীকে দমিয়ে রাখা যায়নি। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী বর্বর বাহিনী শুরু করে নির্মম নিধনযজ্ঞ। এ রাতে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বেতার ম্যসেজে বঙ্গবন্ধু দেন মহান স্বাধীনতার ঘোষণা। দখলদার বাহিনীকে বিতাড়নে বাঙালি শুরু করে অদম্য সংগ্রাম। ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে জীবন দান করে শহীদ হন ত্রিশ লাখ বাঙালি। অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জত-সম্ভ্রমের বিনিময়ে অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর আসে সেই কাঙ্খিত বিজয়। সরকার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে নিয়ে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।

আরো পড়ুন:
স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
শ্রদ্ধা আর ভালবাসা মধ্যেদিয়ে পাবনায় মহান বিজয় দিবস পালন 

‘ভিশন-২০২১’ ঘোষণা করে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলছে। এখন বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে ‘ভিশন-২০৪১ ঘিরে। এ যেনো স্বপ্নের পথে হাঁটা। তবে আজো বাঙালি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে বাতাসে। জাতিকে নতুন করে ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প আচ্ছাদিত করবে কি না, তা ভাবিয়ে তোলে। আজও ভাবতে হচ্ছে, কুখ্যাত রাজাকার দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ‘চাঁদে দেখা গেছে’ গুজব ছড়িয়ে যারা চলন্ত বাসে ট্রেনে আগুন দিয়ে অসংখ্য মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছিলো, সেই তারা আজো ধীর গতিতে হলেও তাদের চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে।

এমন বিষয় মাথায় রেখেই আজ জাতি বিজয় উৎসবে মেতে উঠবে। মহান বিজয় দিবসে সবার কাম্য হোক, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে শোষনহীন সমাজ ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হোক। এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। গোটা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক বাঙালি। সেদিন হাতছানি দেয় বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে।

সূত্র- গ্রামের কাগজ

ডিসেম্বর ১৬.২০২২ at ১০:৫২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর