১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে পরিকল্পনা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুইদিন আগে ঘটে এক মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞ। তারা বেছে বেছে অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের হত্যা করে। সেই বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছরের মতো এ বছরেও যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ পালনের লক্ষ্যে প্রস্তুত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১২টার দিকে বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হবে।পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে এক শ্রেণির দালাল ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর এ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করার এ নীলনকশা প্রণয়ন করে পূর্বপাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। পাকিস্তানি বাহিনীর অস্ত্র সহায়তা নিয়ে তাদের ছত্রচ্ছায়ায় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরের ক্যাডাররা এ বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এ পরিকল্পনা করে পাক হানাদার বাহিনী।
আরো পড়ুন:
>জামায়াতের আমিরকে ৭ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত
>সরকার পুলিশের কাঁধে সওয়ার হয়েছে
সারাবছর অনেকটা অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখা যায় এ শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমিকে। কিন্তু ১৪ ডিসেম্বরের আগেই তা সাজানো-গোছানো শুরু হয়ে যায়। ঠিক তেমনি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে ঘিরে বধ্যভূমিতে এখন চলছে যাবতীয় সাজগোজ। এরই মধ্যে এলাকায় সীমিত করা হয়েছে চলাচল। স্মৃতিসৌধের ভেতরে শুধু নিয়োজিত শ্রমিক, সিটি করপোরেশন কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকতে পারছেন। যথাযোগ্য মর্যাদায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে আগামী ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এদিন সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। দিনটি উপলক্ষে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপসানালয়ে বিশেষ মোনাজাত করা হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পবিত্রতা রক্ষায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় মাইক বা লাউড স্পিকার ব্যবহার না করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই দিবসটিকে ঘিরে পুরো এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ডিসেম্বর ১৩, ২০২২ at ১৯:১৩:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস