বিবিসির ১০০ নারীর তালিকায় ময়মনসিংহের নান্দাইলের সানজিদা

ছবি- সংগৃহীত

চলতি বছরে বিবিসির প্রকাশিত বিশ্বের অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের একমাত্র তরুণী সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া। সানজিদা ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের ঝাউগড়া গ্রামের মো. আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া সোহেলের মেয়ে। বর্তমানে তিনি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

এই তালিকায় ছোঁয়ার নাম ২১ নম্বরে। এছাড়া এই তালিকায় আছেন পেলেস্টাইনের নারী আল জাজিরার সাংবাদিক লিনা আবু আকলেহ। যাকে ইসরাইলী বাহিনী গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। আরো আছেন সিরিয়ার শারীরিক প্রতিবন্ধী দৌড়বিধ দিমা আক্তার, ইরানি নায়িকা জার আমির ইব্রাহিমি, আফগানিস্থানের শিক্ষার্থী ফাতিমা আমিরি, মিয়ানমারের চিকিৎসক আই নাইন তো, রাশিয়ার সাংবাদিক তাইসিয়া বেকবোলাটোভা ও ভারতের নায়িকা ও প্রযোজক প্রিয়াংকা চোপড়ার নাম রয়েছে।

বিবিসি ছোঁয়া সর্ম্পকে জানায়, পড়ালেখা করা অবস্থায় বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে তার ভূমিকা অনন্য। নান্দাইল সদরে অবস্থিত নান্দাইল পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় সাত সহপাঠীদের নিয়ে তিনি গঠন করেছিলেন ‘ঘাসফড়িং’ নামে একটি সংগঠন। পরবর্তীতে তিনি সংগঠনের বাইরেও নিজে প্রায় ৫০টি বাল্য বিয়ে বন্ধ করেন। এই স্বীকৃতি হিসেবে বিবিসির ১০০ নারী তালিকায় তার নাম অর্ন্তভুক্ত হয়।

আরো পড়ুন :
>বিবিসির ১০০ নারীর তালিকায় ময়মনসিংহের নান্দাইলের সানজিদা
>গোলাপগঞ্জে ছাত্রলীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন জাহেদুল আহমদ
>বিবিসির ১০০ নারীর তালিকায় ময়মনসিংহের নান্দাইলের সানজিদা

ছোঁয়ার এমন সাফল্যের খবরে বাড়িতে ভিড় করেন আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশিরা। আগত সবাই তাকে অভিনন্দন জানান। আনন্দে আত্মহারা ছোঁয়া। একমাত্র ছোট ভাই সাদমান হাফিজ লিখনকে নিয়ে নিজ ঘরেই অবস্থান করছিলেন। খুশির এই খবর সর্ম্পকে জানতে চাইলে ছোঁয়া বলেন, ভালো কাজের স্বীকৃতি পেলে সবারই ভালো লাগে। কিন্তু এতো বড় স্বীকৃতি পাবো তা বিশ্বাস হচ্ছে না।

ছোঁয়া বলেন, মঙ্গলবার সকালে একটি নম্বর থেকে বিবিসির পরিচয় দিয়ে বলা হয় আমি বিশ্বের ১০০ নারীর তালিকায় আছি। যা শোনে হতবাক হয়ে যাই। এই তালিকা কি কেন জানতে ইচ্ছা হলেও আমি তখন বলতে পারছিলাম না। বাড়ির বাহিরে থাকা মা-বাবাকে ফোন করে বিষয়টি জানাই। তারাও তখন বিষয়টি আমলে নেননি। এরপর আমার মোবাইলে একটি লিঙ্ক পাঠানো হয়। যা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। আমার নামের আগে রয়েছেন ভারতের বিখ্যাত নায়িকা ও প্রযোজক প্রিয়াংকা চোপড়ার নাম। যা অবিশ্বাস্য।

ছোঁয়া আরো জানান, তার মা লিজা আক্তারের বাল্য বিয়ে হয়েছিল। এতে তিনি চোখের সামনে দেখেছেন বাল্য বিয়ের কুফল কি। সব সময়ই মা থাকেন অসুস্থ। এ অবস্থায় তিনি যখন বিদ্যালয়ে পড়েন তখনও দেখেন তার সহপাঠীরা মাঝে মধ্যে বাল্য বিয়ের শিকার হয়। তখন নিজেই সহপাঠীদের নিয়ে গঠন করেন ঘাসফড়িং নামে একটি সংগঠন। আর এই সংগঠনের সাত সদস্যদের নিয়ে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে নামেন তিনি।

ছোঁয়ার মা লিজা আক্তার বলেন, মেয়ের এই কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক সময় হুমকী-ধামকীর মধ্যেও থাকতে হয়েছে। কারণ একটি বাল্য বিয়ে বন্ধের পর এই সমাজে এখনো অনেকেই এটাকে ভালো চোখে দেখে না। তারপরও নিজের জীবনের বাস্তব অবস্থা কথা চিন্তা করে মেয়েকেই উৎসাহ দিতাম বাল্য বিয়ে বন্ধের। আর সে তা সে বীরদর্পেই করেছে। এই জন্যই আজ তার এ সাফল্য এসেছে। এতে অনেকেই উৎসাহ পাবে।

আরো পড়ুন :
>বিবিসির ১০০ নারীর তালিকায় ময়মনসিংহের নান্দাইলের সানজিদা
>গোলাপগঞ্জে ছাত্রলীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন জাহেদুল আহমদ
>বিবিসির ১০০ নারীর তালিকায় ময়মনসিংহের নান্দাইলের সানজিদা

ছোঁয়া সম্পর্কে বিবিসিতে প্রকাশিত হয়, বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বাল্যয়ে-প্রবণ দেশ, তবে সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া এই ধারা বদলানোর চেষ্টা করছেন। তার মায়েরও বিয়ে হয়েছিল অল্প বয়সে। স্কুলে বাল্যবিয়ের প্রভাব নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেখে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হন তিনি। তার এই অর্জনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন নান্দাইল উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজ।

সূত্র- ময়মনসিংহের আলো

ডিসেম্বর ১২.২০২২ at ১০:০২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর