প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রাম

ছবি- সংগৃহীত

দীর্ঘ ১০ বছর পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জনসভায় আসছেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী ও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে অধীর আগ্রহে চট্টগ্রামবাসী। এর মধ্যে সব প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনী আমেজটা ঠিক নির্বাচনী উৎসবের মতো। তাই পুরো চট্টগ্রামেই বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সম্পন্ন হয়েছে সাজসজ্জা ও প্রচার-প্রচারণার কাজ। নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে গেছে বন্দরনগরী। জনসভাকে কেন্দ্র করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাড়ে হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকছে। এছাড়া জনসভাস্থল ও আশপাশের এলাকায় থাকছে সিসি ক্যামেরা।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম থেকেই নির্বাচনী জনসভা শুরু করছে আওয়ামী লীগ। জেলায় জেলায় সফরের কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের এ জনসভা থেকে নির্বাচনেরও বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তাই বিপুল লোকসমাগম ঘটিয়ে দলের শক্তি ও জনসমর্থনের প্রমাণ দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। অতীতে চট্টগ্রামের সব জনসভার রেকর্ড ছাপিয়ে পলোগ্রাউন্ডে আজকের জনসভা ইতিহাস সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।

এদিকে সমাবেশস্থলের আশপাশ থেকে শুরু করে নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় এখন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের ব্যানার-পোস্টার ও ফেস্টুনে সয়লাব। নগরের প্রধান সড়ক ছাপিয়ে পোস্টার-ব্যানার টাঙানো হয়েছে অলিগলিতে। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বড় বড় ব্যানার টাঙিয়েছেন নেতাকর্মীরা। যেন বড় ব্যানার টাঙানোর প্রতিযোগিতা নগরজুড়ে। তবে অধিকাংশ ব্যানার-বিলবোর্ড, ফেস্টুনে দলীয় প্রধানের ছবির তুলনায় বড় করে ছাপানো হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ছবি।

আরো পড়ুন:
ভ্রমনের নিষেধাজ্ঞায় থানচিকে যুক্ত, নিষেধাজ্ঞা বাড়ল ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত
ভোলায় ভূয়া জিনের বাদশা কালা হুজুর আটক
ভোলায় ১৫ জেলে অপহরণ, মুক্তিপণে ছাড়া পেলেন ৯ জেলে, ৬ জেলের হদিস নেই

পলোগ্রাউন্ড মাঠে যাওয়ার পথে বাঁশ ও কাঠের তৈরি অসংখ্য কাঠামো দেখা যায়। ভালো জায়গা দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই আগে থেকেই ব্যানার ও তোরণ লাগানোর জন্য গাছ-বাঁশের কাঠামো তৈরি করে রেখেছেন বিভিন্ন স্থানে। পিছিয়ে নেই নির্বাচনী আসনের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ও সাবেক সংসদ সদস্যরাও। তারাও নিজ নিজ এলাকায় লাগিয়েছেন পোস্টার-ব্যানার। তাদের কেউ ৫ হাজার, কেউ ১০ হাজার মানুষ নিয়ে শোডাউনের মাধ্যমে জনসভায় যোগ দেয়ার পরিকল্পনা করছেন। তাদের মতে, দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি নির্বাচনমুখী প্রচারণায় নামাতেই এই উদ্যোগ।

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে চট্টগ্রাম। রংতুলির আঁচড়ে বিবর্ণতা দূর করে নবরূপ পেয়েছে বন্দরনগরী। ভাঙাচোরা সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। ফুটপাত, সড়কদ্বীপ, ফ্লাইওভারে পড়েছে রঙের ছোঁয়া। এছাড়া নগরীর আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ফ্লাইওভার থেকে এমএ মান্নান ফ্লাইওভারের মাঝের অংশটির ল্যাম্প পোস্টে ৭০’র নির্বাচনে বিজয় ও স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার আকৃতিতে এলইডি বাতি লাগিয়ে আলোকসজ্জা করেছে চসিক’র বিদ্যুৎ বিভাগ।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও সমাবেশ ঘিরে চট্টগ্রামজুড়ে চলছে গান ও স্লোগান। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তৈরি করা হয়েছে ৯ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের একটি গান। তাছাড়া ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া জনসভার মঞ্চও প্রস্তুত হয়েছে। ৭ ফুট উচ্চতার ও ১৬০ ফুট দীর্ঘ মঞ্চটি তৈরি করা হয়েছে নৌকার আদলে। মঞ্চের মাঝখানের ৪০-৮০ ফুটের মধ্যে একসঙ্গে ২০০ অতিথি বসতে পারবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ প্রচারে পলোগ্রাউন্ড ও আশপাশের এলাকায় লাগানো হয়েছে ঢাকা থেকে আনা

‘কলরেডি’র ১৫০ মাইক। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আশপাশের মানুষ যাতে শুনতে পারে এ জন্য লাগানো হয়েছে ৩০০ মাইক। মূল মঞ্চের পাশাপাশি জনসভাস্থলের আশপাশে মোট ৭টি বড় পর্দা বসানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীসহ নেতাদের বক্তব্য সরাসরি স¤প্রচার করা হবে এসব পর্দায়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। শুধু পলোগ্রাউন্ড মাঠ নয়, নিরাপত্তার খাতিরে পুরো নগর জুড়ে সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এর মধ্যে পলোগ্রাউন্ড মাঠসহ পুরো চট্টগ্রাম মহানগরে আমাদের ৬ হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়টি আরো জোরদার করতে বাইরে আরো দেড় হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে।

তিনি বলেন, এটা চট্টগ্রামের জন্য বড় উৎসব। নিরাপত্তার জন্য আমাদের আয়োজন ভাল। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) পুরো আয়োজনটাই তদারক করছে। তাদের পরামর্শ মোতাবেক ইউনিফর্মপরা পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। পাশাপাশি সিসিক্যামেরা, ড্রোন থাকবে। পুরো শহরজুড়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকবে। শনিবার দুপুরে নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।

এ সময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এই দেশের গণমানুষের দল। আওয়ামী লীগ নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের সমাবেশ করছে। আওয়ামী লীগের জনসভাকে ঘিরে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে একটা আবেগ উচ্ছ¡াস তৈরি হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১০ বছর পর চট্টগ্রামের এই জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। সেটা দেখার জন্য, জানার জন্য ও প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিবেন। সেটার জন্য চট্টগ্রামবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আমাদের বিশ্বাস, জনসভা শুধু এই পলোগ্রাউন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। গোটা চট্টগ্রাম শহরই সব মানুষের উপস্থিততে জনসমুদ্রে রূপ নেবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আগামীকাল (রোববার) চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা। করোনা মহামারি উত্তর এই জনসভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছে। এই জনসভায় ১০ লাখের বেশি মানুষ সমবেত হবে। পলোগ্রাউন্ড ময়দান ছাপিয়ে এই জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, আব্দুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ।

নগরীর ২৫টির বেশি স্পটে মিনিট্রাক, অটোরিকশা ও রিকশায় টানা মাইকিং করেছেন দলের কর্মীরা। জনসভা সফল করতে ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ সাজিয়ে পথসভা করেছে ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে হয়েছে প্রচার-প্রচারণা, মাইকিং। ধারণা করা হচ্ছে, ৪৪টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড থেকে দুই লাখের বেশি নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেবেন।

এছাড়া চট্টগ্রামের সবগুলো উপজেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ১০ লাখ নেতাকর্মী পলোগ্রাউন্ডের মহাসমাবেশে উপস্থিত হতে পারেন বলে ধারণা জনসভা পরিচালনা কমিটির। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা সফল করতে বেশ কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিরা।

আরো পড়ুন:
ভ্রমনের নিষেধাজ্ঞায় থানচিকে যুক্ত, নিষেধাজ্ঞা বাড়ল ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত
ভোলায় ভূয়া জিনের বাদশা কালা হুজুর আটক
ভোলায় ১৫ জেলে অপহরণ, মুক্তিপণে ছাড়া পেলেন ৯ জেলে, ৬ জেলের হদিস নেই

জানা গেছে, আজ রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে সামরিক বাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেখান থেকে দুপুরে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে আসবেন। স্টেডিয়াম থেকে গাড়িতে করে প্রধানমন্ত্রী পলোগ্রাউন্ডে জনসভায় যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রামে এই সফরে ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথা রয়েছে। এজন্য জনসভার মঞ্চের পাশে ভিত্তিফলকগুলো স্থাপন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৮ মার্চ নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে সর্বশেষ আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১০ বছর পর একই মাঠে আবারো ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই এ জনসভা সফল করতে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা জনসভা ঘিরে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সূত্র- ভোরের কাগজ

ডিসেম্বর ০৪.২০২২ at ১০:১৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/ এমএইচ