নড়াইলে বেদে সম্প্রদায়ের পিঠা উৎসবে শত প্রাণের উচ্ছ্বাস

শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই শুরু হয় পিঠা তৈরির ধুম। নড়াইল-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের পাশে চিত্রা নদীর কোল ঘেষে অবস্থিত আউড়িয়া ইউনিয়নের সীমাখালী এলাকায় সবাই মেতে উঠেন পিঠা উৎসবে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বেদে বহরেই তৈরি করা হয় গরম গরম চিতই, রস চিতই, ভাপা, তালপিঠা, ভাজাপিঠা, পাটিসাপ্টা, কুলিপিঠা, দুধপিঠা, ডিমপিঠাসহ ১২ প্রকারের পিঠা।

আরো পড়ুন:
>১৩ বছর পর চলতি মাসে ফিরছে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা
>টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা

অতিথিসহ বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন যে যতটা পেরেছেন পিঠা খেয়েছেন। এ আনন্দ-উৎসব ঘিরে বর্ণিল হয়ে উঠে ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের ১৬টি খুপড়ি ঘর। রঙ-বেরঙের বেলুন দিয়ে সাজানো হয় প্রতিটি ঘর। পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পেরে খুশি সবাই। বেদেপল্লীর পাঁচ বছরের শিশু রাহিনূর জানায়, অনেকদিন পর পিঠা খেলাম। ভালো লাগল। সাথী ও চাঁদনীসহ বেদেপল্লীর মায়েরা জানান, তারা পাঁচ বছর পর পিঠা খেলেন।

দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ঘুরে জীবিকা অর্জন করতে গিয়ে তাদের সন্তানদের পিঠাপায়েস তৈরি করে দিতে পারেন না। স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা তাদের পিঠা খাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। বেদে সরদার রোকন বলেন, আমরা গরিব-দুঃখী মানুষ। অনেকদিন এমন আনন্দ করে পিঠা খাইনি। এছাড়া আমাদের ছেলেমেয়েরা নতুন পোশাক পেয়েছে। কম্বল পেয়েছি। স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ডিসি স্যার আমাদের প্রতিটি ঘরে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন।

স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মির্জা গালিব সতেজ বলেন, পিঠা উৎসবের পাশাপাশি ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোরদের মাঝে পছন্দের পোশাক উপহার দিয়েছি। শীতবস্ত্র ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় দুই বছর ধরে ‘স্বপ্নের পাঠশালা’র মাধ্যমে বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছি আমরা। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জয় বাংলা ইয়ুথ পুরস্কার-২০২১’ অর্জন করেছে সংগঠনটি। বেদে সম্প্রদায়সহ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য আরো সৃজনশীল কাজ করে যেতে চাই। নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম বলেন, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের মতো আমরা যদি প্রান্তিক ও অধিকার বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে সমাজে কেউ আর পিছিয়ে থাকবে না।

তাদের কর্মকান্ডকে ধন্যবাদ জানাই। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়নসহ আনন্দ-বিনোদনের ক্ষেত্রে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এজন্য তারা জাতীয় পর্যায়েও সম্মাননা পেয়েছেন। রকমারি পিঠাপুলি তৈরির মধ্যদিয়ে বাঙালির সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্দ্রীর উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছি।

দিনটি খুব আনন্দ উদযাপনে কেটেছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রতন কুমার হালদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু, আউড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম পলাশ, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ফয়সাল মুস্তারী, সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহ পরানসহ সদস্যরা।

ডিসেম্বর ০৩, ২০২২ at ১৭:০৭:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস