ছবিটি কি আসল, নাকি ফটোশপে বানানো?

ছবি- সংগৃহীত

স্নিগ্ধ সবুজ পাহাড়, ঝকঝকে নীলাকাশ, আর তাতে ভেসে বেড়াচ্ছে খণ্ড খণ্ড মেঘের ভেলা! আকাশের নিচে পাহাড়ের গায়ের সঙ্গে মিশে আছে সবুজক্ষেত। তার ওপর বিন্দুর মতো কিছু হলুদ ফুল। মনোমুগ্ধকর ঢালু পাহাড়ের ওপারে ছোট ছোট আরও কিছু পাহাড়। সব মিলিয়ে যেন এক শান্তি। বলছিলাম এমই এক ছবির কথা, যার দিকে চোখ পড়লেই এক ধরনের স্বস্তি কিংবা ভালো লাগা অনুভূত হয়। নাম তার ‘ব্লিস’। যার অর্থ ‘সুখ’!

তবে কিছু সমালোচকের মতে, ছবিটি একদম সাধারণ, এতে ভাল লাগার মত নেই তেমন কিছুই। আবার ছবির সমর্থকদের মতে, ঝকঝকে উজ্জ্বল একটি দিন, চমৎকার পাহাড়ি ঢাল সব মিলিয়ে ছবির নাম ‘ব্লিস’ একদম সার্থক। যে ছবিটির কথা এতক্ষণ বলছিলাম, তা হচ্ছে কম্পিউটারে ‘উইন্ডোজ-এক্সপি’তে ব্যবহৃত এক ছবি…যা দেখা যেত ‘ডিফল্ট ওয়ালপেপার’ হিসেবে। সমর্থক কিংবা সমালোচক… যে যাই বলুক না কেন, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশিবার দেখা ছবি এটি। তবে অনেকেরই প্রশ্ন… ছবিটিতে যে দৃশ্য দেখা যায়, সেটি আসল কি না।

আরো পড়ুন:
দ্বিতীয়তেও অদ্বিতীয় ম্যারাডোনা

অনেকেই ভাবতেন কম্পিউটারে গ্রাফিক্স কিংবা ফটোশপে করা কোনও ছবি ‘ব্লিস’। হয়তো অনেকগুলো ছবির সমন্বয়ে এটিকে বানানো হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার, এতে ফটোশপ তো দূরে থাক, ক্যামেরায় তোলার পর কোনও ধরনের এডিটও করা হয়নি। ২০০১ সাল থেকে উইন্ডোজ এক্সপি প্রোগ্রাম এর, ওয়ালপেপার হিসেবে এই ছবিটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

ছবিটি তুলেছেন ফটোগ্রাফার চার্লস ও’রেয়ার। আমেরিকান এই ফটোগ্রাফার, ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে, ছবি তোলার নানা বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। এমনকি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে তার তোলা ২৫টিরও বেশি ছবি নিয়ে ফিচার করা হয়েছিলো। তবে তার অন্যসব ছবি বিখ্যাত হলেও ‘ব্লিস’ তাকে পৌঁছে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। মাইক্রোসফট ২০০১ সালে ‘ব্লিস’কে ওয়ালপেপার হিসেবে ব্যবহার শুরু করার, ঠিক পরের বছর তা সবচেয়ে বেশিবার দেখা ছবির তালিকায় চলে আসে। এছাড়া ‘ব্লিস’কে ভালোবাসার গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও বলা যায়।

ছবিটি তোলা হয়েছিল ১৯৯৫ সালের জানুয়ারি মাসে। সে সময় চার্লসের বয়স ছিল ৫৬ বছর। কাজের সূত্রে তখন তাকে নানা জায়গায় যেতে হতো। একদিন বান্ধবী ড্যানকে সঙ্গে নিয়ে চার্লস যাচ্ছিলেন সান ফ্রান্সিসকোর উত্তর দিকে। মূলত ড্যানকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখানোর জন্যই দুজনে মিলে ঘুরতে বের হয়েছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ‘নাপা’ ও ‘সানোমা’ দিয়ে তিনি যখন যাচ্ছিলেন, সে সময় তার চোখে পড়ে উজ্জ্বল সবুজ ঘাস, নীলাকাশ আর মেঘ। এই দৃশ্যটি দেখে চার্লসের বেশ ভালো লেগে যায়। ভাবতে ভাবতেই চার্লস সঙ্গে থাকা ম্যামিয়া আরজি ৬৭ (Mamiya RZ 67) ক্যামেরাটি বের করেন এবং ‘ব্লিস’কে ক্যামেরাবন্দি করেন।

কোনো রকম এডিট না করা ‘ব্লিস’ ছবিটি চার্লস করবিসে সাবমিট করেন। বলে রাখা ভাল যে, ‘করবিস’ হচ্ছে ছবি জমা রাখা এবং লাইসেন্স করার, বিল গেটস মালিকানায় একটি প্রতিষ্ঠান। তবে মাইক্রোসফট ‘ব্লিস’কে ঠিক কত দামে কিনেছিলেন, সেটি এখনো জানা যায়নি। এমনকি চার্লস নিজেও কখনো সেই চুক্তির কথা কাউকে বলেনি। জানা গেছে, ছবিটির স্বত্ব কেনা হয়েছিলো ১ লাখ মার্কিন ডলারে। মজার ব্যাপার, চার্লস নিজেও জানতেন না যে, মাইক্রোসফট কীভাবে তার এই ছবিটি খুঁজে পেয়েছে।

এদিকে কত মানুষ ব্লিসকে দেখেছে এর সংখ্যা যদি গুনতে হয়, বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্বজুড়ে ‘উইন্ডোজ এক্সপি’ ছড়িয়ে আছে, মানে চার্লসের তোলা ছবিটি দূর-দূরান্তে থাকা কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে সবার কাছেই পরিচিত হয়েছে। এছাড়া ছবি তোলা সেই জায়গায় বর্তমানে আঙুর চাষ করা হয়। সেখানে গাড়ি থামানোও এখন নিরাপদ নয়।

সূত্র – সময় নিউজ

ডিসেম্বর ২৫.২০২১ at ১৬:৫২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর