জাবি শিক্ষক জনির বিরুদ্ধে একাধিক অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে একাধিক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। তিনি ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগে নিয়োগ পায়। তিনি ২০১২ সালে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।সম্প্রতি, জনির সাথে ৪২ ব্যাচের ছাত্রী ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষিকা আনিকা বুসরা বৈচির সাথে একটি অন্তরঙ্গ ছবি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর দেয়ালে পোস্টারিং এর করার পর ফাস হলে এসব তথ্য। পোস্টারের ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ‘এভাবেই ললিপপের ভেলকিতে শিক্ষিকা হলেন অনিকা বুশরা বৈচি।

আরো পড়ুন:
গোলশূন্য ড্র, ক্রোয়েশিয়া-মরক্কো

এদিকে ছবিটি ফাঁস হওয়ার পর (২২শে নভেম্বর) তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতারা জনির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজিব কুমার সাহা বলেন, ‘জনির সাথে দীর্ঘদিন রাজনীতি করার দরুণ আমি জানি, সে ছাত্রনেতা ও শিক্ষক থাকা অবস্থায় একাধিক ছাত্রলীগ নেত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। পাশাপাশি নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্যের সাথেও জড়িত ছিলো জনি। সে আমার বান্ধবীকে শিক্ষক বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। কিন্তু প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় যোগ্যতা সত্ত্বেও আমার বান্ধবীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যদিও একটি পদ খালি ছিলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, ‘আমাকে শিক্ষক বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেয় জনি। আমি সবকিছু না জেনে রাজিও হয়েছিলাম। পরে জানতে পারি জনি বিবাহিত এবং একাধিক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এরপর জনির কুপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় যোগ্যতা ও পদ খালি স্বত্তেও আমাকে শিক্ষক হিসেবে নেওয়া হয়নি। উপরন্তু যাকে নেওয়া হয়েছে তার সাথে জনির অন্তরঙ্গ ছবি ফাস হয়েছে। কিন্তু তার চেয়েও যোগ্য প্রার্থী ছিলো। অথচ আমরা পরে জেনেছি জনি ভাই পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা নন্দিতা সরকারের সাথে বিশেষ আইনে বিয়ে করেছেন। এ ব্যাপারে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক নন্দিতা সরকার বলেন, ‘বিশেষ আইনে বিয়ের বিষয়টি আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেটি প্রকাশ করতে চাচ্ছিনা।

এছাড়া ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ সভাপতি মাজেদ সীমান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, ‘জনি সভাপতি হওয়ার পর শুরু হয় তার নোংরা রাজনীতি। ইয়াবা আর ফেন্সি ডাইল সে রেগুলার খাইত অথচ তাকে দেখলে মনে হয় ভাজা মাছও খাইতে পারেনা। তার রাজনীতি করায় আমরা সচক্ষে দেখতাম কিন্তু আমরা জুনিয়র থাকায় কিছুই বলতে পারতাম না। তার ব্যাচের এক হিন্দু দিদি (যিনি এখন শিক্ষক) তাকে নিয়ে প্রাইভেট কারে ঘুরতে যেত, আমাদের সামনেও অশ্লীল ভাবে বসে থাকতো। ওই দিদি চলে গেলে সে ৪২ আর ৪৪ এর কিছু মেয়েকে রাজনৈতিক প্রলোভন দেখিয়ে সব সময়ই কাছে কাছে রাখতো, দুইজনকে আমি প্রায়ই তার সাথে প্রাইভেট কারে দেখতাম।

২০১২ সালের ওই কমিটির শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহমেদ রাসেল বলেন, ‘জনির এধরনের ঘটনার সাথে জড়িত থাকা ছাত্রলীগের জন্য বিব্রতকর। এটা নৈতিকতার চরম অবক্ষয়। এগুলো সত্য প্রমানিত হলে তার শাস্তি হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী জানান, ‘প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন নিপীড়নের অভিযোগ করতে সাহস পাবেন। শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে তিনি প্রতিনিয়তই কুলষিত করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। প্রশাসনের দায়িত্বে থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলতে পারছেনা।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘জনি পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৩৬ ব্যাচের ছাত্র। সে তার সহপাঠী নন্দিতা সরকারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন। বর্তমানে ওই সহপাঠী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ওই সহপাঠী ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় তারা উভয়েই গোপনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ওই সহপাঠী জনিকে বৈবাহিক সম্পর্কটি পারিবারিকভাবে স্বীকৃত করতে চাপ দিলে জনির মাথা বিগড়ে যায়। তারা বিগত ১৪ বছর ধরে এ সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে নন্দিতা সরকার উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এই প্রতিবেদকের কাছে জনির সাথে একাধিক ছাত্রলীগ নেত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বিভিন্ন ছবি ও তথ্য প্রমাণ হাতে এসেছে।

এসব বিষয়ে মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, ‘সহকারী অধ্যাপক নন্দিতা সরকারের সাথে আমার ১৪ বছরের সম্পর্ক আছে। তবে বিয়ের বিষয়টি ব্যক্তিগত হওয়ায় সেটি বলতে চাচ্ছি না। একাধিক নারী শিক্ষার্থীর সাথে ‘অশালীন’ চ্যাটিং এবং অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটি মহল বিশেষ উদ্দেশ্যে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এই কাজগুলো করে যাচ্ছে। আর শিক্ষক নিয়োগে আমার কোন প্রভাব নেই, নিয়োগবোর্ড যাকে যোগ্য মনে করছে তাকেই নিয়োগ দিচ্ছে। এছাড়া সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষিকার সাধে অন্তরঙ্গ ছবির বিষয়ে তিনি জানান, ‘ছবিটি বিভাগে আমার অফিসকক্ষে তোলা হয়। আমি একসময় ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতি থাকায় তখন অনেকেই আমার সাথে সেলফি তুলতো।

এটি সেরকমই একটি সেলফি। একটা সাধারণ সেলফিকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ কাজটি করা হয়েছে। বৈচি আমার বিভাগের ৪২ ব্যাচের ছাত্রী। আমি যখন শিক্ষক হই তখন তারা থিসিসের শিক্ষার্থী। তাই এই ব্যাচটার সাথে আমার সম্পর্ক অনেক ভালো। আনিকা বুশরা বৈচি বলেন, ‘আমি যোগ্যতার কারণে নিয়োগ পেয়েছি। ছবিটি অনেক পুরোনো। যারাই এটি ছড়িয়েছে তারা আমার সাথে অন্যায় করেছে। বিভাগের শিক্ষক হতে না পারার কারণে এটা কেউ করে থাকতে পারে। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমরা যেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছি তা অস্বস্তিকর। একজন শিক্ষক হিসেবে এগুলো মেনে নেওয়া কঠিন। এসব সত্য হলে বিষয়টি নিন্দনীয়, একজন শিক্ষক তার অফিসকক্ষে এসব কাজ করতে পারে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের একজন সাবেক শিক্ষকনেতা বলেন, ‘এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধি অনুসারে ২ এর ঘ, ৩ এর জ এবং ৪ এর ঘ মোতাবেক ‘নৈতিক অসচ্চরিত্রতা’ ও ‘অসদাচরণ’ সংঘটিত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগে প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে।এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিষয়টি আমি জেনেছি। তার সাথে কথা বলাও হয়েছে। তবে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে আমার জানা নেই। নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা ফলাফলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে কারো সুপারিশের সুযোগ নেই।

ডিসেম্বর ২৩.২০২১ at ১৮:১৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর