বিএনপির সমাবেশে বিপুল ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন : টাকা আসছে কোত্থেকে?

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : সমাবেশের দুই দিন আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিলেটে আসে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেখানে চলে রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, খোশগল্প। যেন পিকনিকের আমেজ। বিএনপির দাবি ১৯ নভেম্বর সিলেটে সমাবেশের আগেরদিন শুক্রবার রাতে ১০ হাজার মানুষের জন্য মোরগ পোলাও রান্না করা হয়েছে। আর বিভিন্ন জেলা থেকে আসাদের কেউ কেউ রান্না করেছেন আলাদাভাবে। শুধু সিলেট নয়, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় সমাবেশেই রান্না-বান্না ও খাওয়া-দাওয়ার চিত্র চোখে পড়েছে বিএনপির সমাবেশগুলোতে, যা ব্যয়বহুল। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। প্রশ্ন উঠেছে এই ব্যয়ের অর্থের উৎস নিয়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন বিএনপির সমাবেশে টাকা উড়ছে। টাকা আসছে দুবাই থেকে।

আরো পড়ুন:
সিলেটের আওয়ামীলীগ সভাপতি প্রার্থী নিজাম উদ্দিন দোয়া চেয়ে, উদাত্ব আহবান

জোরপূর্বক চাঁদা নিচ্ছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। আর বিএনপি নেতারা বলছেন, বিদেশ বা চাঁদাবাজি নয়; নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে রাজনীতি করেন তারা। নিজেরা চাঁদা দিয়ে সমাবেশগুলো করছেন। বিএনপি নেতাদের এসব বক্তব্যকে রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। তাদের দাবি নির্বাচন কমিশনে দেয়া বিএনপির আয়-ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখা হোক। বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, প্রতিটি মহাসমাবেশের জন্য বিএনপি খরচ করছে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। এই সমাবেশের খরচের মধ্যে আছে যে, সমাবেশ যে বিভাগীয় শহরে হচ্ছে সে বিভাগীয় শহরের সব গুলো জেলা থেকে লোক সমাগম করা, তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা, প্যান্ডেল, মাইক্রোফোন ইত্যাদির ব্যবস্থা করা এবং প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরভুক্ত জেলার লোকজনকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া।

সব মিলিয়ে কোথাও কোথাও ৫০ কোটি, কোথাও কোথাও ৬০ কোটি টাকা খরচ করেছে। যেমন, চট্টগ্রামে ৭০ কোটি টাকা খরচ করেছে। এতো বিপুল অর্থের উৎস কি? যে বিএনপি এক বছর আগেই অর্থ কষ্টের কারণে একটি মিছিল করতে পারেনি। দলীয় কার্যালয়ের স্টাফদেরকে বেতন দিতে পারেনি ৪ মাস, সেই বিএনপি এখন রাতারাতি বড়লোক হয়ে উঠলো কিভাবে? নির্বাচন কমিশনে বিএনপি যে আয় ব্যয় হিসেব দিয়েছে তাতে বিএনপি অর্থ খুবই সামান্য এবং এই অর্থ দিয়ে আর যাই হোক এরকম ধারাবাহিক সমাবেশ করা যায়না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গত রবিবার বলেন, বিএনপি সমাবেশের নামে বড় পিকনিক করছে। সেজন্য তারা চাঁদাবাজি করছে। সমাবেশগুলোতে তিন দিন আগে গেছে, হোটেলে খাওয়া-দাওয়া, তাস খেলা- আবার মাঠের মধ্যে তাঁবু টানিয়ে রান্না-বান্না করে খেয়েছে। এটা বড় পিকনিক। শীতের সময় আমরা পিকনিকে যেতাম, বিএনপির নেতাকর্মীরাও সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশের নামে বড় পিকনিক করছে। সারাদেশে চাঁদাবাজি করছে। অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ দিয়েছেন- বিএনপি ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে বা করার চেষ্টা করছে।

বিএনপি এখন বিভিন্ন ব্যবসায়ী, বড় বড় শিল্প হাউজগুলোর কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে এবং বিপুল পরিমাণ টাকা তারা পাচ্ছে। কেন টাকা পাচ্ছে? এর একটি বড় কারণ হলো যে, তারেক জিয়া সরাসরি বিভিন্ন ব্যবসায়ীদেরকে টাকা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন এবং সেই নির্দেশ অনুযায়ী কেউ কেউ টাকা দিচ্ছেন। আবার অনেক জায়গায় ভয়ভীতি হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেখে নেওয়া হবে ইত্যাদি বক্তব্য দিয়ে তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে। আবার অনেকে স্বপ্রণোদিত হয়েও টাকা পয়সা প্রদান করছেন।

এর আগে গত ২৯ অক্টোবর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির সমাবেশগুলোতে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। ওই দিন রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ছিল। দুবাই থেকে বিএনপির টাকা আসছে অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের সেদিন বলেন, ফখরুল সাহেব এখন চাঙা হয়ে গেছেন। টাকা পাচ্ছেন। দুবাই থেকে টাকা আসছে। আমরা খবর নিচ্ছি। কারা টাকা পাঠায়। খোঁজ পেয়েছি। ব্যবস্থা হবে। টাকার খেলা আর হবে না। কাদের তার বক্তব্যে আরো বলেন, মির্জা ফখরুল শুয়ে আছেন টাকার বস্তার ওপর। ফখরুল মহাখুশি। টাকা পেলেই বিএনপি খুশি। টাকার বস্তার বিছানার ওপর ফখরুল শুয়ে আছেন। এরপর আরো একাধিক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়েও এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।

তার বক্তব্যের সূত্র ধরেই শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের মতে, বিএনপি নির্বাচন কমিশনে আয়-ব্যয়ের যে হিসাব জমা দেয়, তা সঠিক কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। বাইরে যে সমস্ত বিএনপির নেতারা পলাতক রয়েছেন, বিপুল বিত্ত বাইরে পাচার করেছেন সেখানে অনেকে এখন স্থায়ীভাবে অবস্থা করছেন তারাও এখন আন্দোলন করার জন্য টাকা পাঠাচ্ছেন এমন অভিযোগ রয়েছে। তবে এই টাকা কোনোটাই ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না। এগুলো আসছে বিভিন্ন ধরনের হুন্ডির মাধ্যমে এবং এই টাকার ফলে বিএনপির এখন জনসভা করার ক্ষেত্রে কোনো রকমের সমস্যা হচ্ছে না।

বিএনপি এখন অনেকগুলো কমিটি দ্রুত নিষ্পত্তি করছে এবং কমিটিগুলো দিচ্ছে। প্রতিটি কমিটি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময় ছাত্রদলের কমিটি থেকে ১০০ কোটি টাকার ওপর উপার্জন করা হয়েছে। এই সমস্ত টাকার একটা অংশ লন্ডনে যাচ্ছে। অন্য একটি অংশ ঢাকায় দলীয় কর্মসূচিগুলো পালনের জন্য খরচ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যবসায়ীক গ্রুপ তারা বিএনপিকে এখন কেউ কেউ স্বপ্রণোদিতি হয়ে অনুদান দিচ্ছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। আর এ কারণেই বিএনপি এখন হঠাৎ করে আর্থিকভাবে ফুলে ফেঁপে উঠেছে।

ডিসেম্বর ২৩.২০২১ at ১০:২৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর