যশোরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে সরগরম দক্ষিণাঞ্চল : লক্ষ্য ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষের জমায়েত

সমাবেশকে সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত করতে সার্কিট হাউজে আলোচনা।

যশোরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা ঘিরে সরগরম পুরো দক্ষিণাঞ্চল। ব্যস্ত সময় পার করছেন এ অঞ্চলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষের জমায়েতের লক্ষ্য নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। পুরো যশোর শহরই সমাবেশস্থলে পরিণত করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা সরকারের উন্নয়ন ও সফলতার বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যেও নতুন আশা জেগেছে। বিশাল গণসমাবেশকে সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর আসার আগের দিন ও জনসভার দিন কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকবে গোটা যশোর শহর ও শহরতলী।

১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর যশোরের এ স্টেডিয়ামে ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই দিনের ঐতিহাসিক জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। একই মাঠে ৫০ বছর পর আগামী ২৪ নভেম্বর জনসভায় নৌকার আদলে তৈরি মঞ্চে ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানুষের অবস্থান নিশ্চিত করতে শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশের গ্যালারি ভেঙে আবদুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের মাঠ ও পৌর পার্কের একাংশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর যশোরে আগমনের বার্তায় শুধু যশোর নয়, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর যশোর ঈদগাহ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে শহরজুড়ে চলছে প্রচার-প্রচারণা। সমাবেশস্থল নিরাপদ ও নির্বিঘœ করতে পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরাও যশোরে অবস্থান করছেন। এরই মধ্যে ৪ স্তরের নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। আগের দিন পর্যন্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় চলবে। নিরাপত্তা বলয় ৫ স্তরেরও হতে পারে। জেলা পুলিশের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে যশোরের সাধারণ মানুষের মধ্যেও নতুন আশা জেগেছে। যশোর মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামে সাগরদাড়িতে সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনসহ একগুচ্ছ দাবি নিয়ে রাজপথে আছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এসব দাবির বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে মানববন্ধন, সমাবেশ ও স্মারকলিপি দেবেন।
দলীয় সূত্র জানায়, জনসভা উপলক্ষে এরই মধ্যে মাইকিং ও প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর যাওয়া আসার রাস্তা বাদ রেখে শহরের অন্যান্য বিভিন্ন সড়কে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। জনসভা সামনে রেখে শহরজুড়ে নিজেদের প্রচারণার ব্যানার পোস্টার করেছেন স্থানীয় নেতারা। শহরের দড়াটানা মোড়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ম্যুরাল চত্বর, গরীবশাহ সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার টাঙিয়েছেন নেতারা।

সমাবেশকে সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত করতে অঅওয়ামী লীগ অফিসে আলোচনা।

জনসভা সফল করতে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্যের অভ্যর্থনা উপকমিটি, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল মজিদকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারকে সদস্য সচিব করে ২০ সদস্যের অর্থ উপকমিটি, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল খালেককে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের আপ্যায়ন উপকমিটি, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. এম এ বাশারকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা উপকমিটি, যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের দপ্তর উপকমিটি, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুন্সী মহিউদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুখেন মজুমদারকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল মজিদ বলেন, নৌকার আদলে মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি এডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, করোনা পরিস্থিতির আড়াই বছর পর যশোরে প্রথম জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসমাগম হবে। জনসভা সফল ও সার্থক করার লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

যশোর সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যশোরে আগমনের বার্তায় শুধু যশোর নয়, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। নেত্রীকে চোখের দেখা দেখার জন্য বাঁধভাঙা উচ্ছ¡াস নিয়ে যশোরের জনসভায় যোগ দেবেন। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় এ সমাবেশকে সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত করতে আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনসভায় সাত থেকে আট লাখ মানুষের গণজমায়েতের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

জনসভার প্রস্তুতি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার বলেন, যশোরের জনসভায় আট লাখ মানুষের গণজমায়েতের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আশপাশের জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা আসবেন। সমাবেশস্থলে এত মানুষ ধরবে না। মানুষ যাতে সরাসরি নেত্রীর ভাষণ দেখতে ও শুনতে পান, সেজন্য ১০টি বড় আকারের এলইডি স্ক্রিন স্থাপন করা হবে। সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ ক্যাম্পাস ও ঈদগাহ মাঠে ওই বোর্ডগুলো স্থাপন করা হবে। সারা এলাকাজুড়ে থাকবে ৩ শতাধিক মাইক।

এ জনসমাবেশকে ঐতিহাসিক রুপ দিতেই মাইক পরিষেবায় রাখা হয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কল-রেডী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে এবং পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন আন্দোলনে প্রায় সব সময় এ মাইক সার্ভিসটি ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় সভা ও সমাবেশে এবং সাতই মার্চের ভাষণ প্রচারে মাইক পরিষেবায় ছিল কল-রেডী।

নভেম্বর ২১, ২০২২ at ০৩:০৩:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ভোকা/তআ