চিলমারীতে জনতার হাতে আটককৃত টিসিবি পণ্য রফাদফার অভিযোগ

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র পণ্য আটকের পর স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে অর্থের বিনিময়ে রফদাফার অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্যে পণ্য আটক হলেও আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে গোপনে রফাদফার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা, এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন সচিবসহ প্রভাবশালীদের উপস্থিতিতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রফাদফা হরেছে। তবে অভিযুক্তদের দাবি, মানবিক দিক বিবেচনা করে স্থানীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সমন্বয় করে আটক পণ্য সুবিধাভোগীদের ফেরত দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:
স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের কারিগর সোনালী প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা – এমপি জয়

এর আগে উপজেলার রমনা ইউনিয়নের জোড়গাছ বাজারে গত ১১ নভেম্বর দুপুরে বোতলজাত সয়াবিন তেল, চিনি ও ডালসহ তিন বস্তা টিসিবি পণ্য আটক করেন স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসান। পণ্যগুলো স্থানীয় দুই ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া ও বিক্রমের দোকানে যাচ্ছিল বলে জানান অটোচালক। আটকের পর পণ্যগুলো রমনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের জিম্মায় পরিষদে রাখা হয়। পরে এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ওষুধ ব্যবসায়ী মাহমুদুল। এ ঘটনায় টিসিবি ডিলার গওছুল আজমকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয় উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে অর্থের বিনিময়ে রফাদফা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্য আটকের ঘটনায় পরেরদিন শনিবার (১২নভেম্বর) রাতে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম লিচু’র নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ও রমনা মডেল ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকাসহ অভিযুক্ত দুই ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিষয়টি ৭০ হাজার টাকায় রফাদফা করে জব্দকৃত পণ্যগুলো সুবিধাভোগীদের মাঝে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রমনা মডেল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুর ই এলাহী তুহিন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে দুই ব্যবসায়ীকে ৪০ হাজার টাকা এবং টিসিবি ডিলারকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মোট ৭০ হাজার টাকায় পণ্য আটকের বিষয়টি রফাদফা করা হয়েছে।

আমি নিজেও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। জানতে চাইলে অভিযুক্ত মুদি ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া বলেন, মিটিংয়ে আমি ছিলাম না। উপজেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম লিচুু ভাইয়েরা বসে স্থানীয়ভাবে সমাধান করেছে।’ তবে টাকা লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী কোন মন্তব্য করেননি।  ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকা বলেন, ‘ওই দুই ব্যবসায়ী ভুল স্বীকার করায় জব্দকৃত পণ্যগুলো কার্ডধারীদের দেয়া হয়েছে।’ তবে অর্থের বিনিময়ে রফাদফার বিষয়ে তিনিও কোনও মন্তব্য করেননি।
টিসিবি ডিলার গওছুল আজম বলেন, ‘আমরা কার্ডধারী ছাড়া পণ্য দেই না। ওই পণ্যগুলো হয়তো কয়েকজন কার্ডধারী একসঙ্গে কাউকে দিয়ে থাকতে পারে। আমার বিষয়টি জানা নেই। বৈঠকের বিষয়ে বা টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

উপজেলা প্রশাসন থেকে শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে এই ডিলার বলেন, ‘আমি শোকজের জবাব দিয়েছি।’
তবে বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম লিচু। তিনি বলেন, ‘টিসিবি পণ্য নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছিল। আমি শোনার পর স্থানীয়ভাবে মিমাংসার কথা বলেছি। তবে আমি বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম না। তিনি আরও বলেন,‘ কয়েকজন কার্ডধারীর পণ্য একসাথে করে নিয়ে যাওয়ার সময় আটক করেছিল। পরে তাদেরকে ওই পণ্য ফেরত দেওয়া হয়েছে।’ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছি। বিষয়টি উনি (চেয়ারম্যান) ভালো জানেন।

ডিসেম্বর ২০.২০২১ at ১৮:১২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর