শিবগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী নবান্নের মাছের মেলা

সনাতন পঞ্জিকা হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল পহেলা অগ্রহায়ণ। এজন্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নতুন ধানে নবান্ন উৎসব পালন করে। এই নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলীতে বসেছে মাছের মেলা। দূর-দুরান্তের মানুষ এসেছেন মাছ কিনতে। ছোট বড় সব সাইজের মাছ পাওয়া যায় এই মেলায়। ঘরে ঘরে বড় বড় মাছ ও নতুন সবজি কিনে মেয়েজামাইসহ স্বজনদের আপ্যায়নের আয়োজন চলছে।

আরো পড়ুন:
রাণীশংকৈল কলেজহাটে ৩ টি দোকান পুড়ে ছাই

মেলায় এক হাজার মণের বেশি মাছ কেনাবেচা হয়েছে। এক কেজি থেকে শুরু করে ২৫ কেজি ওজনের বিগহেড মাছ, ১৯ কেজি ওজনের বøাক কার্প, ১৪ কেজি ওজনের কাতল, রুই, কাতলা, ব্রিগহেড, বাগার, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের মাছ বিক্রি হয় মেলায়। তবে গত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম অনেকটায় বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। বিশালাকৃতির রুই-কাতলা ও মাছগুলো সাতশ থেকে এক হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও মাঝারি আকারের মাছ ৩০০ টাকা থেকে সাতশ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে, বিগহেড ও সিলভার কার্প মাছ বেচাকেনা হয়। দেড়শ বছরের প্রাচীন উথলী মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের ২২ গ্রামে স্বজনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।এদিন নবান্ন উৎসব পালন করা হলেও এ উৎসবকে কেন্দ্র করেই প্রতিবছর মাছের মেলা বসে উথলীতে। এজন্য উথলী, রথবাড়ি, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, আকনপাড়া, গরীবপুর, দেবিপুর, গুজিয়া, মেদনীপাড়া, বাকশন, রহবল, মোকামতলা, ল²ীকোলাসহ ২২ গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে ছিলো উৎসবের আয়োজন। প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের আগে থেকেই নিমন্ত্রণ করা হয়।

পরিবারের সবাইকে নিয়ে তারা নতুন ধানের চালে নবান্ন করেন। নবান্ন উপলক্ষে সেখানে মাছের মেলা বসলেও জমি থেকে নতুন তোলা অন্যান্য শাক-সবজির পসরাও সাজানো হয় মেলা চত্বরে। এই মেলায় নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়াও মিষ্টি আলু ও কেশর (ফল) প্রতি কেজি চারশ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। শিবগঞ্জের মাছ ব্যবসায়ী আবদুল বাসেদ জানালেন, তিনি নাটোরের সিংড়া এলাকা থেকে প্রায় ৩০ মণ বিভিন্ন ধরনের মাছ বিক্রির জন্য এনেছিলেন। তার মধ্যে ১৪ কেজি ও ১২ কেজি ওজনের কাতল ছিল।

প্রতিটি কাতল এক হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন। মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী ফারজানা মিলি বলেন, এই গ্রামে আমার বিয়ে হওয়াতে আমি এই মেলায় জীবনের প্রথম এসেছি। মেলায় এসে আমি খুব মুগ্ধ হয়েছি এত বড় বড় মাছ দেখতে পেয়ে। অপর মাছ বিক্রেতা জয়পুরহাটে মাছ ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম জানান, মেলায় ছোট-বড় মিলে শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা অন্ততঃ ৫ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন। মেলায় মাছ সরবরাহের জন্য সেখানে রাত থেকে ২০টি আড়ৎ খোলা হয়। সেসব আড়ৎ থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা পাইকারি দরে মাছ কিনে মেলায় খুচরা বিক্রি করেন।

মেলায় মাছ কিনতে এসে ধোন্দাকোলা গ্রামের চঞ্চল চন্দ্র মোহন্ত জানান, বাড়িতে আত্মীয় স্বজন আসায় ৪শ টাকা কেজি দরে আট কেটির একটি বিগহেড মাছ কিনেছি। মেলায় মাছ কিনতে আসা শিবগঞ্জ উপজেলা কাজীপুর গ্রামের মুনসুর রহমান জানান, তিনি প্রতিবছরই এই মেলায় আসেন মাছ কিনতে। এবার ৪শ টাকা কেজি দরে ১২ কেচির একটি বø্যাককাপ মাছ কিনেছেন। উথলীর নবান্ন মেলায় বিক্রির জন্য আশপাশের এলাকার পুকুরগুলোতে সৌখিন চাষীরা মাছ মজুদ করে রাখেন।

এলাকার কে কতো বড় মাছ মেলায় তুলতে পারে যেন তারই প্রতিযোগিতা চলে চাষীদের মধ্যে। এছাড়া আড়ৎদাররা তো আছেই। এলাকার লোকজনও প্রায় প্রতিযোগিতা করে তুলনামূলক বড় মাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে যায়। মূলতঃ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসব করলেও আশপাশের গ্রামের সকল সম্প্রদায়ের মানুষই কেনাকাটা করে।

ডিসেম্বর ১8.২০২১ at ১৮:৫০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর