প্রয়োজন রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের আস্থা

ওরা আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধা। ওদের অবমূল্যায়ন করার কোনো সুযোগ নেই। বরং আমি, আপনি, সরকার যৌথভাবে ওদের আস্থা অর্জনে করে এই যোদ্ধাদের আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তবেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ইস্পাতের মতো শক্তিশালী হবে।

একটি দেশের বানিজ্য প্রধানত ২ ধরনের হয় যথাঃ অভ্যন্তরীন ও বৈদেশিক। অভ্যন্তরীন বানিজ্য দেশের নিজস্ব মুদ্রায় করা গেলেও বৈদিক বানিজ্য নিজস্ব মুদ্রায় করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শক্তিশালী কোন বিদশী মুদ্রার মাধ্যম, যেমন- ডলার।

আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় সব জিনিষ নিজের দেশে উৎপাদন করি না। আমরা আমাদের জালানি তৈল, চাল,ডাল, সয়াবিন তৈল, চিনি, পিয়াজ, মসলা, গম ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের জন্য বিদেশের উপর নির্ভরশীল। এগুলো ইচ্ছা করলেই আমরা আমদানি না করে থাকতে পারবো না। আর এজন্যই প্রয়োজন – ডলার।

আরও পড়ুন:
বিশ্বব্যাপী আয় ছাড়িয়েছে ৫০০ কোটি রুপি, যে ছবির
দিনাজপুরে রেকর্ড, ৪০০ টাকা দরে প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি

এখন দেখা যাক আমাদের ডলার আয়ের সম্ভাব্য প্রধান প্রধান উপায় গুলো- পন্য/ সেবা রপ্তানি করা অথবা বিদেশে কর্মরত আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পাঠানো আয়। আমাদের রপ্তানি পন্য বা সেবা উল্লেখ যোগ্য ভাবে তেমন কিছু নেই- তৈরি পোষাক একটা গুরুত্বপুর্ন খাত কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন আমদানি কৃত জালানি বা পন্য যার জন্য আবার ডলার খরচ করতে হয়।

আর থাকলো রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পাঠানো ডলার। সেই ডলার যদি বৈধ পথে না আসে তবে তা দেশের কোন কাজেই আসেনা।

এখন দেখা যাক রেমিট্যান্স যোদ্ধারা কেন অবৈধ পথে ডলার পাঠান-
০১) বৈধ পথের থেকে অবৈধ পথে পাঠান ডলারের দাম বেশী।
০২) সরকারের কর্মকান্ডের জন্য তারা ত্যাক্ত-বিরক্ত।
০৩) দূতাবাস বা বিমান বন্দরের সেবায় ভোগান্তি।
০৪) সরকারের প্রতি আস্থার সংকট।
০৫) সুশাসনের অভাব ও অনান্য করান।

০৪ নং কারন বাদে অনান্য সব কারন গুলো আগেও বিদ্যমান ছিল কিন্তু তখন রেমিট্যান্স আসার হার এত কম ছিল না। তাহলে দেখা যাচ্ছে আস্থার সংকট কাটাতে পারলে হয়ত এই হার বাড়ান সম্ভব। ভয়-ভীতি বা মামলার ভয় দেখিয়ে এই আস্থা তৈরী হবে না।

এখন প্রায় ১৬৯টি দেশে এক কোটি ২২ লাখ বাংলাদেশি কাজ করে। দেশে কাজের বাজারে প্রতিবছর ২২ লাখ নতুন মুখ আসে যার সাত থেকে আট লাখই চলে যায় কাজের সন্ধানে বিদেশে। তাদেরকে আমরা বলি প্রবাসী শ্রমিক। প্রবাসী শ্রমিকদের ৭৫ শতাংশই কাজ করেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, বাহরাইনে কাজ করেন অধিকাংশ বাংলাদেশি। এদের অনেকেই হয়রানি এড়াতে অবৈধভাবে ঝুকি নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে।

যারা হুন্ডির ব্যাবসা করে তারা সব সময়ই ধরা ছোয়ার বাইরে থাকে। তাই বৈধ পথে ডলার আসার জন্য সুশাসন, সময় উপযোগী নীতিমালা তৈরি ও রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পর্যাপ্ত সন্মান-সেবা প্রদানের মাধ্যমে আস্থায় আনতে হবে। আর তাতেই দেশ ও জাতীর মঙ্গল নিহিত।

লেখকঃ মোঃ মেহেদী হাসান
ব্যাংক কর্মকর্তা।

নভেম্বর, ১৮, ২০২২ at ১৫:১৩:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/কেআকো/এসএসএইচ