পাবনার ঈশ্বরদীতে মেলার নামে চলছে র‍্যাফেল ড্রয়ের রমরমা বাণিজ্য

পাবনার ঈশ্বরদীতে তাঁত বস্ত্র ও কুঠির শিল্প মেলার নামে অবৈধ লটারি (জুয়া) বাণিজ্য ও রাতে যাদু দেখানোর নামে অশ্লিল নৃত্য পরিবেশন করার অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের চোখের সামনে জুয়া ও নৃত্য চললেও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) রাতে সরেজমিনে গিয়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠে এমন চিত্রের দেখা মেলে। এতে দেখা যায়, চটকদার সব বিজ্ঞাপন করে এবং মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ রাইচ কুকারসহ বিভিন্ন ধরনের পুরস্কারের প্রলোভন ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক, সিএনজি দিয়ে চলছে লটারির টিকেট বিক্রি।

আরো পড়ুন:
পরিবহন ব্যবসায়ী খন্দকার আব্দুল মান্নান মিয়ার মৃত্যুতে জেলা আওয়ামী লীগের শোক

মাইকে এসব লোভনীয় বিজ্ঞাপন শুনে লটারি কিনতে পিকআপ, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে থাকা লটারি বিক্রেতাদের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষরা। কেউ কেউ ২০ টাকা মূল্যের এই লটারি ১০ থেকে ৫০টিও কিনছেন। কোনো কোনো ব্যক্তি আবার ১০টির অধিক লটারিও কিনছেন। জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।

টিকিট বিক্রেতারা জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দুই শতাধিক ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানে ৫ শতাধিক লটারি বিক্রেতা সমগ্র পাবনার বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছে র‍্যাফেল ড্র এর লটারি বিক্রি করতে। এমনকি পার্শ্ববর্তী জেলার নাটোরের বিভিন্ন উপজেলাতেও এসব টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবেই র‍্যাফেল ড্র এর নামে প্রতিদিন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মেলার আয়োজক ও র‍্যাফেল ড্র সংশ্লিষ্টরা। এতে আর্থিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। কিন্তু এসব অবৈধ কর্মকান্ড প্রকাশ্যে চললেও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

স্থানীয়রা জানান, চটকদার এসব বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে মোটরসাইকেল, সাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন রকম পুরস্কার পাওয়ার আশায় গ্রামের নিরীহ নারী পুরুষ প্রতিদিনই এই লটারি কিনছেন।আব্দুল লতিফ নামের একজন অভিযোগ করে বলেন, ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলাতে ঘুড়তে এসেছি। এখানে এসে দেখি লটারির টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। বাধ্য হয়েই আমি ১২ টি টিকিট কিনেছি।

মোসলেম উদ্দিন মিয়া নামে আরেকজন বলেন, একদিকে মানুষের অভাব অনটন। অন্যদিকে বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। ঈশ্বরদী শহরের চতুর্দিকে উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো হচ্ছে। যেটি পরীক্ষার্থীদের জন্য খুবই অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আব্দুল হান্নান নামে আরেকজন ভ্যানচালক জানান, আশা নিয়ে প্রতিদিন ১০/১২ টি লটারি কেনেন এতে তার প্রতিদিন ২শ থেকে ৩শ টাকা খরচ হয়। যা আয় করছেন তার বেশির ভাগই লটারি কিনতে ফুরিয়ে যাচ্ছে। লটারি কেনা তার কাছে নেশার মতো হয়ে গেছে বলেও তিনি জানান।

অপরদিকে ভিতরে সার্কাস ও যাদু দেখানোর নামে নর্তকী নিয়ে এসে অশ্লিল নৃত্য দেখানো হচ্ছে। যাকে গ্রামের মানুষ পুতুল নাচ বলে থাকে। ছোট ছোট বাচ্চাদের আবদারে ৫০/১০০ টাকা মুল্যের টিকিট কেটে মা-বাবা ভিতরে যাদু ও সার্কাস দেখতে গিয়ে লজ্জার মুখে ভিতর তেকে ফিরে আসতে দেখা গেছে।

জহির প্রামানিক জানান, পরিবারসহ মেলায় এসে যাদু দেখতে পরিবারের ৮ জন সদস্য টিকিট কেটে ভিতরে মেয়েদের অশ্লিল নাচ দেখে দ্রুত বের হয়ে আসছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সন্ধা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব অশ্লিল নৃত্য দেখছে তরুণ ছেলেরা। যেটার জন্য সমাজের মানুষের নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) পিএম ইমরুল কায়েসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি ফোন রাখেন এখনই লটারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পাবনার অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মেলার লটারি খেলা ও যাদু দেখানোর কোন ধরণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। গতকাল সোমবার লটারি শুরু করলে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধ করেছি। তারপরও যদি কেউ লটারি বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিসেম্বর ১৬.২০২১ at ১৯:৪২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর