রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও বর্তমান বাস্তবতা

ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি জানিয়েছেন, প্রত্যাবাসন একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তবে দেশটির বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। সোমবার (১৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলশানে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। আগামী নির্বাচন ইতো নাওকি তিনি বলেন, সহযোগিতা করতে আন্তর্জাতিক মহল এগিয়ে আসবে। বড় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে। একই সঙ্গে সহিংসতা নিয়েও উদ্বেগ আগে থেকেই আছে। তবে এবারে তেমনটি না হওয়ার বিষয়েও আশাবাদী আমরা।

আরো পড়ুন:
ফুটবল বিশ্বকাপ ট্রফি বানায় কারা, এতে কতোটুকু স্বর্ণ আছে, দাম কতো?

মিয়ানমার তাদের নিজের তালিকা অনুযায়ী প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও শুরু করেনি। ২০২১-এর জানুয়ারিতে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ মিয়ানমারের একটি ভার্চুয়াল মিটিং হয়; যেখানে বাংলাদেশ গ্রামভিত্তিক রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের প্রস্তাব করে, যাতে করে রোহিঙ্গারা পুনর্বাসনের পর নিরাপদ বোধ করে। মিয়ানমার সরকার বলে-কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে যে ৪২ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধন করা হয়েছিল প্রত্যাবর্তনের জন্য, তাদের দিয়ে তারা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়।

বর্তমানে ছয় লাখের মতো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে বাস করছে (এর মধ্যে আবার দেড় লাখের মতো রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবেই বাস্তুচ্যুত) এবং মিয়ানমার সরকারের কোনো ইচ্ছা নেই এ সংখ্যা বাড়ানোর। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, সংখ্যা তো প্রাকৃতিকভাবেও বাড়তে পারে; তখন সরকার কী করবে? এক্ষেত্রে আগে থেকে কিছু বলা সহজ নয়। সামরিক সরকার হয়তো আবার দমনের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে সেটা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা চালাবে (যেমন, একাধিক সন্তানের জন্মদান নিয়ন্ত্রণ)।

এছাড়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করবে না, সেটাও নিশ্চিত। চীন ও রাশিয়ার কারণে সেটা সম্ভব নয়। তাছাড়া ইউএনএইচসিআরের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা খুব একটা শক্তিশালী নয়। কোনো সরকার যখন স্বেচ্ছায় কোনো জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে অনীহা প্রকাশ করে, সরকার নিজেই পদ্ধতিগতভাবে মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট হয়-এসব বিষয়ে ইউএনএইচসিআরের ভূমিকা খুব একটা কার্যকর নয়।

সামরিক সংঘাত কোনোভাবেই কাম্য নয়, আলোচনার টেবিলে সমস্যার সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশকে আরও একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে-মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার হলো চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন কার্যকর করতে এসব ব্যবসায়িক অংশীদার দেশের সঙ্গে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে, যাতে করে তারা মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।

ডিসেম্বর ১৪.২০২১ at ১৩:২৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর