বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলার ঘোষণা আ.লীগের

বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলা করা হবে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা (বিএনপি) যেখানে সন্ত্রাস করবে, সেখানেই প্রতিরোধ, প্রতিহত করা হবে বলেও তারা জানান। বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকালে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কথা জানান। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

আরো পড়ুন:
শার্শায় ফেনসিডিল সহ মাদক কারবারি আটক

মুখোমুখি দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। পাল্টাপাল্টি শো-ডাউনে উত্তপ্ত রাজনীতি। সেই উত্তাপে ঘি ঢেলেছে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের আল্টিমেটাম। এর আগেই বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করে শক্তি প্রদর্শনের খেলায় মেতেছে দুই দল। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় বিএনপি হুঙ্কার দিচ্ছে রাজপথে। আর বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করার অবস্থানে অটল থেকে পাল্টা শক্তির মহড়া দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, ১০ ডিসেম্বর কী ঘটবে ঢাকায়? বিএনপি কি এমন কিছু করতে চায়- যা দেশে রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে? দলটির নেতারা অবশ্য বলছেন তেমন পরিকল্পনাই নেই তাদের। বিএনপির লক্ষ্য ঢাকায় একটি বড় গণজমায়েত করা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের কথাবার্তায় স্পষ্ট- বিএনপির ডেটলাইন ‘১০ ডিসেম্বর’কে হালকাভাবে নেননি তারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তো বারবারই বলছেন- ১০ ডিসেম্বর ‘খেলা হবে’। তার মন্তব্য বিবেচনায় নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, ওইদিন বিএনপিকে ঠেকাতে ‘বড়’ প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগও। অবশ্য আল্টিমেটাম দিয়ে সরকারকে ফেলে দেয়ার সক্ষমতা বিএনপির রয়েছে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। ওয়ায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আজ শপথ নিতে হবে—বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঠিকানা বিএনপিকে দেশের রাজপথে মোকাবিলা করতে হবে। প্রস্তুত থাকেন, খেলা হবে, রাজপথে খেলা হবে, রাজপথে মোকাবিলা হবে, আগামী নির্বাচনে খেলা হবে, সেখানে আমরা জয়লাভ করবো। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।

এদিকে ১০ ডিসেম্বরের আগেই রাজধানীর রাজপথ দখলে নিতে চায় ক্ষমতাসীনরা। তৃণমূলের সম্মেলন শেষ করে ২৪ ডিসেম্বর সংগঠনটির জাতীয় সম্মেলন। প্রতিটি সম্মেলনেই বড় জনসমাবেশ ঘটাতে চায় তারা। বিএনপির হুঙ্কারের ভবিষ্যৎ কী: রাজনীতিতে আল্টিমেটাম পুরোনো ইস্যু। সাংগঠনিকভাবে দলকে চাঙা করার লক্ষ্যে অনেক সময় কেন্দ্র থেকে এ ধরনের ঘোষণা দিয়ে থাকে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু সম্প্রতি বিএনপির আল্টিমেটামের কোনো বাস্তব ভিত্তি আছে কিনা, ডিসেম্বরে কী খেলা হবে, কারা খেলবে, কতগুলো পক্ষ থাকবে, আদৌ কোনো খেলা হবে কিনা, নাকি হুঙ্কার-পাল্টা হুঙ্কার, এসব নিয়ে চলছে চুলচেরা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ঘোষণা করেছিলেন, ‘৩০ এপ্রিলের মধ্যে সরকারের পতন ঘটানো হবে। আমাদের হাতে ট্রাম্পকার্ড রয়েছে।’ সেই ট্রাম্পকার্ড নিয়ে রাজনীতিতে একটা বিশাল উত্তেজনা ছিল। সরকারও শঙ্কিত ছিল, মানুষের মনেও কৌতূহল ছিল। যদিও ৩০ এপ্রিল সরকারের পতন হয়নি। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত আবারও দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। বিএনপি-জামায়াত যে জায়গায় সন্ত্রাস করবে সেই জায়গায়ই প্রতিরোধ, প্রতিহত করা হবে।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিএনপি-জামায়াতকে বিতাড়িত করতে হবে। আজকে আমাদের এই শপথ নিতে হবে। বিএনপি-জামায়াত এ দেশের রাজনীতিতে অপশক্তি।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের পেট্রল বাহিনী আবার পথে নেমেছে। আজ থেকে আমরাও মাঠে নামলাম। বাংলাদেশকে এই অপশক্তিকে আক্রান্ত করতে দেওয়া হবে না। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন—আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী প্রমুখ।

নভেম্বর ১৪, ২০২২ at ১০:৩১:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/এসআর