চৌগাছায় দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত

চৌগাছার বহিলাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী পান্না খাতুনকে একটি থাপ্পড় মারার ঘটনায় গত ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় তাড়াহুড়ো করে ওই স্কুলের শিক্ষক নারগিস পারভীনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম। একইসাথে বরখাস্ত করা হয় সাইফুল ইসলাম নামে আরও এক শিক্ষককে। যদিও সাইফুল ইসলামকে বরখাস্ত করার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে তিনি ছাত্রীদের গায়ে পানি কুলি করে দেন। থাপ্পড় মারার কারণে শিক্ষিকা নারগিস পারভীনকে বরখাস্তের একদিন পর বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থী পান্নার পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে সবিস্তার বর্ণনা করেছে। মা আলেয়া বেগম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তার মেয়েকে থাপ্পড় দেয়ার ঘটনা অতিরঞ্জিতের মাধ্যমে তিলকে তাল করা হয়েছে। সামান্য থাপ্পড় দেয়ার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় করাটি তাদের কাছে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বলরাম কুমার ঘোষ, সদস্য মশিয়ার রহমান, শিক্ষার্থী পান্না খাতুন, তার পিতা মিজানুর রহমান, মা আলেয়া বেগম উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিদ্যালয়ের সভাপতি বলরাম কুমার ঘোষ।
আরো পড়ুন:
শত বছরের গাড়ি বাংলাদেশে,কয়েকটি জেলা ঘুরে বৃহস্পতিবার তারা আসেন যশোরে

লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, গত ৬ নভেম্বর বহিলাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নারগিস পারভীন বারান্দা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করছিলেন। বারান্দা ঝাড়ু দেয়ার পর শিক্ষিকা নারগিস পারভীন শিক্ষার্থী পান্নাকে সিঁড়ির নীচে ঝাড়ু দিতে বলেন। পান্না সাথে সাথে ‘না’ বললে শিক্ষিকা রেগে গিয়ে তার গালে একটি থাপ্পড় দেন, যা কোনোভাবেই কানে থাপ্পড় মারা না বলে জানান শিক্ষার্থীর বাবা-মা। শিক্ষিকার থাপ্পড়ে তাদের মেয়ের কোনো সমস্যা হয়নি বলে বাবা-মা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন।

পান্নার মা আলেয়া বেগম বলেন, তার মেয়ের কানের সমস্যা বহুদিনের। স্কুলে তাকে থাপ্পড় মারার দু’দিন পরে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে চৌগাছা হাসপাতালে যান। সেখানে পূর্ব থেকেই এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনিই তাদের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করেন। ডাক্তার দেখানোর পর ওইব্যক্তি আলেয়া বেগমকে সাথে নিয়ে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এবং সেই লোকই ইনিয়ে বিনিয়ে সবকিছু বলেন। এরপর আলেয়া বেগম তার মেয়েকে নিয়ে বাড়ি চলে যান। পরের দিন জানতে পারেন তার মেয়ে পান্নাকে থাপ্পড় মেরে স্কুল শিক্ষিকা নাকি কানের পর্দা ফাটিয়ে দিয়েছেন, যা ডাহা মিথ্যা বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন আলেয়া।

শিক্ষার্থী পান্না খাতুনের মা আলেয়া বেগমের হয়ে অতি উৎসাহী ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে দায়সারা তদন্ত করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর সেই দায়সারা তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েই তড়িঘড়ি সাময়িক বরখাস্ত করেই দায়িত্ব শেষ করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম,- এমন অভিযোগ শিক্ষক নেতাদের। তারা বলছেন, গ্রাম্য নারী আলেয়া বেগম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে, তিনি কী করতে পারেন, তার অফিস কোথায় কিছুই জানেন না।

অজ্ঞাত পরিচয়ের এক অতি উৎসাহী ব্যক্তি তাকে নিয়ে এসব করিয়েছেন। তাহলে তদন্ত প্রতিবেদনে এসব নেই কেন? এর বাইরে শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ছাত্রীদের গায়ে যে পানি কুলি করে দেন তা আলেয়া বেগম কীভাবে জানলেন? আর তার মেয়ে পান্নাকে থাপ্পড় মারার সাথে সাইফুল ইসলামের কুলি করে গায়ে পানি দেয়ার সম্পর্ক কী? সাইফুল ইসলামের এ ধরনের কর্মকান্ডের অভিযোগ কেন আগে করা হয়নি? উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষিকার থাপ্পড় মারার কথাটিই কেবল জানিয়েছেন ডিপিইওকে, যা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন না বলে দাবি শিক্ষক নেতাদের। এমন দাবি, শিক্ষক এবং অভিভাবকদেরও।

তারা বলছেন, শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের পর ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ করায় যশোরে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের ইমেজ নষ্ট হয়েছে। যশোরে ১২৮৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেকগুলোতে নানা সমস্যা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চলছে। তদন্ত রিপোর্টও এসেছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আবার কোনো কোনোটিতে অভিযোগ এসে পড়ে আছে দিনের পর দিন। অথচ সেইগুলোর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কিন্তু স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ছাড়াই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অনেক শিক্ষক বলছেন।

এ বিষয়ে চারজন শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে তদন্তে গ্যাপ রয়েছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে তড়িঘড়ি করা হয়েছে। যা সঠিক হয়নি। একটু সময় নিয়ে তদন্ত করলে এই সমস্যা তৈরি হতো না।’ একজন শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘যশোরে পুরানো কোনো কর্মকর্তা নেই। এ কারণে ডিপিইওকে সঠিক পরামর্শ দেয়ার মতো কর্মকর্তার অভাব রয়েছে। তিনি নতুন হওয়ায় সবকিছু ঠিকমতো বুঝে উঠতে সময় লাগবে।’ চৌগাছা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি বরখাস্ত করিনি। বরখাস্ত করেছেন ডিপিইও। আমি সুপারিশ করেছি মাত্র।’ পুরো বিষয়টি জেনেবুঝে সুপারিশ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।এখন বিভাগীয় মামলা হবে।

নভেম্বর ১২, ২০২২ at ২০:১৪:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস