আমন চাষে ধস সাতক্ষীরায়, পোকার আক্রমণ ও অনাবৃষ্টিতে

সাতক্ষীরা এবার জেলায় ৮৯ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৮৮ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে হাইব্রিড ধান তিন মেট্রিক টন, উফসি ২.৭০ মেট্রিক টন ও স্থানীয় এক দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:
এইট পাস, মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চললে উন্নয়ন হয় না: প্রধানমন্ত্রী

শিবপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের রাখালতলা বিলের কৃষক মুহসিন আলী জানান, তিনি ছয় বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। গাছ এক ফুটের ওপরে বাড়েনি। ধানের শীষ যথেষ্ট ছোট। শীষে মাজরা বা বেঁশো পোকা লাগায় কালো রং এর চিটে হয়ে গেছে। খড় কাটতে হলে যে মজুরি লাগবে তাতে তিনি আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফলে জমিতে গরু ও ছাগল লাগিয়ে দিয়েছেন।

একই এলাকার কৃষক মুনসুর আলী ও আজগার আলী জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় তারা কৃষি বিভাগের শরণাপন্ন হয়েছেন। পরে বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে চাষ করেছেন। বেশি টাকা দিয়ে সার ও কীটনাশক কিনতে হয়েছে। এরপরও তাদের ১৪ বিঘা জমির মধ্যে আট বিঘা জমিতে একেবারেই ধান নেই। প্রায় শুকনা ধান গাছ কেটে বস্তায় ভরে গরু ছাগলের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। শ্যালো মেশিনের বকেয়া পানির বিল, সার ও কীটনাশকের বকেয়া বিল পরিশোধ করবেন কি করে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

এ অবস্থা শুধু সাতক্ষীরা সদরের নয়, কালিগঞ্জ, দেবহাটা, তালা, কলারোয়াও। আমন ধানের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন না হওয়ায় আগামীতে ধান চাষ না করার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছেন দেবনগরের পরান দাস, ছাতিয়ানতলার কার্তিক দাস, মাছখোলার শাহাদাৎ হোসেনসহ কয়েকজন কৃষক। জানতে চাইলে শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার একর আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ও লবণাক্ততার কারণে ৫ থেকে ৬০০ বিঘা জমিতে ধান হয়নি বললেই চলে। কৃষি বিভাগ চাষিদের পাশে না দাঁড়ালে আগামী বার তারা ধান চাষে বিরত থাকতে পারে।

গত বছর যে সব জায়গায় জলাবদ্ধতা ছিল না সেসব জায়গায় বিঘা প্রতি ১৪ থেকে ১৫ বস্তা ধান হয়েছে। এবার সেইসব জায়গায় ধান হবে দুই থেকে তিন বস্তা করে। শ্যালো মেশিনের পানির বিল, সার ও কীটনাশকের দোকানের বকেয়া পরিশোধ করতে পারবে না কৃষকরা। এমনকি সরকারি প্রণোদনা না পেলে আগামী বছরে কৃষকরা আমন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

সাতক্ষীরা খামারবাড়ির উপ পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন জানান, আমন ধান পুরোপুরি বৃষ্টি নির্ভরশীল। পরিমাণের তুলনায় দেরিতে বৃষ্টি হলেও তা অপ্রতুল। সদর উপজেলার জগন্নাথপুর, শিবপুর, কাশেমপুর, নেবাখালীসহ কিছু স্থানে সামান্য কিছু জমিতে ধানের ফসল ভালো হয়নি। বৃষ্টি দেরিতে হওয়ায় ও লবণাক্ততা এর মূল কারণ। কৃষি বিভাগ সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করায় অনেককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা গেছে। দ্রত ধার কেটে আগাম সরিষার চাষের প্রণোদনার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে কৃষকদের। তা ছাড়া ওইসব জমিতে ইরি ও সবজি চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

নভেম্বর ১১,২০২২ at ২১:৩২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/এসকে