জিনের গঠন বদলে যাবে, আটকে যাবে ক্যানসারও

আতঙ্কের নাম ক্যানসার। এক বার শরীরে বাসা বাঁধলে মুক্তি পাওয়া খুবই কঠিন। গবেষকেরা প্রতি নিয়ত চেষ্টা করে চলেছেন, এর নিরাময় খুঁজে বার করার। কিন্তু অধিকাংশ ক্যানসারই অত্যন্ত জটিল। পাশাপাশি, ব্যক্তিভেদে তার রূপও ভিন্ন। তাই এখনও সহজ নয় ক্যানসার থেকে আরোগ্য। তবে নবতম প্রযুক্তির হাত ধরে বদলে যেতে পারে এই ছবি। বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান পত্রিকা নেচার-এ প্রকাশিত হয়েছে এক লেখা। সেখানে খোঁজ দেওয়া হয়েছে এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতির যা বদলে দিতে পারে ক্যানসার চিকিৎসার ভবিষ্যৎ।

আরো পড়ুন:
হাসপাতালে দেরি করে যাওয়ায় বাড়ছে ডেঙ্গিতে মৃত্যু

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহার করেছেন ‘ক্লাসটার্ড রেগুলারলি ইন্টারস্পেসড শর্ট প্যালিনড্রোমিং রিপিটিস’ বা ‘ক্রিসপর’ পদ্ধতি। জিনগত উপাদানই জীবনের ভিত্তি। এই ক্রিসপর পদ্ধতিতে বদলে ফেলা যায় সেই জিনের গঠন। এত দিন সাধারণত ডিএনএ-র সমস্যা নির্মূল করতেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন গবেষকেরা।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মানবদেহে টি-সেল নামে এক প্রকার বিশেষ কোষ থাকে। এই কোষগুলিই রোগজীবাণুকে আক্রমণ করে। ক্রিসপর পদ্ধতি ব্যবহার করে এই কোষগুলির জিনগত উপাদানে কিছু বদল আনা হয়েছে। ক্যানসার কোষের জিনগত উপাদানের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে আনা হয়েছে বদল যাতে সেগুলি ক্যানসার কোষকে আরও বেশি আক্রমণ করতে পারে।

বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রত্যেক রোগীর জন্য বিশেষ ভাবে নির্মিত টি-সেল তৈরি করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ক্যানসার কোষের কোথায় আক্রমণ করবে টি-সেল, আগে থেকেই স্থির করে দেওয়া হয় সেই লক্ষ্যও। মোট ষোলো জনের দেহে প্রয়োগ করা হয় এই বিশেষ ভাবে তৈরি কোষগুলি। ১ মাস পর দেখা যায়, ক্যানসার কোষের পার্শ্ববর্তী কোষগুলিতে বেশি পরিমাণে সঞ্চিত হয়েছে নবনির্মিত টি-সেল। ষোলো জন রোগীর মধ্যে ৫ জনের দেহে ক্যানসার আর বাড়েনি। কেবল ২ জনের দেহে দেখা গিয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

এই প্রথম মানুষের উপর এ ধরনের পরীক্ষা করা হয়েছে। তাই মানবদেহে কোনও রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না তাঁরা। সেই জন্য খুবই অল্প পরিমাণে দেওয়া হয় ওষুধ। পরবর্তী পরীক্ষাগুলিতে এই মাত্রা আরও বাড়ানো হবে। এই প্রক্রিয়া যে কার্যকর হতে পারে, সেটিই সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। যদি ভবিষ্যতে এই পদ্ধতি আরও উন্নত এবং কার্যকর হয়, তবে ক্যানসার চিকিৎসায় নয়া দিগন্ত খুলে যেতে পারে বলে আশা গবেষকদের।

নভেম্বর ১১,২০২২ at ১৫:০০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস