জ্বালানি নিরাপত্তায় নজর

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম এ প্রসঙ্গে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তায় সরকারকে জোরাল কৌশল নিতে হবে। জ্বালানির অভাবেই বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট। বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে হবে, প্রয়োজনে কিছু গ্যাস আমদানিও করতে হবে। ভোলার গ্যাস শতভাগ ব্যবহারের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কয়লা মাটির নিচে রেখে দিলে সুফল আসবে না। কয়লা তুলে ব্যবহারেই সুফল। কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কয়লা উত্তোলন হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানির প্রয়োজন নেই। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানিনির্ভর না হয়ে স্থানীয় উৎসগুলোর ওপর নির্ভরতাও বাড়াতে হবে।

আরো পড়ুন:
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ইইউ’র প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের

ভবিষ্যতে জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় ‘দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা কৌশল’ নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। ভবিষ্যতে জ্বালানি সংকট নিরসনে তেল ও গ্যাস আমদানির জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ইতোমধ্যেই। ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল আনার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। একইসঙ্গে দেশীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়েও কাজ চলছে। গ্যাস: দেরিতে হলেও দেশীয় ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনে সরকার কাজ শুরু করেছে। পেট্রোবাংলা ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার গ্যাস কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে। ভোলায় ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২ কূপ জুনের মধ্যে খননকাজ শুরু হবে।

ভোলার শাহবাজপুরের টবগী-১ গ্যাস কূপ থেকে প্রতিদিন ২ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে এসব গ্যাসকূপ থেকে ৭০-৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। ভোলা থেকে পাওয়া গ্যাস বিকল্প উপায়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইকে স্বপ্রণোদিত হয়ে গ্যাস দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কারণ ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কাতারসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা প্রত্যেকে আমাদের এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) গ্যাস দিতে চেয়েছে। এখন আমাদের সোর্স কান্ট্রি অনেক থাকায় জ্বালানি তেল নিয়ে আমরা খুব বেশি চিন্তিত নই।

তেল: ভবিষ্যতে জ্বালানি তেলের সংকট মোকাবিলায় নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৬০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধনের জন্য নতুন রিফাইনারি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ইস্টার্ন রিফাইনারির ১৫ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) পরিশোধনের সক্ষমতা রয়েছে। ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য সক্ষমতা দ্বিগুণ করে ৩০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জ্বালানি সচিব মাহবুব হোসেন জানান, অল্প সময়ের মধ্যেই নতুন রিফাইনারি প্রস্তুত হবে। তাছাড়া জ্বালানি তেলের মজুত বাড়ানোর বিষয়েও কাজ শুরু হয়েছে। ৬০ দিনের তেল মজুতের সক্ষমতা অর্জনের জন্য ডিপো স্থাপনের কাজ চলছে।

বিদ্যুৎ: বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী দেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে জ্বালানির প্রয়োজন, তা না পাওয়ায় উৎপাদনে ঘাটতি হয় এবং সংকটের সূচনা হয়। আগামী দিনগুলোতে বিদ্যুতে সুখবর আছে। বর্তমানে ৭ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এর মধ্যে মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, রামপালে ১ হাজার ৩২০, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটসহ আরো অনেক ছোট ও মাঝারি ধরনের বিদ্যুৎ প্রকল্প উৎপাদনে এলেই বিদ্যুৎ সংকট এতটা থাকবে না।

কয়লা: বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ৭ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ কয়লার প্রয়োজন হবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা কয়লায় রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। তাই ভবিষ্যৎ জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় দেশীয় কয়লা উত্তোলনে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

এদিকে ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল আমদানির উদ্যোগ জোরাল হয়েছে। ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্পে’র মাধ্যমে আগামী বছরের মার্চ মাস থেকে দেশে ডিজেল আমদানি শুরু হবে। ২০২০ সালে পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এদিকে গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে ভারত থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ভারত থেকে তেল আমদানি করতে পারবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি প্রয়োজন। জ্বালানির সাপ্লাই চেইনে সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটেছে। দুই তিন মাসের মধ্যে কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট উৎপাদনে এলে ঘাটতি কমবে।

নভেম্বর ১১,২০২২ at ১৯:৫৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস