শিক্ষা প্রশাসন যে সকল কারণে বিশৃঙ্খল

অদক্ষতা, অযোগ্যতা, খামখেয়ালিপনা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে শিক্ষা প্রশাসনে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। এর ফলে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন দপ্তরসহ শিক্ষা বোর্ডগুলোতে দক্ষ ও যোগ্য জনবল পদায়ন করতে না পারায় শিক্ষা প্রশাসনে বিতর্কিত ও ভুল কাজের কারবার বেড়ে চলছে। তদবিরের মাধ্যমে যারা দায়িত্বপূর্ণ পদে বসেন তারা ওই চেয়ারে বসে কি কি কাজ করতে হয়, কোন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তত্ত্বাবধান করতে হয়, কোথায় কার সঙ্গে কিভাবে সমন্বয় করতে হয়, আইন ও বিধিবিধানে কি বলা আছে তা না জেনেই অধীনস্থদের আদেশ দানের মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব ‘খালাস’ করতে চান।

এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা বোর্ডের ওপর এবং শিক্ষা বোর্ড শিক্ষকদের ওপর দায় চাপিয়ে ‘নিষ্কলঙ্ক’ হতে চাইছে। কার্যত সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগও নিতে পারছে না শিক্ষা প্রশাসন। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলমান এইচএসসি বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ভুল প্রশ্নে এক ঘণ্টা পরীক্ষা নেয়ার পর স্থগিত করার মত ঘটনাগুলো সামনে আসার পর শিক্ষা প্রশাসনের খামখেয়ালিপনার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেন ডা. দীপু মনি। এর এক মাস পরেই এসএসসি এবং তিন মাস পরে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। এর পরে করোনার ছোবলে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাপ্রাপ্ত হয়। করোনা যতদিন ছিল ততদিন বিষয়গুলো নিয়ে খুব একটা পর্যালোচনা হয়নি। কিন্তু করোনা পরবর্তীতে শিক্ষা প্রশাসনের কাজ যত বেড়েছে ততই বিতর্কের সৃষ্টি হচ্ছে। গত মাসে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় একজন কেন্দ্র সচিব প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। সে সময়ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ছিল। সেটি কাটতে না কাটতেই চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন। একই সঙ্গে কারিগরি বোর্ডে ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, আগেও এসব পরীক্ষা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। আগের পরীক্ষাগুলোতে এসব ঘটনা না ঘটলেও এখন প্রতিনিয়ত ঘটছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আগে দক্ষ ও যোগ্যদেরকে শিক্ষা বোর্ডে পদায়ন করা হতো। তারা যোগ্য শিক্ষকদের দিয়ে প্রশ্ন প্রণয়ন ও পরিশোধন করাতেন। ফলে প্রশ্নপত্রে বিতর্কিত কোনো কিছু থাকত না। এখন তদবিরের মাধ্যমে শিক্ষাবোর্ডে পদায়ন হওয়ায় আগের ওই ‘আভিজাত্য’ নেই। এখন ভাবটা হচ্ছে কোনোরকম কাজ শেষ করতে পারলেই হলো।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে বলা হয়েছে, বাংলা প্রথমপত্রের বিতর্কিত প্রশ্নটি করেছেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল। আর প্রশ্নপত্রটি পরিশোধনের (মডারেশন) দায়িত্বে ছিলেন নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দীন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান, মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারমতে, প্রশ্ন সেটিং ও প্রশ্ন মডারেটিং- এই কাজগুলো এমনভাবে হয় যে, যিনি প্রশ্ন সেট করে যান তিনি আর ওই প্রশ্ন দেখতে পারেন না। যিনি মডারেট করে যান তিনিও তা পরে দেখতে পারেন না। সেটার এবং মডারেটর ছাড়া কোনো একটা প্রশ্নের একটা অক্ষরও কারো দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু প্রশ্ন প্রণয়ন ও পরিশোধনকারীদের ওরিয়েন্টেশনে কি কি বলা হয় তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

নভেম্বর ০৯,২০২২ at ১১:৩৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/সর