আদালত নিয়ে কটুক্তি ও মানহানিকর পোষ্ট করাতে মনিরের ৬বছর ৯মাসের জেল

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আসামী নবীগঞ্জের বহুরুপী প্রতারক নারী ফরজুন আক্তার মনি(৪০)কে আজ ৬ নভেম্বর রবিবার সকালে সিলেট সাইবার আদালত ৬ বছরের জেল ৪ লাখ টাকা জরিমানা ও ৯ মাসের সাজা প্রদান করেছে। ফরজুন আক্তার মনি’র ফেসইবুকে নানা রকম পোষ্ট করে জন প্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইনজীবি ও সাংবাদিকদের নানা রকম মানহানি করে আসছিলো। জেল থেকে বের হয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো বিতর্কিত নারী ফরজুন আক্তার মনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসইবুকে নানা অপ-প্রচার, অনেক রকম প্রতারণা, ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় পত্র দিয়ে বিভিন্ন লোকজনের কাছে চাঁদাবাজি। এমনকি পুরুষ সেজে নারীদের যৌন হয়রানি করতো। সে পুরুষ সেজে নবীগঞ্জ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সেলিনা পারভীন, ইউপি সদস্য মরিয়ম বেগমকেও যৌন হয়রানি মুলক ম্যাসেজ দিয়ে হয়রানি করে আসছিলো।

আরো পড়ুন :
কয়েক’শ চাকরী প্রত্যাশী বিপাকে

এসব বিষয়ে নবীগঞ্জের সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এম,এ আহমদ আজাদ ডেকে এনে এসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করলে, এতে সে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তখন সাংবাদিক আজাদকে নিয়ে অশ্লীল ভাষায় মানহানিকর কয়েকটি পোষ্ট করলে সেই অভিযোগে গত ২২/০৯/২০১৯ তারিখে নবীগঞ্জের সিনিয়র সাংবাদিক এম,এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ঐ দিনই বহুরুপী নারী ফরজুন আক্তার মনিকে গ্রেফতার করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ।

পরে সে দীর্ঘ তিন মাস কারাভোগ করে উচ্চ আদালতের জামিনে এসে নানা অপকর্ম শুরু করে। সে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হাইকোটের জামিনে এসে সেই ঐ মামলার জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে ফেসইবুকে ধারাবাহিক পোষ্ট ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে থাকে। মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে ফেসইবুকে নানা রকম কটুক্তি করে। গত ১৫ জুন ও ৫ জুলাই ঐ বেপরোয়া নারী ফরজুন আক্তার মনি আদালতকে নিয়ে কটুক্তি মুলক পোষ্ট ও কমেন্ট করে বিভিন্ন আইডি দিয়ে।

এতে গত ১০ অক্টোবর মাসে মামলার নির্ধারিত তারিখে আসামী ফরজুন আক্তার মনি আদালতে উপস্থিত না হলে মহামান্য সাইবার আদালত সিলেট এর বিচারক আবুল কাশেম সরকার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গত ১১ অক্টোবর সে আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে তার জামিন না মঞ্জুর করে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। রবিবার (৬ নভেম্বর) আসামী ফরজুন আক্তার মনির উপস্থিতিতে সিলেট সাইবার আদালতের বিচারক আবুল কাশেম সরকার মামলার রায় ঘোষনা করেন। তিনি রায়ে ফরজুন আক্তার মনিকে ৬ বছরের স্বশ্রম সাজা ও ৪ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ বছর ৯ মাসের সাজা প্রদান করেন।

এসময় বাদী পক্ষে আইনজীবি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, সরকারী কৌশলী (এপিপি)দেলোয়ার হোসেন আজহার ও এডভোকেট গোলাম আজম। আসামী পক্ষে ছিলেন, এডভোকেট কাওসার আহমদ। মামলার রায় ঘোষনার পর মামলার বাদী সিনিয়র সাংবাদিক এম,এ আহমদ আজাদ বলেন, বহুরুপি প্রতারক নারী ফরজুন আক্তার মনি দীর্ঘ দিন ধরে সাধারণ মানুষ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জন প্রতিনিধি, আইনজীবি, সাংবাদিক ও আদালতকে নিয়ে ফেসইবুকে অপ- প্রচার ও মানহানিকর পোষ্ট করে আসছিলো। আদালতের এ রায়ে তিনি ন্যায় বিচার পেয়ে খুশি হয়েছেন বলেও জানান। কে এই মনি? মনির দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে সিআইডির এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়। বহু রূপের অধিকারী মনি বিশেষ করে নিজেকে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয় ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের মেয়ে আবার অনেকের কাছে ভাতিজি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল।

নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফেসইবুকে মানহানীকর মিথ্যা স্ট্যাটাস ও বিভিন্ন ভূয়া একাউন্ট খোলে প্রতারণা করেছিল। তার বিরোদ্ধে অভিযোগ উঠে- প্রতি রাতেই নারীদের বিভিন্ন অশালীন ম্যাসেজ দিতো মনি। তার টার্গেট ছিল- নারী জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা ও স্কুল-কলেজের ছাত্রী। এদেরকে ম্যাসেজ দিয়ে ব্ল্যাক-মেইল করতো। এসব ম্যাসেজের স্ক্রীণশর্ট প্রকাশ হওয়ায় মনি নারী না পুরুষ এনিয়েও নানান প্রশ্ন উঠে। প্রতারক মনির এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই মনি তার ফেইসবুক আইডিতে বিভিন্ন রকম হুমকি ধামকি মূলক ও মানহানীকর পোস্ট করে অপদস্ত করতো। ওই নারী দীর্ঘদিন যাবত নিজেকে সাংবাদিক ও মানবাধীকারকর্মী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে প্রতারণা করে আসছিল।

এমনকি তার অপকর্মের প্রতিবাদ করায় সাংবাদিক এম এ আহমদ আজাদ ও এম মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এর পর প্রায় ৬/৭ মাস পূর্বে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সমকাল প্রতিনিধি এম এ আহমদ আজাদ ও সাংবাদিক এম মুজিবুর রহমান এর বিরুদ্ধে তার ফেইসবুক আইডিতে একাধিক মানহানীকর স্ট্যাটাস দিলে সাংবাদিক আজাদ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য প্রযুক্তি আইনে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার বিবরণে জানা যায়, প্রতারক ফরজুন আক্তার মনি পুরুষ সেজে নবীগঞ্জের উপজেলার নারী জনপ্রতিনিধি ও সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন নারী ইউপি সদস্যসহ আরও অনেককে অশ্লীল ম্যাসেজ পাঠিয়ে যৌন হয়রানি করে আসছিল।

সে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অনেকের সাথে সংখ্যতা গড়ে তোলে। পরবর্তীতে তাদেরকে যৌন হয়রানী করতো। সে পুরুষ সেজে নবীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সেলিনা পারভীন, মহিলা ইউপি সদস্য মরিয়ম বেগমকে যৌন হয়রানি মুলক ম্যাসেজ দিয়ে হয়রানি করে আসছিলো। এছাড়া বিশেষ করে প্রবাসীদের বিভিন্ন ম্যাসেজ দিয়ে নানান উপহার সামগ্রী হাতিয়ে নিতো। অনেকেই জানান- ফরজুন আক্তার মনি বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করতো এমন কী ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতা ও প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করছিল।

নভেম্বর ০৬,২০২২ at ২০:০৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/সর