ঝরে পড়া শিশুরা শিক্ষা নিচ্ছে শেখ রাসেলের শ্রেণীকক্ষে, মিলছে উপবৃত্তি-খাবার

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার তোষাই শেখ রাসেল বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রত্যাহিক সমাবেশে অংশ নিয়েছে।

চারদিকে চোখ জুড়ানো ফসলের মাঠ। মাঝখানে ছোট্ট একটি পাঠশালা। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হুইহুল্লোর। নাম তোষাই শেখ রাসেল বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। মুজিবপ্রেমী এক যুবক ব্যক্তি উদ্দ্যেগে এই বিদ্যালয়টি তৈরি করেছেন। তাই নামকরণ করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নামে।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম তোষাই-জোড়গাড়ীতে এই বিদ্যালয়টির দেখা পাওয়া যায়। এটি উপজেলার ৪নং ঘোড়াঘাট ইউপির অর্ন্তগত। চারদিকে টিনের বেড়া দেয়া এই ছোট্ট বিদ্যালটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২৮ জন। এই গ্রামের চারপাশে প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকায় আর কোন সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এছাড়াও পারিবারিক অভাব অনটন সহ নানা কারণে এই গ্রাম সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা থেকে ঝরে পড়েছিলো।

ঠিক সেই সময় আলো ছড়াতে শুরু করে তোষাই শেখ রাসেল বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। গরিব ও অসহায় পরিবারের ঝরে পড়া শিশুরা ফিরতে শুরু করে বিদ্যালয়ের বারান্দায়। ২০১০ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় যুবক নুরুনবী মিয়া। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে তিনি বেছে নেন ফ্রিল্যান্সিং পেশা। নিজ গ্রামে কাজ করার সুবাদে ঝরে পড়া শিশুদের জন্য তিনি নিজস্ব জমিতে গড়ে তোলেন এই বিদ্যালয়টি।

শুরুর দিকে বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী ছিল মাত্র ৫০ জন। বর্তমানে সেখানে সম্পুর্ণ বিনামূল্যে পড়াশুনা করছে ১২৮ জন শিশু। উপস্থিতির হার প্রায় ৮৫ শতাংশ। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা নুরুনবী ফ্রিল্যান্সিং থেকে উপার্জন করা অর্থের একটি অংশ ব্যয় করে এই বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে আসা শিশুদের পেছনে।

বিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ৬ দিন খাবার পায় এখানে। তাদেরকে ৩ দিন বিস্কুট এবং ৩ দিন চকলেট দেওয়া হয়। এছাড়াও প্রতিটি শিশু প্রতিমাসে ১‘শ টাকা হারে উপবৃত্তি পায়। আর এই পুরো টাকা নিজেই বহন করেন নুরুনবী। তার এই ব্যক্তিক্রমী ছোট ছোট উদ্দ্যেগে স্কুলমুখী হচ্ছে ঝরে পড়া শিশুরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হিলি-ঘোড়াঘাট আঞ্চলিক সড়কের বলাহার বাজার থেকে ৫০০ মিটার ভেতরে বিদ্যালয়টির অবস্থান। গ্রাম ও ফসলী জমির বুকচিরে মেঠোপথ দিয়ে যেতে হয় এই স্কুলে। বিদ্যালয়টিতে টিনের চালাযুক্ত ৬টি শ্রেণীকক্ষ এবং একটি অফিস রুম রয়েছে। সবগুলো রুম টিনে ঘেঁড়া। চালু রয়েছে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম। শ্রেনীকক্ষের সাথেই পুকুর ঘেঁষা ছোট্ট একটি মাঠ। বিদ্যালয়টিতে মোট ৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন। তাদের মধ্য ৩ জনই নারী।

বিদ্যালয়টির দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী কাউসার ইসলাম। তার মা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘হামার বাড়ির ধারত আগে স্কুল আছিলো না। তাছাড়া অভাবের কারণে হামার বেটাক কোনদিন স্কুলেত পাঠাইনি। এই স্কুল হওয়ার পর গাঁয়ের সব ছোলপোল স্কুলেত যায়। সকাল বেলা যাওয়ার কথা কবাও লাগেনা না। চকলেট আর বিস্কুটের লোভে ছোলেরা নিজেরাই স্কুলেত যায়’

বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা নুরুনবী মিয়া বলেন, ‘গ্রামের শিশু ও তরুনদের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া দেখে আমি এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করি। শিক্ষকদের বেতন ও শিক্ষার্থীর খাবার সহ আনুষঙ্গিক সবকিছু আমি নিজে বহন করি। বিদ্যালয়টির পেছনে প্রতিমাসে আমার খরচ প্রায় ৪০ হাজার টাকা। বিদ্যালয়টি নির্মান করার পর থেকে শিশুরা বাড়িতে বসে না থেকে নিয়মিত স্কুলে আসছে। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য আবেদন করেছি।

নভেম্বর ০৬,২০২২ at ১৫:৫৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/সর