ডিলারের প্রতারণায় নিস্ব শত শত কৃষক

ডিলারের প্রতারণায় ভুল জাতের ধানের বীজ বপন করে বিপাকে পড়েছেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর কয়েকশ কৃষক। আমনের মৌসুমে বপন করা এসব বীজে সময়ের আগেই গজিয়েছে ধানের শীষ। যা অপরিপক্ক হওয়ায় অধিকাংশতেই ধরেছে চিটা। ফলন বিপর্যয়ে দিশেহারা কৃষক। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, সাধারণ কৃষকের সরলতার সুযোগে ‘স্বর্ণ গোটা ও বিয়ার ১১’ জাতের বীজের কথা বলে বিদেশি জাতের ধানের বীজ ধরিয়ে দেন খুচরা ডিলাররা। আমনের মৌসুমে বপন করা এসব বীজে অসময়ে ধানের শীষ গজিয়েছে।

আরো পড়ুন:
কাজিপুরে এইচএসসি পরীক্ষায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ

এতে ধানের চেয়ে চিটাই বেশি। যেখানে প্রতি একর জমিতে ৪০ থেকে ৫০ মন ধান আসার কথা, সেখানে ১০ থেকে ১৫ মন ধান আসাই দুষ্কর। এতে বড় ধরনের ক্ষতি বইতে হবে তাদের। সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসবেন অনেকেই। তাই দিশেহারা হয়ে পরেছেন কৃষি নির্ভর প্রান্তিক জনপদের কৃষকরা। উপজেলার পূর্ব নেতা গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক ইউনুস মৃধা জানান, তিনি এবছর চার একর জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। এরমধ্যে দুই একর জমিতেই ডিলারের প্রতারণার কারণে ভুল বীজ বপন হয়েছে। অসময়ে গজিয়েছে ধানের শীষ। অধিকাংশ শীষই অপরিপক্ক এবং চিটাযুক্ত। এতে কাঙ্ক্ষিত ফলন না পাওয়ার আশঙ্কা তার।

একই গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন জানান, নেতা বাজরের খুচরা ডিলার বাচ্চুর কাছ থেকে আমরা ধান এনেছি। আমরা তার কাছে স্বর্ণ গোটা ধান চেয়েছি। কিন্তু সে আমাদেরকে দিয়েছেন লাল গুটি স্বর্ণা নামের একটি জাতের ধান। আমরা না বুঝেই ধানের বিজ বপন করেছি। এরপর এক মাসের মধ্যেই ধানের শীষ বের হয়। যার অধিকাংশই চিটা। এতে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হবে। এবছর তেল ও সারের দাম বেশি থাকায় জমি আবাদে খরচ দিগুণ হয়েছে। এরমধ্যে আবার এই ধস! দিশেহারা হয়ে পথে বসার অবস্থা। প্রতারক ডিলারের মহা শাস্তি হওয়া দরকার। যাতে ভবিষ্যতে কোন নিরিহ কৃষক আর এমন প্রতারণার শিকার না হয়।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাধঘাট এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক সাইমুন মিয়া জানান, বাহেরচর বাজারের খুচরা ডিলার এনায়েত ভাইর কাছ থেকে বিজ এনে ক্ষেতে লাগাইছি। বিক্রির সময় সে স্বর্ন গোটা ধান বলছে। পরে ধানের শীষ বের হওয়ার পরে জানতে পারি ইন্ডিয়ান জাতের ধান। যেই ধান বাংলাদেশে হওয়ার উপযোগী না। ভুল জাতের ধান গালানোর কারণে, ধানের চেয়ে চিটার সংখ্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে। তিন এক অংশ ফলনও পাওয়া যাবেনা। এত বড় প্রতারণা মানুষ মানুষের সাথে করতে পারেনা।

এদিকে সময় সংবাদের প্রতিবেদকের এমন তথ্যের ভিত্তিতে ক্ষেতে গিয়ে রীতিমতো অবাক হন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। রাঙ্গাবালী উপজেলা উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মিলন কুমার রায় জানান, এরকম কোন জাতের ধানের বীজ বাংলাদেশে উদ্ভাবন হয়নি। এটা ভারত থেকে চোরাই পথে আনা একটি জাত। বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে এটা ম্যাচিং হবে কিনা তা জানা নেই। রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ জানান, আমরা সব সময় বিএডিসি অনুমোদিত ধানের বিজ বপন করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। কৃষকদের সাথে যারা প্রতারণা করেছে তারা বিএডিসির সরকারি লাইসেন্সধারী ডিলার নয়।

ধান বিক্রির বৈধতা নেই তাদের। এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, চলতি বছর রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এতে ১ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে অন্তত ২শ’ একর জমির ফসল। এতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় উৎপাদন কমে আসার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নভেম্বর ০৬,২০২২ at ১৫:৪৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/সর