কেমন ছিল মহানবী (সা.)-এর ঘরবাড়ি

মানুষের আশ্রয়, বিশ্রাম, একান্তে সময় কাটানোর জন্য বাসস্থান মহান আল্লাহর মহামূল্যবান নিয়ামত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর কিছু নিয়ামতের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বাসস্থানের কথাও উল্লেখ করেছেন। মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি হলো বাসস্থান। খাদ্য, বস্ত্র, অন্নের পর বাসস্থানই মানুষের মৌলিক অপরিহার্য জিনিস। আমাদের নবীজি (সা.)-এরও বাড়িঘর ছিল। চলুন জানা যাক, প্রিয় নবীজি (সা.)-এর ঘর কেমন ছিল। মদিনায় হিজরতের পর প্রথমত নবীজি (সা.) বিশিষ্ট সাহাবি আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)-এর ঘরে অবস্থান করেছেন। পরে মসজিদ-ই-নববীর পাশে নবীজি (সা.)—এর ঘর নির্মাণ করা হয়।

আরো পড়ুন:
প্রতিদিন কোন কোন আসনে দেহ ও মনের শুদ্ধি হবে?

মসজিদ-ই-নববীর পাশের ও সংলগ্ন ভূমির মালিক ছিলেন হারিস ইবনে নোমান (রা.)। সেখানে তাঁর বাড়ি ছিল। কিন্তু তিনি তা মহানবী (সা.)-এর প্রয়োজনে ছেড়ে দেন। তিনি উপহার হিসেবে ছেড়ে দিলেও রাসুল (সা.) তাঁকে উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করেন। তাঁর পুরো বাড়িই রাসুল (সা.) ও তাঁর পবিত্র স্ত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হতো। স্ত্রীদের জন্য তৈরি ঘরগুলো ছিল অপ্রশস্ত। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতের বেলা নামাজ আদায়ের সময় আয়েশা (রা.)-এর হাতের তালু তাঁর পায়ের নিচে পড়েছিল, এ থেকেই ঘরের উচ্চতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। হাসান বসরি (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি উসমান (রা.)-এর শাসনামলে রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীদের ঘরে প্রবেশ করেন। তিনি তাঁর হাত দিয়ে ছাদ স্পর্শ করেন। বাড়িগুলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে আল্লাহর রাসুল (সা.) আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)-এর ঘর ছেড়ে সপরিবারে এখানে চলে আসেন। তিনি সেখানে সাত মাস ছিলেন।

উল্লেখ্য, তাঁদের মৃত্যুর পর ওই গৃহগুলো ভেঙে মসজিদের মধ্যে শামিল করে নেওয়া হয়। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিছানা ছিল চামড়ার তৈরি এবং তার ভেতরে ছিল খেজুরের ছাল। যে বালিশের ওপর রাসুলুল্লাহ (সা.) হেলান দিতেন সেটি ছিল চামড়ার। এর অভ্যন্তরে খেজুরগাছের ছাল ছিল। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমাদের ঘরের দরজায় একটি পাতলা রঙিন পর্দা ঝোলানো ছিল, এতে কিছু ছবি ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তা দেখে বলেন, এটা খুলে নামিয়ে ফেলো। যেহেতু এটা আমাকে দুনিয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি [আয়েশা (রা.)] আরো বলেন, আমাদের কাছে একটি রেশমি বুটিদার চাদর ছিল, আমরা তা পরিধান করতাম।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ঘরের আসবাবের বিবরণ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) একটি চাটাইয়ের ওপর শুয়ে ছিলেন। চাটাইয়ের ওপর কিছুই ছিল না। তাঁর মাথার নিচে ছিল খেজুরের ছালভর্তি চামড়ার বালিশ। আমি তাঁর শরীরে চাটাইয়ের দাগ দেখে কেঁদে ফেললাম। তিনি বলেন, কাঁদছ কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কায়সার ও কিসরা (পারস্য ও রোম সম্রাট) ভোগবিলাসে মত্ত অথচ আপনি আল্লাহর রাসুল! তিনি বলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে তাদের জন্য পার্থিব জীবন আর আমাদের জন্য পরকাল।

নভেম্বর ০৬,২০২২ at ১০:১২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/সর