শিক্ষার্থীদের চড় মেরে দাঁত ফেলে দেয়ার হুমকি জাবি কর্মকর্তার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃবিভাগ ফুটবল টূর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে খেলোয়াড় ও শিক্ষার্থীদের উপর মারমুখী আচরণ এবং চড় মেরে দাঁত ফেলে দেয়ার হুমকীর অভিযোগ উঠেছে জাবি শারীরিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক সাবিহা কবিরের বিরুদ্ধে।গত মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) বিকেল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত লোক প্রশাসন বিভাগ বনাম ফার্মেসী বিভাগের মধ্যকার খেলা চলাকালীন সময়ে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় শারীরিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক সাবিহা কবিরের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহনের দাবি জানিয়ে আন্তঃবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবর অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে লোকপ্রশাসন বিভাগের খেলোয়াড়রা।অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত লোকপ্রশাসন বনাম ফার্মেসী বিভাগের খেলার শেষের দিকে একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তে লোকপ্রশাসন বিভাগের দলের বিরুদ্ধে রেফারী পেনাল্টি ঘোষণা করেন এবং নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই খেলা সমাপ্ত করেন। বিষয়টি নিয়ে মাঠে রেফারীর নিকট লোকপ্রশাসন বিভাগের খেলোয়াড়রা প্রতিবাদ জানান।

এসময় হঠাৎ করে জাবি শারীরিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক ও ম্যাচ কর্মকর্তা সাবিহা কবির খেলোয়াড় এবং উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীদের গালমন্দ এবং মারমুখী আচরণ শুরু করেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থী ও খেলোয়াড়দের বেয়াদবের বাচ্চা আখ্যা দিয়ে চড় মেরে দাঁত ফেলে দেয়ার হুমকী দেন। তাদেরকে পরবর্তীতে দেখে নেওয়ারও হুমকী দেন। খেলার মাঠে একজন কর্মকর্তার প্রকাশ্য এমন আচরণে সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। সর্বশেষ সেখানে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষক, সহকারী প্রক্টর ও সিনিয়র ব্যক্তিরা এসে উনাকে নিবৃত করেন।এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাবিহা কবিরের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহন এবং পক্ষপাতিত্ব মূলক খেলাটি পুনরায় অনুষ্ঠিত করার দাবি জানান টিম ম্যানেজমেন্ট।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লোকপ্রশাসন বিভাগ বনাম ফার্মেসী বিভাগের ম্যাচটি শূন্য শূন্য সমতায় ছিল। দ্বিতীয়ার্ধের শেষের দিকে একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তে পেনাল্টি দেয়া হয়। পরক্ষণেই অতিরিক্ত সময় যুক্ত না করে এবং নির্ধারিত ৪০ মিনিট সময় শেষ হওয়ার ৪/৫ মিনিট আগেই রেফারী খেলা সমাপ্ত করেন। এ নিয়ে খেলার মাঠেই রেফারীর নিকট অভিযোগ জানান লোকপ্রশাসন বিভাগের খেলোয়াড়রা যেটা স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন :
সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ছবি বাতিল করে সামালোচনার মুখে এমপি রতন

তবে হঠাৎ করে ম্যাচ কর্মকর্তা সাবিহা কবির মাঠে প্রবেশ করে খেলোয়াড়দের গালমন্দ শুরু করেন। এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদেরও মারমুখী আচরণ করেন। তার এমন আচরণের প্রতিবাদ জানালে তিনি সবাইকে বেয়াদবের বাচ্চা সহ নানা গালিগালাজ শুরু করেন। তাদেরকে চড় মেরে দাঁত ফেলা দেয়া ও দেখে নেয়ার হুমকী দেন। সেখানে অনেক শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি একজন কর্মকর্তার এমন আচরণ কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগ বা আন্তঃহল টূর্ণামেন্ট গুলোতে স্বাভাবিক ভাবেই খেলার মাঠে ছোট খাট কিছু সমস্যা হয়। কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তুষ্টি হয়। বলতে গেলে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই কিছু সমস্যা হয় যা পরক্ষণেই ঠিকঠাক হয়ে যায়। এটা স্বাভাবিক একটা বিষয় খেলার মাঠে। কিন্তু হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তার এতগুলো খেলোয়াড় ও শিক্ষার্থীদের প্রতি এমন আচরণ একেবারেই গ্রহনযোগ্য নয়।

সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, শারীরিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা সাবিহা কবির প্রায় সময় এমন ক্ষ্যাপাটে আচরণ করেন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী, খেলোয়াড় ও অন্যদের সাথে দূর্ব্যবহার করেন। তিনি নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ক্ষমতাবান হিসেবে উপস্থাপন করে দাম্ভিকতা প্রদর্শন করেন।উক্ত ঘটনায় সাবিহা কবিরের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যতায় দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত কর্মকর্তা সাবিহা কবিরকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।জাবি শারীরিক শিক্ষা অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বেগম নাছরীন বলেন, গতকালকের ঘটনাটি নিয়ে আমরা একটি অভিযোগ পত্র পেয়েছি। আমাদের একটি টেকনিক্যাল কমিটি আছে। কমিটির সবাই মিলে আমরা বসবো। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আমরা সমস্যাটি সুরাহা করবো। আশা করি সুন্দর একটি সমাধান আসবে।আন্তঃবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতা পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. বশির আহমেদ বলেন, আমরা ছাত্রদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। আজ বিকেল ৩ টায় ফুটবল সংক্রান্ত টেকনিকাল কমিটির মিটিং আছে। মিটিং এর পর আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো

নভেম্বর ০২,২০২২ at ১৪:২৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দপজব/এমএইচ