বারোবাজার হাইওয়ে ওসি মঞ্জুরুল আলমের বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ

রোড ডাকাতি ও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে হাইওয়ে পুলিশ প্রতিষ্ঠা করা হলেও বাস্তবে এর কোন সুফল পাচ্ছে না জনগণ। বরং হাইওয়ে থানা পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বাস-ট্রাক মালিক ও চালকরা। প্রতিমাসে বারবাজার হাইওয়ে থানা পুলিশকে দিতে হচ্ছে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা। বাস, ট্রাক, মাইক্রো, মিনি ট্রাক, সিএনজির ফিটনেস ফেল, ট্রাক টোকন ফেল, রুট পারমিট ফেল, ইন্সুরেন্স ও ড্রাইভারদের লাইসেন্স না থাকায় তাদের কাছ থেকে মাসিক হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে বিকাশে ও খামের করে পাঠিয়ে দেয়া হয় বারবাজার হাইওয়ে পুলিশের ওসি মঞ্জুরুল আলমের কাছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি মঞ্জুরুল আলম।

আরো পড়ুন:
পাইকগাছায় বিষপানে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, যেসব বাস, ট্রাক-মাইক্রোবাসের কাগজপত্র নেই সেসব গাড়ি থেকে মাসিক চুক্তি করে নেয়া হয়। এসব গাড়ীর গাঁয়ে রিভার ভিউ ফিলিং স্টেশন, ব্রাদার্স এন্টার প্রাইজ, আল আলিফ মটরস্ সাতক্ষীরা, মাসুদ মটরস্ কানাইপুর ফরিদপুর, মুক্তার মটরস্ ঝিনাইদহ, বাদশা মটরস্ ঝিনাইদহ, আরাফাত মটরস কুষ্টিয়া, এপ্রিল সাতক্ষীরা, সুজন মটর কুষ্টিয়া, আলিফ মটরস্ সাতক্ষীরা, কে এম মটরস্, মাহিম এন্টার প্রাইজ এর স্টিকার ও মোবাইল নাম্বার লেখা আছে।

হাইওয়ে পুলিশ যেসব বাস-ট্রাকে এসব স্টিকার দেখে সে গাড়ি গুলো চেক না করে ছেড়ে দেয়। সূত্র আরও জানায়, বারবাজার হাইওয়ে থানার আওতাধীনে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও যশোর জেলা রয়েছে। এরমধ্যে যশোরের নাভারনে ১ টি, মাগুরার রামনগরে ১ টি, কুষ্টিয়ার চৌড়হাসে ১ টিসহ মোট তিনটি হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি আছে।

এর মধ্যে কালীগঞ্জের মাইক্রো থেকে ৬ হাজার, ঝিনাইদহ মাইক্রো থেকে ৫ হাজার, চুয়াডাঙ্গা জেলার মাইক্রো থেকে ৫ হাজার, কোটচাঁদপুরের মাইক্রো থেকে ৫ হাজার, চৌগাছার ইজিবাইক সিএনজি চালকদের পক্ষে ইন্নাত হোসেনের নিকট থেকে ৩ হাজার টাকা, বারীনগর বাজারে ইজিবাইক ও আলমসাধুর (গরুটানা গাড়ি) পক্ষে হাবিলের নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা, বারোবাজার সিএনজি – লেগুনা স্ট্যান্ডের পক্ষে বাবলু নিকট থেকে ৫ হাজার, রঘুনাথপুর লাটা গাড়ির পক্ষে মন্নুর নিকট থেকে ৩ হজার টাকা, কালীগঞ্জ সিএনজির পক্ষে

আরশেদের নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা, কালীগঞ্জ মাইক্রোচালক সমিতির সভাপতি মিন্টুর নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা, কোটচাঁদপুর সিএনজির পক্ষে বাবলু ৩ হাজার ৫ শত টাকা, জীবননগর মাইক্রোচালকদের পক্ষে প্রদীপের নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা, বিষয়খালী বাজার সিএনজির পক্ষে মুজিদের নিকট থেকে ৬ হাজার টাকা, রাস্তার পাশের ১৯ টি তেলের দোকানীদের কাছ থেকে তিন হাজার করে ৫৭ হাজারসহ অনেকের নিকট থেকে মাসিক চুক্তি অনুযায়ী টাকা আদায় করেন।

২৭টি বিভিন্ন খাত থেকে প্রতি মাসে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা মাসিক চুক্তি আদায় করা হয়। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক যশোর-থেকে কালীগঞ্জগামী একাধিক সিএনজি ড্রাইভার বলেন, সিএনজি থেকে প্রতিমাসে বারবাজার হাইওয়ে থানাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে চলাচল করতে হয়। মাসিক টাকা না দিলে আমাদের বিভিন্ন কারন দেখিয়ে মামলা দেয়া হয়। চৌগাছা এলাকার এক লেগুনাচালক আব্দুর রহিম জানান, আমি বারোবাজার হাইওয়ে থানার সামনে দিয়ে ঝিনাইদহে যাচ্ছিলাম।

হাইওয়ে পুলিশ এসময় আমার গাড়ি ধরে মামলা দেই এবং গাড়ি থানার মধ্যে আটকে রাখে। মামলা ভাঙিয়ে গাড়ি থানায় আনতে গেলে থানার এক স্যার এসে বলেন, তোমার এলাকার যত ইজিবাইক আছে সবাই যদি থানায় প্রতিমাসে অল্প কিছু করে টাকা দেই তাহলে রোডের চললে তাদের গাড়ি আর আমরা ধরব না। আর ওই টাকা তুমি তুলে থানায় এসে আমার কাছে দিয়ে যাবা।

পরে জানতে পারলাম উনিই থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম। পরে অবশ্য আমি স্যারকে জানিয়ে দিয়েছি আমি এসব ঝামেলার কাজ করতে পারব না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, ওসি নিজেই বিভিন্ন জনের সাথে মাসিক চুক্তি করেন এবং টাকা আদায় করেন। এদের অনেকে থানায় এসে চুক্তির টাকা দিয়ে যায়,আবার অনেকে ওসির ব্যবহৃত ০১৭১৭০১৯৩৭ এবং ০১৮১৯ ৯৬৬ ৭৭৯ বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে দিয়ে থাকেন।

তিনি আরও জানান,যোগদানের পর থেকে ড্রেস পরিহিত অবস্থায় ওসিকে মহাসড়কে ডিউটি করতে খুব কম দেখা যায়। সহকারী পুলিশ সুপার (হাইওয়ে সার্কেল, যশোর) আলী আহমেদ হাশমী জানান, আমি এই ব্যাপারে কিছু জানিনা। তবে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।

অক্টোবর ৩০,২০২২ at ১৮:৪৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস