হারানো সৌন্দর্য ফিরে পাচ্ছে চৌগাছার দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ তুলার খামারটি

যশোরের চৌগাছায় অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজবর্ধন খামারটি দীর্ঘ দিন পর তার হারানো সৌন্দর্য আস্তে আস্তে ফিরে পেতে বসেছে। বালিময় জমি এখন অনেকটাই উর্বর, খামারের চারিপাশে নির্মিত হয়েছে প্রাচীর, প্রতিষ্ঠালগ্নের রোপনকৃত গাছ গাছালিও হয়েছে দৃষ্টি নন্দন। বিশেষ করে অতি সম্প্রতি খামারের অভ্যান্তরের সড়কের পাশে রোপকৃত তালগাছের সারি অন্য রকম এক পরিবেশ তৈরী করেছে। স্থানীয়রা মনে করছেন তুলা খামারটি আবারও হতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র।

স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলা ১৩৮৭ সালের ৪ অগ্রায়ন, সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছুটে আসেন যশোরের অজপাড়াগায়ের চৌগাছার জগদীশপুর গ্রামের বালুময় মাঠে। ধুধু বালি আর চারিপাশে কাশফুল বেষ্টিত মাঠে যখন রাষ্ট্রপ্রতির বহনকারী হেলিকপ্টর অবতরণ করে তখন গোটা এলাকা ধুলাবালিতে একাকার। তিনি নেমেই বালিময় ওই মাট পায়ে হেটে পরিদর্শন শেষে যোগদেন সুধী সমাবেশে। ঘোষনা দেন এই বালি মাটিতেই হবে তুলা গবেষনা খামার। যে কথা সেই কাজ, প্রতিষ্ঠিত হয় তুলা গবেষনা খামার যা আজ দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ খামারের মুকুট পরে আছে।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ৬৩ দশমিক ৭ হেক্টর (১৫৭ একর) জমির উপর প্রতিষ্ঠা করা হয় জগদীশপুর তুলা গবেষনা, প্রশিক্ষন ও বীজবর্ধন খামার। প্রতিষ্ঠালগ্নে খামারের চারিপাশে কাটা তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। তেরী করা হয় গবেষনার ভবন, কৃষক প্রশিক্ষন ভবন, প্রশাসনিক ভবন, কর্মকর্তা চারিদের আবাসিক ভবন, গেষ্ট হাউজসহ অসংখ্য স্থাপনা। খামারটি প্রতিষ্ঠার সময় এর অভ্যন্তরের সড়কের পাশে ও খালি জমিতে লাগানো হয় হরেক রকমের গাছ গাছালি। দিন মাস বছর পেরিয়ে আজ প্রায় ৪০ বছর হতে যাচ্ছে। খামারের সকল গাছ গাছালি এখন বিশাল আকৃতির হয়েছে, বহু গাছ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগে ভেঙ্গে পড়ে নষ্টও হয়েছে। তারপরও যে সকল গাছ আছে তাতে গোটা খামার এলাকাকে ছাঁয়া শীতল করে রেখেছে।

গত ৫/৭ বছর আগে খামারর অভ্যান্তরের সড়ক গুলোর পাশে রোপন করা হয় তালগাছ। সেই গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে। সড়কের পাশের সারিবদ্ধ তালগাছ যেন সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করেছে।

এক সময়ের সেই ধুধু বালিময় মাঠ এখন সবুজে সমারোহ। চারিদিকে হরেক রকমের গাছ গাছালি। জমিতে চাষ চলছে, রোপন করা হবে তুলা বীজ। সড়কের পাশে বড় বড় গাছে নানা ধরনের পখপাখালির মেলা বসেছে। সারাক্ষনই তাদের কিচিমির শব্দে মনোমুদ্ধকর এক পরিবেশ সেখানে বিরাজ করছে।

এসময় কথা হয় খামারের কর্মচারী আব্দুর রাজ্জাকের সাথে। তিনি বলেন, দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই খামারটি আমাদের তথা চৌগাছাবাসির জন্য গৌরবের একটি প্রতিষ্ঠান। এক সময় এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে ভ্রমন পিপাশু মানুষ আসতেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও বাৎসরিক বনভোজনে আসতেন। কিন্তু বছরের পর বছর সেগুলো বলাচলে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে খামার যেন তার সাবেক দিন ফিরে পেতে বসেছে, সড়কের পাশের সারিবদ্ধ তালগাছ সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তুলতে শুরু করেছে। আবারও এখানে দর্শনার্থীর ভিড় বাড়বে বলে মনে হয়।

খামারের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এম আবেদ আলী বলেন, গত ৬/৭ বছর আগে স্থানীয় কর্মচারী ও জৈনক এক ব্যক্তি সড়কের পাশে তালের বীজ বপন করেন। এখন সেই গাছ অনেক বড় হয়েছে এমনকি ফল দেওয়া শুরু করেছে। বাকি সড়ক গুলোর পাশে এবছর আরও তালবীজ বপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

খামার ব্যবস্থাপক মো. জোবায়ের ইসলাম তালুকদার বলেন, অল্প কিছুদিন হলো এখানে আমি এসেছি। নানা সমস্যা থাকলেও অত্যান্ত মনোরম পরিবেশ এখানে। যে উদ্যেশে খামারটি প্রতিষ্ঠিত হয় সেই লক্ষে পৌছাতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

অক্টোবর০৮,২০২২ at ১৯:২৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক /মদই/শই